৩১ মার্চ, ২০২৩ ২১:৪২

ইউরোপে বাড়ছে বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা

অনিয়মিতদের ফেরত পাঠাতে ইউরোপীয় কমিশনের তাগিদ

মতিউর রহমান মুন্না, গ্রিস প্রতিনিধি

ইউরোপে বাড়ছে বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা

বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইইউ কমিশনের সদর দফতরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পতাকা উড়ছে। রয়টার্সের ফাইল ছবি

অভিবাসীদের অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে দিন দিন কঠোর হচ্ছে ইউরোপ। এমনকি অনিয়মিতভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে যাদের আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে, তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকেও তাগিদ দিচ্ছে ইউরোপীয় কমিশন। অভিবাসীবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস’র এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

একদিকে অনিয়মিতদের ফেরত পাঠাতে তৎপর ইউরোপ অন্যদিকে নতুন করে থামছে না অনুপ্রবেশও। উন্নত জীবনের আশায় প্রতিনিয়তই অবৈধ পথে ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। অনেকেই পথিমধ্যে হারাচ্ছেন প্রাণ। এমনকি দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই হচ্ছেন নিঃস্ব।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২০০৮ সাল থেকে পাওয়া হিসাবে এবার সর্বোচ্চ আশ্রয় আবেদনের রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশিরাও। সবশেষ ২০২২ সালে প্রায় ৩৪ হাজার বাংলাদেশি ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।

২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৯  লাখ ৬৬ হাজার অভিবাসী আশ্রয়ের আবেদন করেন। এই সংখ্যা এর আগের বছরের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি এবং ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০০৮ সাল থেকে পাওয়া হিসাবে সর্বোচ্চ আশ্রয় আবেদনের রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশিরাও। গত বছর প্রায় ৩৪ হাজার বাংলাদেশি ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।
 
২০২১ সালের ধারাবাহিকতায় গত বছরে আশ্রয় চাওয়াদের দুই তৃতীয়াংশই ছিলেন সিরীয় (১ লাখ ৩২ হাজার) ও আফগানরা (১ লাখ ২৯ হাজার)। ২০১৬ সালের পর দেশ দুইটির নাগরিকদের আবেদনের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। তৃতীয় অবস্থানের আছেন তুরস্কের মানুষ, ৫৫ হাজার আবেদনকারী ছিলেন ইউরোপীয় ইয়নিয়নের সীমান্তবর্তী এই দেশটির। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলা ও কলম্বিয়ার মানুষেরা। দেশ দুইটির আশ্রয় আবেদনকারীর সংখ্যা যথাক্রমে ৫১ হাজার ও ৪৩ হাজার।

অপরদিকে ২০২১ সালে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি ইইউ প্লাস দেশগুলোতে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছিলেন। এবার এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অনিয়মিত উপায়ে আসা ৩৩ হাজার ৭২৯ জন বাংলাদেশির আবেদন জমা পড়েছে ২০২২ সালে, যা পাকিস্তানের নাগরিকদের পর আবেদনের দিক থেকে সপ্তম।

কিন্তু ইউরোপে থাকা এসব অভিবাসীর যাদের আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে, তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতেও নানা উদ্যোগ নিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এমনকি প্রায়ই বিতাড়িত করার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। 

সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, গত ১৪ মার্চ গ্রিসসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকা ৬৪ জন অনিয়মিত অভিবাসীকে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়। গ্রিস, স্পেন, মাল্টা, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে থাকা ৬৪ জন অনিয়মিত বাংলাদেশি অভিবাসী নিয়ে একটি চার্টার বিমান ১৪ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করে। গ্রিসের আশ্রয় ও অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রণালয় ইনফোমাইগ্রেন্টসকে এই তথ্য নিশ্চিত করে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “যৌথ ইউরোপীয় প্রত্যাবাসন বা জয়েন্ট ইইউ রিটার্ন অপারেশনের আওতায় এবং ইইউ বহিঃসীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় আবেদন করে প্রত্যাখ্যান হওয়া ৬৪ জন বাংলাদেশিকে নাগরিককে জোরপূর্বক ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়।’

ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের মধ্যে গ্রিস থেকে ২০ জন, রোমানিয়া থেকে ৯ জন, ইটালি থেকে ২ জন, ফ্রান্স থেকে ৩ জন, মাল্টা থেকে ২ জন, স্পেন থেকে ৪ জন, সুইডেন থেকে ২ জন এবং সাইপ্রাস থেকে ২০জন রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে গ্রিক মন্ত্রণালয়।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

  
 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর