পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি ২৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট আয়োজিত “বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকা” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় জানান, বাইডেন প্রশাসন তথা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই উত্তম। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের ব্যবসাও বেড়েছে। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশে। আমরাও যুক্তরাষ্ট্রে ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করে থাকি। আজ নিউইয়র্কে এবং ২১ ফেব্রুয়ারি লসএঞ্জেলেসে মার্কিন ব্যবসায়ীগণের সাথে বৈঠক হয়েছে। তারা অত্যন্ত আগ্রহী বাংলাাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে।
মতবিনিময় সভার প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন উল্লেখ করেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনী জে বে্লংকেন আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ওয়াশিংটন ডিসিতে। আমি সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে আসবো। এমন মধুর সম্পর্ক সত্ত্বেও কিছু কিছু মিডিয়া উদ্ভট সংবাদ প্রকাশ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অভিপ্রায়ে। এ ব্যাপারে প্রবাসীদের সজাগ থাকতে হবে। নিজ নিজ এলাকার সিনেটর-কংগ্রেসম্যানসহ প্রশাসনের লোকজনের সাথে সম্পর্ক গভীর করতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে চলার সত্যিকারের কথা তাদেরকে অবহিত করতে হবে।
এ মতবিনিময় সভায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, রেমিট্যান্স হাউসের প্রতিণিধিবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মতিবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। তারা উদ্ভুত পরিস্থিতি এবং প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনা আলোকপাত করেন। এনআইডি কার্ড সকলের জন্যে দ্রুত ইস্যু করার আহবান জানান। অনেক প্রবাসীর সহায়-সম্পদ দুর্বৃত্তরা দখল করেছে, সরকারের বিনিয়োগের আহবানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে অনেকে কাঙ্খিত সহযোগিতা পান না, এয়ারপোর্টে এখনও কিছু অসৎ কর্মকর্তার বেপরোয়া আচরণ অব্যাহত রয়েছে, নিউইয়র্ক অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠির সেবা প্রদানের জন্যে বড় একটি ভবনে কন্স্যুলেট অফিস স্থাপনের পাশাপাশি মিশিগান, টেক্সাসে কন্স্যুলেট অফিস স্থাপনের কথাও উঠে এ সময়। কারিগরি সেক্টরে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহীদের জন্যে স্কলারশিপ বাড়ানোর আহবান জানান যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী মালিকানাধীন ‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ।
সকলের আহবানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রদত্ত বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে, বঙ্গবন্ধুর মত একজন বিশাল হৃদয়ের ত্যাগী নেতা পেয়েছিলাম-যিনি আমাদের একটি স্বাধীন ভূখন্ড দিয়ে গেছেন। এবং তার যোগ্য উত্তরসূরি সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা বিনির্মাণের পথে বাংলাদেশ দিপ্ত প্রত্যয়ে এগুচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে উন্নত, সমৃদ্ধশালী, স্থিতিশীল, অসাম্প্রদায়িক অর্থনীতি, যেখানে অন্ন, বস্ত্র বাসস্থান, শিক্ষা সেবা, স্বাস্থসেবা-সকলের জন্যে নিশ্চিত হবে, সেই সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা অর্জনে সক্ষম হবো। আমরা ইতিমধ্যেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন, সবার জন্যে কাপড় নিশ্চিত করেছি। ইতিমধ্যেই ৩৫ লাখ গৃহহারাকে বাড়ি তৈরি করে দেয়া হয়েছে। স্কুলে ভর্তির হার হান্ড্রেড পার্সেন্ট হয়ে গেছে। তবে শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে যে প্রশ্ন রয়েছে, তা দূর করতে সরকার বদ্ধপরিকর। প্রায় ১৬ হাজার হেল্থ ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেখান থেকে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে।
ড. মোমেন উল্লেখ করেন, কান্ট্রি ইজ ডুয়িং ওয়েল। তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বেকারত্ব রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ংকর আশংকা দিনদিনই বাড়ছে। এছাড়া নতুন নতুন পরিস্থিতিও তৈরি হচ্ছে। তবে আমরা সবকিছু ঠিকঠাকমত সারতে পারছি-এটাই বড় সত্য।
প্রধান অতিথি হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন আরো জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক মধুর। দিনযত যাচ্ছে সম্পর্কের পরিধিও বিস্তৃত হচ্ছে। এজন্যে বাইডেন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ঘনঘন ঢাকায় যাচ্ছেন। সে সব কর্মকর্তাগণকে আমরা অত্যন্ত অহংকারের সাথে আপনাদের অবদানের কথা অবহিত করি যে, আপনারা কঠোর শ্রম দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে। আপনারা কারোর ওপর নির্ভরশীল না থেকে নিজেরাই ব্যবসা-বাণিজ্য দিয়ে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। আপনারা জবক্রিয়েট করছেন। তারা এটি স্বীকার করেন অবলিলায়।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রায় সকল সূচকে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সফলতা ও অগ্রযাত্রাকে মূলধারার সাথে বেশি সম্পৃক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে তুলে ধরে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বৃদ্ধির জন্য সকলকে আহবান জানান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দেশ ও সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে সেগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান। অবৈধপথে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর নেতিবাচক দিকসমূহ তুলে ধরে তিনি বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণের জন্য জনমত গড়ে তোলার আহবান জানান। তিনি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য যে যার অবস্থান থেকে সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান। প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি উপস্থিত সকলের প্রশ্নের জবাব দেন। উপস্থিত অনেকেই তাদের বক্তব্যে কনস্যুলেটের সার্বিক সেবা কার্যক্রমের ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে উল্লেখ করে তিনি প্রবাসীদের প্রত্যেককেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে অভিহিত করে দেশের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে সকলের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি সরকারের প্রবাসী বান্ধবনীতি অনুসারে প্রবাসীদের আন্তরিকতার সাথে সেবা প্রদানের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করণে প্রবাসীদের অবিরাম প্রচেষ্টা ও সাফল্য তুলে ধরেন এবং রেমিট্যান্স প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। উল্লেখ্য, ৫ দিনের সফরে গত ২০ ফেব্রুয়ারি লসএঞ্জেলেসে এসেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি নিউইয়র্কে আসেন। জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাগণের সাথে বৈঠক ছাড়াও সদস্য দেশসমূহের সাথে নানা ইস্যুতে বৈঠক করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালের ফ্লাইটে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ