শিরোনাম
১৩ আগস্ট, ২০২০ ১৮:১৮

সরকারের এত সহায়তার পরও সংকটে ব্রিটিশ কারি ইন্ডাস্ট্রি

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য

সরকারের এত সহায়তার পরও সংকটে ব্রিটিশ কারি ইন্ডাস্ট্রি

ব্রিটেনে অফিসিয়াল অর্থনৈতিক মন্দার ঘোষণা এসেছে ১১ আগস্ট! অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস (ওএনএস) তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, করোনা শুরুর পর এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে হসপিটালিটি সেক্টরে ব্রিটিশ অর্থনীতির জিডিপি সংকুচিত হয়েছে প্রায় ২০ দশমিক ৪ শতাংশ।  

হসপিটালিটি সেক্টরকে উজ্জীবিত করতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। দিয়েছে বিজনেস গ্রান্ট, ফারলো স্কিম, বাউন্স ব্যাক লোন, ৬ মাসের জন্য ভ্যাট ১৫ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশে আনা, সর্বশেষ ইট আউট হেল্প আউট স্কিমে সপ্তাহে ৩ দিন কাস্টোমার প্রতি ১০ পাউন্ড ছাড় উল্লেখযোগ্য। 

এত কিছুর পরও রেস্টুরেন্টের মালিকদের সাথে কথা বললে সেই একই দীর্ঘশ্বাস! এর আগের সংকট ছিল স্টাফ সংকটসহ নানামুখী। আর এখন সকল সংকট ছাপিয়ে মরণব্যাধী করোনার কারণে কাস্টোমার সংকট।

ব্রিটেনের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি, ইন্ডিয়ান টেইকওয়ে ও রেস্টুরেন্টের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুনিম বলেন, সরকার যে চেষ্টা করছে, সেটা অতুলনীয়। কিন্তু মানুষের মধ্যে এখনো যে ভয় কাজ করছে, সেটা দূর না হলে রেস্টুরেন্ট সেক্টরে ভয়ংকর ধস নামবে। 

কথা হয় গ্যাটউইক এয়ারপোর্টের পাশের ছোট শহর বাজেস হিল-এর মাসাল হাট রেস্টুরেন্টের মালিক আরাফাত জামানের সাথে। তিনি বলেন, প্রথম যখন লকডাউন হয়, তখন আমরা প্রায় দিশেহারা অবস্থায় পড়ে যাই। তখন স্টাফ কমানো ছাড়া উপায় ছিল না। তারপর গ্রান্ট আর বাউন্স ব্যাক লোন নিয়ে কিছুটা সামাল দিয়েছি। টেকওয়ে খোলা রেখে কোনোভাবে টিকে থেকেছি। লক ডাউন খোলার পর এখন অবস্থা আরও খারাপ। সরকারের ইট আউট স্কিমের কারণে সোম, মঙ্গল আর বুধবারে শুধু কিছুটা ব্যবসা হচ্ছে। আমাদের মূল যে ব্যবসা শুক্র ও শনিবারে, সেটা একেবারেই নেই! এভাবে কতদিন টিকে থাকতে পারবো, কে জানে!

একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা বললেন লন্ডনের বাটারসি পার্কের ভারানাসি শেফ রেস্টুরেন্টের মালিক জুয়েল রাজ। তিনি বলেন, সাপ্লায়াররা সবকিছুর দাম বাড়িয়েছেন। রেস্টুরেন্টের কাঁচামালে দাম বেড়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। সেই সাথে টেইকওয়েতে অ্যাপসগুলোর চার্জ মিলিয়ে দিন শেষে আমাদের হাতে কিছুই নেই! আমরা তো ম্যানুতে দাম বাড়াতে পারি না!

কথা হয় বাংলাদেশি কারি রেস্টুরেন্টের একজন নিয়মিত কাস্টোমার মি. রোলান্ড হকিন্স-এর সাথে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বের হওয়াই কঠিন। এসময় ইট আউট স্কিমের জন্য অন্তত সপ্তাহে একদিন বের হচ্ছি। এটি আমাদের অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করছে।

বিসিএ'র সভাপতি এমএ মুনিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিসিএ সাংগঠনিকভাবে হসপিটালিটি সেক্টরের ভ্যাট ৫ শতাংশে নিয়ে আসার জন্য নানা ধরনের কার্যক্রম করেছে। বাংলাদেশি আরও অনেক সংগঠন এবং ব্যক্তি পর্যায়ে হয়তো এটি নিয়ে লবিং করেছেন। আমাদের সাথে টার্কিশ অ্যাসোসিয়েশনও যৌথভাবে এটি নিয়ে সরকারের সাথে লবিং করেছে। এটি যাতে ৬ মাস নয়, সারা বছরই বরাদ্দ থাকে, সেটি নিয়েও সরকারের সাথে লবিং করে যাচ্ছি।

ব্রিটেনের কারি ইন্ডাস্ট্রির মূলধারার ত্রৈমাসিক কারি লাইফ ও কারি শেফ ম্যাগাজিনের চিফ এডিটর সাংবাদিক সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, সরকার হসপিটালিটি সেক্টরকে বাঁচানোর জন্য যেসব স্কিম করেছে, সেগুলো যদি আমাদের রেস্টুরেন্ট মালিকরা ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে, তাহলে যে সংকটের ভেতর দিয়ে আমরা চলছি, সেটা অতিক্রম করতে পারবো।

সৈয়দ নাহাস পাশাও এম এ মুনিমের মতো আশা প্রকাশ করেন ভ্যাট ৫ শতাংশের বিষয়টি যেনো হসপিটালিটি সেক্টরের জন্য সব সময়ই বহাল থাকে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর