সকলের জন্যে করোনার টিকা সহজলভ্য করতে জাতিসংঘকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানালেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন। একইসময়ে মিয়ানমারের মানবাধিকার লংঘনের সমালোচনায় মুখর অনেক দেশই সামরিক জান্তার সাথে ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক অটুট রাখার সমালোচনা করলেন ড. মোমেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে মহাসচিব এ্যান্তনিয়ো গুতেরেজের সাথে দ্বি-পক্ষিয় বৈঠকে ড. মোমেন মহাসচিবকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন করোনা ভ্যাকসিনকে সকলের পণ্য হিসেবে ঘোষণার জন্যে।
উল্লেখ্য, সদ্য সমাপ্ত জি-সেভেন সম্মেলনে করোনা ভ্যাকসিনকে সকলের জন্যে অপরিহার্য করার আহ্বান এবং টিকা তৈরীতে বাংলাদেশেরও সক্ষমতার তথ্য উপস্থাপন করায় মহাসচিবের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ড. মোমেন। বৈঠকে মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের সাথে জাতিসংঘের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।’ শান্তিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নারী ক্ষমতায়ন-সহ জাতিসংঘের সকল কাজে বাংলাদেশের অভ’তপূর্ব সহযোগিতার প্রশংসা করেন মহাসচিব।
এ সময় ড. মোমেন গুতেরেজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মহাসচিব হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্যে নিয়োগ পাওয়ায়। প্রথম মেয়াদ বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বের প্রশংসাও করেছেন ড. মোমেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সদা দৃষ্টি নিবন্ধিত রাখার জন্যেও জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. মোমেন তাকে বলেছেন, মায়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মহাসচিবের ব্যক্তিগত উদ্যোগের বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ড. মোমেন আবারো কোন কোন দেশের দ্বৈত-নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মহাসচিবকে বলেছেন, ‘মিয়ানমার জান্তার মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনায় মুখর অনেক দেশ এখনও মিয়ানমারের সাথে অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক অটুৃট রেখেছে।’
বৈঠকে মহাসচিব ১১ লক্ষাধিক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানের জন্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার প্রশংসা করে বলেন, বিশ্বে সবচেয়ে বড় রিফ্যুজি ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় যে উদারতা বাংলাদেশ দেখাচ্ছে তা কখনো বিশ্ব ভুলবে না। এ সময় ড. মোমেন ভাসানচরের রিফ্যুজি ক্যাম্পের নানা সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে মহাসচিবকে আহ্বান জানিয়েছেন সেটি পরিচালনায় জাতিসংঘেরও সহায়তা দরকার। করোনার কারণে ক্ষত-বিক্ষত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রের তালিকা থেকে গ্র্যাজুয়েশন হবার পরও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন ড. মোমেন।
জাতিসংঘের শীর্ষ-ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশী কর্মকর্তাগণকেও অন্তর্ভুক্তির অনুরোধ জানিয়েছেন ড. মোমেন।
এদিন অপরাহ্নে জাতিসংঘে শান্তি রক্ষা ও রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোজমেরি ডিকার্লোর সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিজ বতসভিটায় ফিরে যাবার উদ্যোগে অচলাবস্থা সৃষ্টির প্রসঙ্গ বিশেষ গুরুত্ব পায়। উভয় বৈঠকেই জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমাও ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন