২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৩:০১

শেখ হাসিনার দূরদর্শিতাপূর্ণ নেতৃত্ব গুণে ২৭ মিশনে নিজস্ব ভবন

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

শেখ হাসিনার দূরদর্শিতাপূর্ণ নেতৃত্ব গুণে ২৭ মিশনে নিজস্ব ভবন

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের দিনটি স্মরণে নিউইয়র্কে মুক্তধারার আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন

জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনসহ সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ৫৮টি মিশনেই বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বৈশাখ বরণ, ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ঘটা  করে উদযাপনে সরকারের অনুমোদনের নেপথ্য কাহিনি বিবৃতি করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন। 

সাড়ে দিন দশকের অধিক সময় প্রবাস জীবন ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে কূটনৈতিক পেশায় আত্মনিয়োগের ধারাবিবরণীও সবিস্তারে উপস্থাপন করলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক এই স্থায়ী প্রতিনিধি।

বস্টনের ফ্রেমিংহাম ইউনিভার্সিটি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে র্দীঘদিন চাকরির সময়েই ড. মোমেন ২০০৯ সালে জাতিসংঘে যোগদান করেন প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্বে থাকাবস্থায় জাতিসংঘে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় উন্নীত করার পাশাপাশি জাতিসংঘের নীতি-নির্ধারণীতেও বাংলাদেশের অবস্থানকে নিবিড় করতে সক্ষম হন ড. মোমেন।

সেই দায়িত্বে যোগদানের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন করতে গিয়ে হোঁচট খান। বিজয় দিবস উদযাপনের কোনো বাজেট নেই বলে জানান মিশনের কর্মকর্তারা। কেবল ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের বাজেট ধার্য রয়েছে এবং সে অনুষ্ঠানও শুধুমাত্র বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে খাবার-দাবারের মধ্যেই সীমিত। কিন্তু কমিউনিটির বিশিষ্টজন এবং প্রবাসের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে নিয়ে আড়ম্বরের সাথে বিজয় দিবস উদযাপনের প্রত্যাশাকে মিইয়ে যেতে দিতে চাননি ড. মোমেন।

এমনি অবস্থায় তার স্ত্রী সেলিনা মোমেন জানতে চান যে, কতজনকে নিয়ে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান করতে চান তিনি। জবাবে বলেছেন তিন শত জন। সেলিনা মোমেন তাকে জানান যে সকলের জন্যে খিচুড়ি, গোশতের তরকারি রান্না করে দেবেন তিনি। সে সময় মিশনের কালচারাল মিনিস্টার ছিলেন খ্যাতনামা অভিনেতা, নাট্যকার অধ্যাপক মমতাজউদ্দিন আহমেদ। তিনি সেলিনা মোমেনকে বলেছিলেন, সাথে একটি করে ডিমের ভোনা দেয়া সম্ভব হবে? লোফে নেন সেলিনা মোমেন। লাল-সবুজের পতাকার আমেজে বাংলাদেশ মিশনে বিজয় দিবস উদযাপনের মধ্যদিয়ে জাতিসংঘের এই মিশনের সাথে কমিউনিটির সম্পৃক্তার পথ সুগম করলেন ড. মোমেন।

এরপর তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে যোগাযোগ করেন। শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী তার বড়ভাই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মোহিতকে টেলিফোন করলে ঢাকা থেকে তিনি (অর্থমন্ত্রী) তাকে জানান যে, ‘তোমাকে টাকা দিতে পারবো না। টাকার জন্যে বাজেট দিতে হবে। তাহলে আমি সকল মিশনের জন্য অর্থ বরাদ্দের চেষ্টা করবো।’

সেই থেকে অর্থাৎ ২০১০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস থেকেই বিদেশের সকল মিশন, দূতাবাস, কন্স্যুলেটে  সরকারি অর্থে ঘটা করে জাতীয় সকল অনুষ্ঠানের প্রবর্তন ঘটেছে। এজন্য ড. মোমেন শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ উপস্থাপনের ৪৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়র্কে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর আমলে লন্ডনে একটি মিশনের উদ্বোধন করেন জাতির জনক। সেটি প্রদান করেছিলেন সেখানকার প্রবাসীরা। এছাড়া ওয়াশিংটন ডিসিতে দূতাবাস ভবন এবং রাষ্ট্রদূতের বাসভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার পর সবকিছু থেমে যায়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর ওয়াশিংটন ডিসিতে দূতাবাস ভবন এবং রাষ্ট্রদূতের নিজস্ব ভবনের উদ্বোধন করা হয়। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবার পর এ যাবত নিজস্ব ভবনে দূতাবাস, কন্স্যুলেট এবং রাষ্ট্রদূতের বাড়ি হয়েছে ২৭টি। সবটাই বঙ্গবন্ধু কন্যার উদারতার পরিপ্রেক্ষিতে এবং এর ফলে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। এভাবেই জাতীয় উন্নয়ন এবং কল্যাণের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ উজ্জ্বল করতে শেখ হাসিনা সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুচ্ছেন।

ড. মোমেন আরো বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সিটিজেন অকৃত্রিম সহায়তা দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নিক্সন এবং তার প্রশাসনের সকলেই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পাক হায়েনাদের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিলেও রাজনীতিক এবং অনেক আমেরিকানই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। মিশনের দায়িত্ব পালনকালে এমন অনেক আমেরিকানকে আমি সম্মান জানিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছর পর্যন্ত ৬৫০ জন বিদেশিকে ‘মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু’ হিসেবে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে।

ড. মোমেন উল্লেখ করেন, চুয়াত্তরের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের ভিডিও কপিও আমিই উদ্ধার করেছি ২০১০ সালে। এখন তা রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ইউটিউবে রয়েছে। অনেক মানুষ তার নিজস্ব সিস্টেমে সংরক্ষণ করেছেন। ৪৭ বছর আগে জাতিসংঘে ১৯ মিনিটের ভাষণে বঙ্গবন্ধু যেসব কথা বলেছেন, মানবতার কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপের আহবান জানিয়েছেন, এখন গোটাবিশ্ব তা অনুসরণ করছি। এমনি একজন রাজনীতিক ও বঞ্চিত-নীপিড়িত-অবহেলিত মানুষের একজন বিশ্বস্ত নেতা হয়ে উঠেছিলেন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। বলতে দ্বিধা নেই যে, ঠিক একই মানের নেতা হচ্ছেন শেখ হাসিনা। মানবতার জন্য তিনি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণের দিনকে নিউইয়র্ক স্টেট পার্লামেন্টে তিন বছর আগে ‘বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে’ ঘোষণা করে একটি রেজ্যুলেশন পাশ হয়। এবারও তা তৃতীয় বছরের মত পাশ হয়েছে। সে আনন্দে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কারণ মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সিইও বিশ্বজিৎ সাহার চেষ্টায় রেজ্যুলেশনটি পাশ হয়েছে।

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণটি প্রদর্শনের মাধ্যমে শুরু এ অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক ছিলেন জাতিসংঘের ‘উন্নয়ন গবেষণা প্রধান’ ড. নজরুল ইসলাম। আলোচনায় আরো অংশগ্রহণ করেন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট জসীমউদ্দিন, সাবেক প্রেসিডেন্ট শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি, বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ। এতে আরও উপস্থিত নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, কুইন্স কাউন্টি জজ হিসেবে ডেমক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়নপ্রাপ্ত এটর্নী সোমা সাঈদ, অধ্যাপক রানা ফেরদৌস চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হোসাইন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, শহীদ পরিবারের সন্তান মাসুদুল হাসান এবং ফাহিম রেজা নূর, লং আইল্যান্ডের একটি আসন থেকে কংগ্রেসপ্রার্থী ডা. মুজিবুল হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সউদ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. মোহাম্মদ আলী মানিক প্রমুখ।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর