১৯ জুলাই, ২০১৯ ১৩:০৩

'আমার আপনার চেয়েও আপন' লেখক

ফারহাতুল জান্নাত

'আমার আপনার চেয়েও আপন' লেখক

"প্রতি জোছনায় হয়তো হিমুরা আসে না নীল পদ্ম হাতে, নীল শাড়ীর প্রতি ভাঁজে আটকে থাকে রুপাদের অপেক্ষার ম্রিয়মান আলো আর সে আলোয় মোটা ফ্রেমের চশমা হারিয়ে মিসির আলী হয়তো এখনও অপেক্ষা করে কোন দেবীর প্রত্যাবর্তনের।"
হ্যাঁ, প্রিয় সুহৃদ বুঝতেই পারছেন আজ যাকে নিয়ে লিখছি তিনি 'আমার আপনার চেয়েও আপন' লেখক হুমায়ূন আহমেদ। বাংলা সাহিত্যের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের অন্যতম সফল একজন অমর কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকার।
যার লেখা পড়ে কৈশোর কেটেছে আমার, আপনার, আপনাদের সবার।
আমার সেই শৈশবে একটু ঢুঁ মেরে নিই আপনাদের সাথে নিয়ে।

ক্লাস ফোর এ পড়ি, বিটিভির ঈদ ম্যাগাজিনে আমন্ত্রিত সস্ত্রীক হুমায়ূন আহমেদ, সেই পর্বটা গিলছি রীতিমতো। ভাবছেন, ফোর এর পিচ্চি হুমায়ূনের কি বুঝে? জনাব/জনাবা এই পিচ্চি ক্লাস সিক্স এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল রচনাবলী পড়া শেষ করে, বিভূতি, শরৎচন্দ্র, সমরেশ ও পড়ে ফেলেছে। চোখ কপালে তুললেন? লিও টলস্টয়, মার্ক টোয়াইন, ভিক্টর হুগো ও ক্লাস সিক্সেই পড়া শেষ। নেন্ এবার চোখ তুলেন, কপালের উপরে নাকি আকাশে নিজেই ঠিক করেন।

অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা হুমায়ূন আহমেদকে অপ্রস্তুত করে দেওয়ার জন্য প্রশ্ন করলেন, আপনি কি গুলকেতীন ভাবী যে শাড়ীটি পড়ে এসেছেন তার রং এর বিবরণ একটুও না তাকিয়ে বলতে পারবেন?

রসিক এ লেখক উপস্থাপিকাকে অবাক করে দিয়ে ময়ূরকন্ঠী সে শাড়ীর শুধু রং নয়, শাড়ীর পাড় ও আঁচলের রং ও ডিজাইনের পৃথক বর্ননাও দিয়ে দিলেন, সম্পূর্ণ না দেখেই। এবার ভাবীর অবাক হবার পালা। তিনি অকপটে বললেন, হুমায়ূন তাকায় না, ও দেখে।

জানালেন হুমায়ূনের তীক্ষ্ম দৃষ্টি, অকপট সত্য বলা ও যত্ন এ গুণ গুলোই উনাকে মুগ্ধ করে যায় বার বার।

যারা হুমায়ূনের লেখা শ'তিনেক বইয়ের একটাও পড়ে; নিজের মনকে বলতে পেরেছেন- "উনি তো আমার মনের কথা লিখেন" তারা আসলে হুমায়ূনের সব বই এর মতো, গুলকেতিন ও তার চার সন্তানকেও নিজের পরিবারের মতো আপন ভেবে নিয়েছিলেন অনেকটা অজান্তেই। যার ফলে লেখক ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমদের সফলতার জোছনার আড়ালে ব্যক্তি হুমায়ূনের অমাবস্যার আঁধার পাশাপাশি পথ চলে। এভাবেই হয়তো চলবে যেভাবে উনার গল্পে হিমু আর রুপা পাশাপাশি পথ চলে। এরপরও তো নিরেট সত্যি - কষ্টবিলাসী জাতির সাহিত্য সম্ভারে বাড়তি পাওনা- এক জোছনাবিলাসী কথাসাহিত্যিক, নিকশ কালো অমাবস্যায়ও যার আলো ফুরায় না।

ব্যস, লেখা হয়তো এখানেই শেষ হতে পারতো কিন্তু না আরও কিছু লিখতে চাইছে এ মন।

আমি হিমু, রুপা, মিসির আলী কোনটাই কখনও হতে চাইনি, কখনও এদের প্রতি ভালোলাগাগুলো মাত্রা ছাড়ায়নি। আমি কখনও নীল শাড়ি পরে হিমু খুঁজিনি। আমি কখনও লেখক হুমায়ূনকে বাড়াবাড়ি রকমের ভালোবাসিনি। শুধু চাঁদের আলোর মুগ্ধতায় বেড়ে উঠেছি। ভেবেছি আমিও লেখক হবো। কোনও একদিন আমিও কালজয়ী রচনা লিখে অমর হয়ে যাবো। 

হুমায়ূন স্যার,
যতদিন চাঁদের আলো থাকবে,
তার বলয় হয়ে থাকবেন আপনি।
আমি আপনাকে মিস্ করি না। জানতে চান, কেন?

পূর্ণচন্দ্রের মাঝে নিজের অস্তিত্বের স্বাদ নেওয়া, সাঁঝবেলায় গাছেদের সাথে 
কথা বলা এই মারাত্মক ঠোঁট কাটা, সংবেদনশীল মেয়েটার মধ্যে কোথাও না কোথাও অনন্যসাধারন এক হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে আছেন। কারণ লেখকের প্রেম হয় প্রকৃতি আর পাঠকের প্রেম হয় তার প্রিয় লেখকের লেখা চরিত্র।

আজ আপনার প্রয়াণ দিবসে নব্য লেখকের এ ছোট্ট উৎসর্গ মার্জনা করবেন স্যার।
 
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

সর্বশেষ খবর