সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

লাভ ইন বইমেলা

ইকবাল খন্দকার

লাভ ইন বইমেলা

আইডিয়া : তানভীর আহমেদ

আমার এক বড়ভাই ফোন করে বললেন, সৈয়দ মুজতবা আলী, প্রমথ চৌধুরীসহ আরও কে কে যেন বই নিয়ে কী লিখে গেছেন! তাদের সব লেখা লাগবে। তুই লিংকগুলো দে তো! আমি বললাম, সৈয়দ মুজতবা আলী, প্রমথ চৌধুরীরা ফেসবুক ব্যবহার করতেন না তো, তাদের ইউটিউব চ্যানেলও নেই। সুতরাং কোনো প্রকার লিংক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এবার বলেন সমস্যা কী! মানে তাদের বইপড়া বিষয়ক লেখার দরকার পড়ল কেন! বড়ভাই বললেন, হয়েছে কী, সারা জীবনে তো প্রেম হলো না, শেষ বয়সে এসে একটা মেয়েকে পটাতে সক্ষম হলাম। কিন্তু কদিন ডেটিং করার পরই বুঝলাম, তার আসলে খাসলত খারাপ। খালি শপিংয়ে যেতে চায়। তাকে তালিম দেওয়ার জন্য সৈয়দ মুজতবা আলী, প্রমথ চৌধুরীর বইপড়া বিষয়ক লেখাগুলো দরকার। যাতে তাকে বইয়ের গুরুত্ব বোঝাতে পারি, বইমেলার গুরুত্ব বোঝাতে পারি। বুঝিয়ে-সুজিয়ে যদি মেলায় নিয়ে আসতে পারি, তাহলে বিস্তর লাভ। কারণ, শপিংমলে গিয়ে একটা ড্রেস কিনতে যে টাকা লাগে, তা দিয়ে এক ভ্যানগাড়ি বই কিনে ফেলা সম্ভব। এ ছাড়া... আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, আপনার মতলব আমি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আপনার প্রেমিকাকে বোঝাতে সৈয়দ মুজতবা আলী বা প্রমথ চৌধুরীর লেখার লিংক লাগবে কেন? বড়ভাই বললেন, আমার কথাকে পাত্তা দেয় না তো! আমার ধারণা মুজতবা বা প্রমথ সাহেবের কথা পাত্তা না দিয়ে পারবে না। আমার এক চাচাতো বোন মেলায় যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়ল। আমি তাকে বললাম, জীবনে তো তোকে কোনো দিন মেলায় যাওয়ার জন্য অস্থির হতে দেখলাম না! হঠাৎ এই অস্থিরতা? চাচাতো বোন বলল, আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে চাচ্ছে তো! তাই মেলায় যাওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমি বললাম, পাত্রপক্ষ তোকে মেলার মাঠে দেখবে, এই তো! চাচাতো বোন বলল, আরে না। তারা আমাকে ঘরে বসেই দেখবে। মেলায় ম্যালা টিভি ক্যামেরা আসে তো, তাই কোনো না কোনো চ্যানেলের ক্যামেরার সামনে পড়ে যাবই। তারা যদি সরাসরি আমাকে টিভিতে দেখে ফেলে, খুব ভালো। নইলে পরবর্তীতে লিংক পাঠিয়ে দেব। আমি বললাম, সব ঠিক আছে। কিন্তু সামনাসামনি দেখার সুযোগ না দিয়ে টিভির মাধ্যমে কেন দেখা দিতে হবে? চাচাতো বোন বলল, টিভিতে দেখা দিলে পাত্রপক্ষ আমাকে পছন্দ করে ফেলবে বলে আশা করা যায়। কারণ, আমি সামনাসামনি দেখতে ভালো না হলেও ক্যামেরায় আমার চেহারা ভালো আসে। আমার এক প্রতিবেশী বলল, সারা দেশের ক্যাবল অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকলে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছার পর বইমেলায় যাওয়ার একটা ইচ্ছা ছিল। আমি বললাম, এত ঝামেলা কেন করতে চাচ্ছেন বলেন তো? প্রতিবেশী বললেন, নতুন গার্লফ্রেন্ড জুটিয়েছি তো, মেলায় একটু ঘোরাঘুরির ইচ্ছা ছিল। কিন্তু টিভি ক্যামেরার জন্য সাহস পাচ্ছি না। দেখা গেল ইউটিউবে হাত ধরাধরির দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ল। ব্যাপারটা খারাপ না? বিশেষ করে এই প্রেমটা ভেঙে যাওয়ার পর আরেকটা প্রেম যখন করতে যাব, তখন এই ডকুমেন্ট মানে ফুটেজটা কাল হয়ে দাঁড়াবে না?

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর