৮ মে, ২০২১ ২০:৫৬

ওমানে পাসপোর্ট বিড়ম্বনায় ভোগান্তিতে বাংলাদেশিরা

এইচ এম হুমায়ুন কবির, ওমান:

ওমানে পাসপোর্ট বিড়ম্বনায় ভোগান্তিতে বাংলাদেশিরা

নবায়নের জন্য দেয়া পাসপোর্ট সময় মতো না পেয়ে দিশেহারা ওমান প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দিনদিন পাসপোর্ট ভোগান্তির সময়কাল হচ্ছে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। সাধারণ প্রবাসী কর্মীরা যথাসময়ে পাসপোর্ট ডেলিভারি না পেলে বৈধভাবে ওমানে থাকার রেসিডেন্ট কার্ড নবায়ন সম্ভব হয় না মাসের পর মাস, ফলে প্রতি মাসের লেট ফি বাবত গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় নয় হাজার টাকা।

নিজের কাজকর্ম ফেলে কয়েকশো মাইল দূর থেকে দূতাবাসে এসে পাসপোর্ট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ পাঁচ ছয়বার এসেও পাচ্ছেন না তার কাঙ্ক্ষিত পাসপোর্টটি। ফলে অনেককে হারাতে হচ্ছে বেঁচে থাকার অবলম্বন নিজের চাকুরিটাও। কেউ কেউ জরুরি প্রয়োজনেও করতে পারছেন না ট্রাভেলিং । এমনকি নিজের পরিবারের কারো মৃত্যু হলেও পাসপোর্ট বিড়ম্বনায় থাকা প্রবাসীরা শেষ বারের মতো দেখতে পারছেনা নিজের আপনজনের প্রিয় মুখটি। প্রবাসীদের অভিযোগ কর্তাবাবুদের চরম সেচ্ছাচারিতার শিকার তারা।

এ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় থাকা প্রবাসীদের সিমাহীন কষ্টের সঙ্গে একদিকে ক্ষোভ যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে ব্যাপক চাপে রয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস ও সার্ভিস কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মানি এক্সচেঞ্জগুলো। তাছাড়া  দূতাবাস ও সরকার সম্পর্কেও তৈরি হচ্ছে নেতিবাচক ধারণা। বিদেশে এমন অপেশাদার দায়িত্বহীন আচরণে ফুঁসে উঠেছেন প্রবাসী কর্মীরা। তারা বলছেন, সময় মতো পাসপোর্ট পাওয়া তাদের নাগরিক অধিকার সুতরাং সমস্যার সমাধানকল্পে  কোন রকম কালক্ষেপণ ছাড়া'ই সরকার সহ সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ভুক্তভোগী প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের।
এমন পরিস্থিতির পেছনে ঢাকা থেকে পাসপোর্ট সরবরাহের ধীর গতিকে দায়ী করছেন দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

পাসপোর্ট বিতরণের এমন বেহাল দশায় ক্ষোভ ঝাড়েন সয়ং ওমান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল পাশা।  তিনি বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস মাস্কাটে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য দেয়ার ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়ার কথা থাকলেও তা মিলছেনা ৫-৬ মাসেও। তিনি আরো জানান, ওমানে রেসিডেন্স কার্ড রিনিউ করতে হলে মিনিমাম ছয় মাস মেয়াদ থাকতে হয় পাসপোর্টে। সুতরাং পাসপোর্ট দ্রুত ডেলিভারি পেতে দূতাবাস ও সংশ্লিষ্টদেরকে আরো দায়িত্বশীল হয়ে সেবা প্রত্যাশীদের  সহযোগিতা করার কোনো বিকল্প নেই।

অন্যদিকে ওমান আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নোমান পাসপোর্ট বিতরণের এ ধীরগতির মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোগান্তিতে ফেলার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত উল্লেখ করে দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান ।  পাসপোর্ট নিয়ে চলমান সমস্যাটিকে খুবই জটিল উল্লেখ করে ওমান আওয়ামী লীগের আরেক সাবেক সভাপতি মোঃ জহিরুল ইসলাম ওমানে বসবাসরত  ভারতীয় ও পাকিস্তানি নাগরিকদের পাসপোর্ট নবায়নে এক থেকে দুই সপ্তাহ কিংবা কিছু ক্ষেত্রে আরো কম সময়ে সম্পন্ন হয় সেখানে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনায় দেশকে প্রায় শতভাগ সেক্টরে ডিজিটালাইজড করার পরও পাসপোর্ট নবায়নে ধীর গতি দুঃখজনক। 

অন্যদিকে ওমান আওয়ামী লীগের আরো এক সাবেক  সভাপতি মোঃ শাহাজান মিয়া বলেন, আমার ১৪ জনের মতো ষ্টাফ রয়েছে তাদের পাসপোর্ট নাবায়ন করতে ও বিতরণের দীর্ঘসূত্রিতা লক্ষ্য করা গেছে। আমি নিজেও এই পাসপোর্ট বিড়ম্বনার শিকার। 

সালালার এক বাংলাদেশি বিপণন কর্মী বলেন, ‘তিন মাস ধরে নিয়মিত দূতাবাস ও এক্সচেঞ্জে ধর্না দিয়ে একটাই বার্তা পাচ্ছি, “আপনার পাসপোর্ট প্রিন্টিং প্রসেসিংয়ে আছে।” কিন্তু প্রিন্ট হয়ে কবে হাতে আসবে সেই উত্তর দিতে পারছে না এক্সচেঞ্জ বা দূতাবাস।’

এসব তথ্য জানিয়ে চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী বলেন, ‘করোনাকালে রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীরা যখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হতাশায় আছেন, সেখানে পাসপোর্ট নিয়ে এমন ভোগান্তি প্রবাসীদের জনজীবন বিষিয়ে তুলেছে।

তাছাড়া প্রবাসীদের অধিকার ভিত্তিক সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন  বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ ওমানের সভাপতি প্রকৌশলী আলী আশরাফ পাসপোর্ট ডেলিভারিতে বিলম্বে হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং সরকার সহ সংশ্লিষ্টদের এ সমস্যা সমাধানে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর