জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে প্রকম্পিত হলো বিশ্বখ্যাত এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন। হাজার দশেক দর্শক-শ্রোতার সরব উপস্থিতিতে ৬ মে (শুক্রবার) সন্ধ্যায় ‘গোল্ডেন জুবিলি বাংলাদেশ কনসার্ট’ ঘিরে ঘিরে বহুজাতিক এক সমাবেশে ফুটিয়ে তোলা হয় অদম্য গতিতে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে।
উল্লেখ্য, একাত্তরের ১ আগস্ট এই মাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠিত হয় শরনার্থীগণের সাহাযার্থে এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে আন্তর্জাতিক জনমত সুসংহত করতে। প্রায় ৪০,০০০ দর্শকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ কনসার্টের আয়োজক ছিলেন সাবেক বিটল্স সঙ্গীতদলের লিড গিটারবাদক জর্জ হ্যারিসন এবং ভারতীয় সেতারবাদক রবিশঙ্কর। বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, জর্জ হ্যারিসন, বিলি প্রিস্টন, লিয়ন রাসেল, ব্যাড ফিঙ্গার এবং রিঙ্গো রকস্টারের মতো দুনিয়াবিখ্যাত তারকারা তাতে অংশ নেন। সেই ঐতিহাসিক কনসার্টের ৫০তম বার্ষিকীতে এ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চললেও নানাবিধ কারণে তা এক বছর বিলম্বে অনুষ্ঠিত হয়। এ উদ্যোক্তা হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশের চিরকুটের শারমিন সুলতানা সুমি তার ব্যান্ডের অসাধারণ জনপ্রিয় ৬টি গানে মাতোয়ারা করেন বিশাল এই সমাগমকে। গানের ফাঁকে বাংলাদেশকেও দৃশ্যমান করার চেষ্টা করেছেন সুমি। তার জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র ২০ মিনিট। এজন্যে তিনি কোনো গানই পুরোপুরি পরিবেশনে সক্ষম হননি। এক পর্যায়ে এতবড় আয়োজনে তৃপ্তির সাথে গান গাইতে না পারার জন্যে নিকট ভবিষ্যতে আবারও গাইবার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। সুমির সাথে যন্ত্র সঙ্গীতে ছিলেন ইমন চৌধুরী ও জাহিদ নিরব।
রাত ৮টায় শুরু হবার কথা থাকলেও মিনিট বিশেক বিলম্বে তা শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মুজাম্মেলন হক, প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান, সংসদ সদস্য অপরাজিত হক এবং সংসদ সদস্য নুরুল আমিন জাতীয় সঙ্গীতে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে। এ পর্বে নেতৃত্ব দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী কাদেরি কিবরিয়া। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়সহ উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীতে অংশ নেন। ভিনদেশিরাও গভীর শ্রদ্ধায় দাঁড়িয়ে বাঙালির সাথে কণ্ঠ মেলান।
এরপর জার্মানির ব্যান্ড ‘স্কোরপিয়ন্স’ মঞ্চ সাজাতে ৩৫ মিনিটের অধিক সময় ক্ষেপণ করেছে। এই সময়কে কাজে লাগাতে ন্যূনতম উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি বলে দর্শকেরা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। কারণ, প্রতিটি মিনিটের মূল্য ছিল হাজার ডলারের বেশি। সে সময় সজীব ওয়াজেদ জয়কে বক্তব্যের সুযোগ দিলে তিনি নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনার পথে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কীভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে তা বলতে পারতেন।
উল্লেখ্য, এই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া অর্ধেকের বেশি ছিলেন আমেরিকান। স্কোরপিয়ন্স’র শিল্পীরা মঞ্চে আসার পর নেচে উঠে গোটা মিলনায়তন। রকস্টাররা সকলকে তাক লাগিয়ে এক ঘণ্টারও অধিক সময় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। শিল্পীর মধ্যে ছিলেন ক্লাউস মেইন, রুডল্ফ শেঙ্কার, মিক্কে ডি, মাইকেল শেঙ্কার, ম্যাথিয়াস জাবস।
শুরুতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের মডেলে পরিণত হওয়ার উন্নয়নচিত্র উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক সম্পর্কিত ঐতিহাসিক ভাষণের অংশবিশেষ প্রচার করা হয়। তবে এ সময় স্ক্রিনে ইংরেজি অনুবাদ থাকলে খুব ভালো হতো বলে অনেকে উল্লেখ করেছেন। বিএনপির সমর্থকরাও ছিলেন দর্শক-গ্যালারিতে। তারাও উপভোগ করেছেন পুরো অনুষ্ঠান।
এই অনুষ্ঠানে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাদেরকে সম্মান জানালে অনুষ্ঠানের প্রেক্ষাপট আরও গ্রহণযোগ্য পেত বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। কারণ, একাত্তরের সেই কনসার্টের মতো এবারের কনসার্টে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কোনো গানের ব্যবস্থা যেমন ছিল না, একইভাবে পন্ডিত রবিশঙ্কর কিংবা জর্জ হ্যারিসনের স্বজনেরাও আমন্ত্রিত ছিলেন না।
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিফ বলেন, এ উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। বহুজাতিক সমাজে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ে অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠান-গ্যালারিতে বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) মঞ্জুর আহমেদ বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে যে, ৫০ বছর আগে যে ঐতিহাসিক কনসার্ট আমরা মিস করেছি, যে কনসার্ট সম্পর্কে শুনেছি, ইতিহাসে পড়ছি, সেই কনসার্টের স্মরণে আজকের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে নিজেকে গৌরবান্বিতবোধ করছি।’
উল্লেখ্য, ২০ হাজার আসনবিশিষ্ট এই মিলনায়তনের অধিকাংশই পূর্ণ হয়েছিল। তবে অনুষ্ঠানের প্রচারণা নিয়ে রহস্যজনক নিরবতা-গোপনীয়তার ব্যাপারটি না ঘটলে পুরো মিলনায়তন ভরে যেত-এতে কোনো সন্দেহ নেই-এমন অভিমত পোষণ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা