কবি হলো ইহজনম ও পরজনমের মধ্যে যোগসূত্র।
একটি বিশুদ্ধ ঝর্ণা যার জল পান করে সকল তৃষ্ণার্ত আত্মা।
সুন্দর নদীর সেচের জলে বেড়ে ওঠা একটি গাছ,
ক্ষুধার্তরা যার ফল খেয়ে বাঁচে;
কবি একজন নাইটিংগেল, অবসাদগ্রস্তদের
মনকে তুষ্ট করে সুরে আর গানে;
কবি আকাশের বুকে একদলা সাদা মেঘ,
আকাশ ঢেকে না যাওয়া পর্যন্ত যার ছুটে চলা।
তারপর এটা ধরায় ঝরে পড়ে জীবনের মাঠে,
পাপড়ি খুলে পথ করে দেয় আলো প্রবেশের।
কবি একজন ফেরেস্তা, দেবী যাকে পাঠিয়েছেন
বাণী প্রচারে;
কবি একজন দেদীপ্যমান বাতি, অন্ধকার যার কাছে হার মানে
এবং যা বাতাসেও নেভে না। প্রেমের দেবতার
তেল দিয়ে ভর্তি এবং সুরের দেবতার আলোয় উদ্ভাসিত।
কবি একা, সরলতা ও মহানুভবতা যার বসন;
প্রকৃতির কোলে বসে সে অনুপ্রেরণা খুঁজে নেয়;
এবং রাতের নীরবতায় প্রতীক্ষায় থাকেন,
দেবতার আগমনের।
কবি বীজ বপন করে স্নেহের তৃণভূমে এবং
মানবতা তার ক্ষুধা মেটাতে সেই ফসল কাটে।
কবি সেই-ই- যাকে মানুষ তাঁর জীবদ্দশায় অবহেলা করে,
এবং স্বীকৃতি দেয়
যখন সে ইহজগৎকে বিদায় জানিয়ে বেহেশতে ফিরে যান।
কবি সেই-ই- যার প্রত্যাশা সামান্য
শুধু এক চিলতে হাসি।
কবি সেই-ই- যার উদ্যম ঊর্ধ্বগামী
যার কথায় পূর্ণতা পায় মহাকাশ;
তবুও মানুষ তার দীপ্তিকে অস্বীকার করে।
মানুষ আর কতদিন পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটাবে?
মুহূর্তের সুখে যারা মহত্ত্ব লাভ করে
তাদের মহত্ত্বকে স্বীকার করবে?
আর কতদিন তারা অবহেলা করবে
যাদের চোখে তারা সুন্দরের রূপ দেখতে পায়,
ভালোবাসা ও সুখের প্রতীক?
আর কতদিন মানুষ মৃতের গুণগান করবে
এবং জীবিতকে ভুলে, যারা কাটিয়ে দেয়
দুর্দশায় এবং যারা নিজেদের নিঃস্ব করে
জ্বলন্ত মোমের মতো
অন্ধদের পথ দেখাতে আলোর পথে?
কবি, তুমি এই জীবনের জীবনশক্তি, এবং
শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে টিকে আছো বিজয়ীর বেশে।
কবি, একদিন তুমি মানুষের হৃদয় জয় করবে,
অতএব, তোমার রাজ্যের অন্ত নেই।
কবি, তোমার কণ্টকাকীর্ণ রাজ্যের খোঁজ করো;
খুঁজে পাবে তাকে বিকাশমান লরেলের মাঝে।