কানাডার আলবার্টার ক্যালগেরি শহরে চলছে রোডিও শো ক্যালগেরি স্টাম্পিড। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকদেরদের সাথে যোগ দিয়েছেন প্রবাসী বাঙালিরাও। করোনা মহামারীর পর নতুন করে জেগে উঠা প্রাণের স্পন্দন আর পর্যটকদের আনাগোনায় পুরো শহর এখন মুখরিত। ১১০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক ক্যালগেরি স্ট্যাম্পিড প্রথম শুরু হয় ১৯১২ সালে। এটি কাউবয়খ্যাত ক্যালগেরির ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের আইকনিক প্রদর্শনী। বিশাল বাজেটের ১০ দিনব্যাপী স্টাম্পপিড ৮ জুলাই থেকে শুরু হয়, চলবে আগামী ১৭ তারিখ পর্যন্ত।
প্রতি বছরের মতো এবারও ক্যালগেরির ডাউনটাউনসহ বিভিন্ন সড়কে বর্ণিল রং আর আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। কাউবয় খ্যাত শহরটি মেতে ওঠেছে তার নিজস্ব অবয়বে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত আর লোকে লোকারণ্য মিলনমেলার কেন্দ্রবিন্দুতে যোগ দিয়েছে প্রবাসী বাঙালিরাও। তিলধারণের ঠাঁই নেই ক্যালগেরির হোটেল আর রেস্তোরাঁগুলোতে।
স্টাম্পিডে ইতিমধ্যেই কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অংশ নিয়েছেন। মাল্টিকালচারালিজমের দেশ কানাডায় বসবাসরত বিভিন্ন কমিউনিটি তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরে নিজেদের কৃষ্টি ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে।
ঘোড়দৌড়, মিডওয়ে গেমস, লাইফ মিউজিক, শিশু কিশোরদের বিভিন্ন রাইড, আতশবাজি এবং স্টাম্পিড প্যারোডের আকর্ষণীয় প্রদর্শনীতে মুগ্ধ হন স্থানীয় দর্শক এবং পর্যটকরা। অন্যদিকে জনপ্রিয় "স্ট্যাম্পিড ব্রেকফাস্ট" সকাল থেকে শুরু হয়। এতে অংশ নেন প্রাদেশিক সরকার প্রধান থেকে শুরু করে, সিটি মেয়র, এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে নিজ হাতে এই ব্রেকফাস্ট জনগণকে পরিবেশন করেন।
ক্যালগেরির এবিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ড. বাতেন বলেন, ক্যালগেরি স্ট্যাম্পিড এর অন্যতম উল্লেখযোগ্য অংশ হলো শুধু কানাডিয়ান নয়, কানাডায় বসবাসরত বিভিন্ন কমিউনিটি তাদের নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার সু্যোগ পায়।
বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অফ ক্যালগেরির সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত বসু বলেন, ক্যালগেরি স্ট্যাম্পিডে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণের ধারা অব্যাহত থাকবে, এটাই আমার বিশ্বাস।
বিশিষ্ট কলামিস্ট উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান বলেন, দীর্ঘ দুই বছর করোনা বিরতির পর নতুন করে জেগে উঠা ক্যালগেরি স্ট্যাম্পিড যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আর এই স্ট্যাম্পিডে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে খুবই ভালো লাগছে। কে না চায় তার নিজ দেশের ভাবমূর্তি ও লাল সবুজের পতাকা বিদেশের মাটিতে তুলে ধরতে?
সিলেট অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সাধারণ সম্পাদক কয়েস চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রোডিও শো ক্যালগ্যারি স্টাম্পিডে বাংলাদেশিরা অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়ায় আমরা গর্বিত।
গোলাম খায়রুল বাসার বলেন, বাঙালির সন্তান হয়েও কানাডিয়ান কালচারে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরার সুযোগ নিঃসন্দেহে আয়োজকদের প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
লোকসংগীত শিল্পী গুরুপ্রসাদ দেবাশীষ বলেন, অত্যন্ত গর্ববোধ করছি আমাদের দেশীয় সংগীত ভিনদেশের এই আয়োজনে পরিবেশন করতে পেরে, আমরা গর্বিত।
ক্যালগেরি স্ট্যাম্পিডে অংশগ্রহণ করে জেবুন্নেসা চপলা বলেন, খুবই ভালো লাগছে বিদেশের মাটিতে আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পেরে। আমরা চাই বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা এভাবেই বিশ্বের দরবারে ছড়িয়ে পড়ুক।
ক্যালগেরি স্ট্যাম্পিডে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে- এমনটাই মনে করছেন এখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা