টানা প্রায় ৬০ দিনের বেকার এবং অবরুদ্ধ জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠার পাশাপাশি অনেক পরিবারেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী আছে। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ক্রয়ের জন্য বাসার বাইরে যেতে পারেন না তারা। নিউইয়র্কে এমন অসহায় প্রবাসীদের মধ্যে খাদ্য-সামগ্রী বিতরণ করছে বেশ কয়েকটি সংগঠন।
করোনা তাণ্ডবে বিধ্বস্ত কমিউনিটির কিছু লোকের এমন তৎপরতায় অভিভূত সবাই।
উল্লেখ্য, ২০ মার্চ থেকে লকডাউনে সারা আমেরিকার মত নিউইয়র্ক সিটিও। এই সিটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দীর্ঘ মিছিলে কমপক্ষে ১৯৮ বাংলাদেশিও রয়েছেন। এখনও শতশত প্রবাসী বিভিন্ন হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছেন। আবার অনেকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত সপ্তাহ থেকে করোনায় মৃত্যুর হার এবং হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তির সংখ্যা কমতে থাকায় অন্য কমিউনিটির মত বাংলাদেশিদের মধ্যেও স্বস্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে কেউই স্বাভাবিক হতে পাচ্ছেন না। কারণ, পরিচিত অনেকেই চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন, যাদের জানাযা অথবা শেষ কৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সুযোগও ছিল না।
এমন কঠিন এক দুঃসময়েই রোজা শুরু হয়। এতেও আনুষ্ঠানিক ইফতার পার্টি দূরের কথা তারাবি নামাজও হচ্ছে না মসজিদে। তার ওপর রয়েছে প্রায় প্রতিটি প্রবাসীর অর্থ সংকট। কারণ, সপ্তাহে কমপক্ষে ৬০০ ডলার করে বেকার ভাতার আবেদন করেও নিয়মিতভাবে তা পাচ্ছেন না ৮০ শতাংশ আবেদনকারীই। বাসা ভাড়া ২০ আগস্টের মধ্যে না দিলেও মালিক তাগাদা দিতে পারবেন না বলে স্টেট গভর্ণর নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। তবে পেটের ক্ষুধাতো মিটছে না। আর এমন ক্ষুধার কথা কেউ কাউকে বলতেও দ্বিধা করছেন।
এমন কয়েকশত প্রবাসীর (যাদের অধিকাংশই অবৈধ অভিবাসী) তালিকা করে রোজার আগে থেকেই বেশ কটি সংগঠন মাঠে নেমেছে। এর অন্যতম হচ্ছে ফোবানা, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার, জেবিবিএ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, কভিড-১৯ কমিউনিটি ফুড ড্রাইভ, জ্যামাইকা ফ্রেন্ডস সোসাইটি, পিপলএনটেক, মজুমদার ফাউন্ডেশন, নাভা প্রভৃতি।
ফোবানার পক্ষ থেকে নিউজার্সি স্টেটেও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। সর্বশেষ রবিবার (১৭ মে) ফোবানার নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী এবং নির্বাহী সদস্য আবির আলমগীরের নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক দুস্থ পরিবারের বাসায় চাল-ডাল-তেল-আলু-লবন-মসল্লা-সেমাই-চিনিসহ খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট পৌঁছে দেয়া হয়। একইদিন জ্যাকসন হাইটসে খাবার বাড়ি-আঙ্গিনা থেকে জেবিবিএ এবং নাভাসহ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট বিতরণ করা হয়।
জেবিবিএর নেতা ফাহাদ সোলায়মান, নাভার নেত্রী রোকেয়া আকতারসহ নেতৃবৃন্দের সাথে এ সময় ছিলেন স্থানীয় স্টেট এ্যাসেম্বলীওম্যান ক্যাটালিনা ক্রুজ।
উল্লেখ্য, এই কর্মসূচিতে স্টেট এ্যাসেম্বলীওম্যানের অফিসও খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। আড়াই শতাধিক প্রবাসীকে এসব প্যাকেট প্রদানের পাশাপাশি বেশ ক’জন মুক্তিযোদ্ধার বাসায়ও প্যাকেট পৌঁছে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সদস্য শুভ রায়। এর আগে লাগাতার কয়েকদিন ব্যাপী খাদ্য-সামগ্রীর শতশত প্যাকেট অসহায় প্রবাসীদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে সুধীজনের দৃষ্টি কেড়েছে ‘কভিড-১৯ কমিউনিটি ফুড ড্রাইভ’ নামক সংগঠনটি।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম