গল্প
নির্মেঘ আকাশ। খানিকক্ষণ আগেই জমাটবাঁধা চাপ চাপ মেঘের চাঁইগুলো আকাশটা দখল করে রেখেছিল। হঠাৎ মেঘ কেটে যাওয়ায় চাঁদের আলো উঁকি মেরেছে চরাচরে। দুধেল জ্যোৎস্নাধারা নেমে এসেছে সর্বপ্লাবী বানের মতো!
রাত কটা বাজে? দেয়ালে টাঙানো ঘড়িটার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকালেন এন্তাজ হোসেন। স্পষ্ট দেখতে পেলেন না। কেবল ঘড়ির লম্বাটে মিনিটের কাঁটাটি ‘টিকটিক’ শব্দে প্রদক্ষিণ করছিল রোমান সংখ্যার হরফগুলো। শ্বাস খাটো হয়ে আসছে তাঁর! এমনটা আগে ঘটেনি, আজই প্রথম। তিনি কী করবেন? তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লেন। ঘরময় মিহি অন্ধকার ঢেউ তুলেছে। অন্ধকারের নমনীয়, অত্যন্ত পাতলা পর্দা ছিঁড়েখুঁড়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। সুইচ টিপতেই নীল রঙের বাতিটা জ্বলে উঠল আচমকা!
এন্তাজ হোসেন এতক্ষণে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। সূক্ষ্ম অন্ধকারের নরম আঙুলগুলো এতক্ষণ ভীষণ উত্ত্যক্ত করেছে তাঁকে। খানিকটা ভড়কেও দিয়েছে। এ মুহূর্তে ঘড়ির কাঁটার ‘টিকটিক’ শব্দে ভারী অসহ্য ঠেকছে তাঁর। ইচ্ছে করছে ঘড়িটাকে দেয়াল থেকে খসিয়ে এনে ব্যালকনি থেকে বাইরে ছুড়ে মারতে! আক্রোশ; বহুক্ষণ ধরে চেপে রাখা আক্রোশটাই ক্রমশ চাগিয়ে উঠতে চাইছে যেন।
প্রস্রাবের ভীষণ বেগ পেল এন্তাজ হোসেনের। বাইরে যাওয়ার ঝক্কি নেই, কয় পা হাঁটলেই টয়লেটে ঢুকে পড়বেন। এত দিনে তিনি একটা ব্যাপার ঠিকই উপলব্ধি করেছেন, জীবনটাকে যতই সহজ করে দেওয়া হোক না কেন, জীবন অত সহজে পোষ মানে না। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো তাঁর। শহুরে জীবনযাপনের ধাপগুলো তাঁর কাছে বড় ঝামেলা বলে মনে হয়। শৈশব থেকে এই অবধি জীবনটাকে তিনি যেভাবে যাপন করে এসেছেন, জীবনের সেসব গ্রামীণ যাপন শহুরে প্রণালির সঙ্গে খাপ খায় না; বেমানান লাগে তাঁর কাছে।
টয়লেট থেকে বের হয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়াতেই নিজেকে বেশ খানিকটা হালকা মনে হলো এন্তাজ হোসেনের।
ইদানীং পাখির পালকের মতো নরম বিছানায় শুয়েও ঘুম হয় না তাঁর। নির্ঘুম রাত কাটান। সারা রাত বিছানায় এপাশ-ওপাশ করেন। মাঝেমধ্যে চোখে ঘুম নেমেও আসে- ক্ষণিকের। সে ঘুমের আয়ু দীর্ঘ হয় না। ঘুম ভাঙতেই আলগোছে বিছানা ছেড়ে ব্যালকনিতে দাঁড়ান। সে রাত পূর্ণিমার। আকাশে চাঁদ ওঠে। অষ্টাদশী চাঁদকে তাঁর বুড়ি চাঁদ বলে ভ্রম হয়! প্রৌঢ়ের ঘোলাটে চোখে চাঁদের জৌলুস ধরা পড়ে না। নাকি অন্য কিছু? তিনি গ্রামের বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে ভরা পূর্ণিমার রাতে আকাশে তাকাতেন, মাঝেমধ্যে মেঘে ঢাকা চাঁদের কিয়দংশ দেখে মনে হতো চাঁদ যেন অনন্তযৌবনা! তখন চাঁদের সামান্য জৌলুসেও মুগ্ধ হতেন। এ কথা বেশি দিনের নয়, বছরখানেক আগেও মুগ্ধ হয়েছেন।
বুড়িয়ে যাওয়া চাঁদটার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলেন না এন্তাজ হোসেন। পূর্ণিমার রাত। বেসামাল হাওয়া এসে ধাক্কা মারছে শরীরে। বাসার নিচে ফুটপাতের ওদিকটায় বিস্কুট রং দেয়াল ঘেঁষে একটা কুকুর কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
হাওয়াটা ফুরফুরে। অথচ সেই হাওয়ায় কোনো ফুলের গন্ধ নেই। বছরখানেক আগেও এমন-ই এক পূর্ণিমার রাতে বাতাস ছিল ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা! বাড়ির উঠানের একফালি বাগান থেকে ভুরভুর করে ফুলের মিষ্টি গন্ধ উঠে আসত বাতাসে সওয়ার হয়ে। আহা! কী সেই সৌরভ সুবাস। এ মুহূর্তে বাতাসে ডিজেলের গন্ধ! গন্ধটা আচমকা এসেই এন্তাজ হোসেনের নাসারন্ধ্রে যেন একটা ধাক্কা মেরে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল। তিনি ঘরের ভিতর চলে এলেন।
শেষ রাতের দিকে তিনি টের পেলেন স্বপ্নটা বাস্তবিক, মিথ্যে নয়। আঁতকে উঠলেন তিনি। কোটরাগত ঘোলাটে চোখ দুটিতে আতঙ্কের প্রগাঢ় ছাপ। প্রথমত তিনি ধাতস্থ হতে চাইলেন, অথচ পারলেন না। সময়ের সঙ্গে উৎকণ্ঠা ক্রমে বেড়েই চলতে লাগল। দ্বিতীয়ত তিনি উত্তেজিত হতে চাইলেন, তাতেও শরীর সায় দিল না। এ মুহূর্তে তাঁর স্নায়ু নেতিয়ে রইল।
ভোরবেলা জানালা দিয়ে আলো ঢুকতে লাগল তির্যকভাবে!
অন্ধকারে ভীষণ ভয় পান তিনি, সারাক্ষণ তটস্থ হয়ে থাকেন। রাত শেষে ভোরের আলোই তাঁকে বেঁচে থাকতে আশ্বস্ত করে। উজ্জীবিত করে তোলে। তাঁর জীবনে আলোটাই যেন সব। শহরের পেটের ভিতর এ ফ্ল্যাটবাড়িটা তাঁর কাছে কারাকক্ষের মতো ঠেকে! সিঁড়ি ভেঙে দরজা দিয়ে ঢুকতেই বিশাল হলরুম। বিস্তীর্ণ হলরুমের দুপাশে লম্বালম্বি করে ফেলে রাখা সোফা। ঢুকতেই হাতের ডান দিকের সোফার এক পাশে রঙিন মাছের অ্যাকুরিয়াম। অন্যদিকে বইয়ের তাক। নীল রঙের দেয়ালজুড়ে দেশি-বিদেশি খ্যাতনামা চিত্রশিল্পীদের পেইন্টিং হলরুমের শোভাবর্ধন করেছে আরও। হলরুমের এক কোণে উঁচু তাকভর্তি দামি ব্রোঞ্জের মূর্তি। ওইসব এন্তাজ হোসেনের ছেলে বিদেশ থেকে আনিয়েছে। শুধু কি তাই? শোবার ঘর দামি সব আসবাবে ঠাসা। তবুও একমুহূর্ত মন টেকে না তাঁর! সারাক্ষণ মস্ত এ ফ্ল্যাটে একা, এক কোণে পড়ে থাকেন বিষণ্ন বিবর্ণ মুখে।
ছেলে যখন রুটিনমাফিক সকালবেলা অফিসে বেরিয়ে যায়, সারা বাড়িতে তখন তিনি একা। মস্ত বড় ফ্ল্যাটে নিঃসঙ্গ মানুষটাকে সঙ্গ দিতে দেয়ালজুড়ে টাঙানো পেইন্টিং আর শোবার ঘরের আসবাবগুলো ছাড়া আর কিছুই থাকে না। কাঠের আসবাবগুলো তাঁকে ভীষণ অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। নিস্তেজ, নির্বিকার ওই জড়গুলোই ফাঁকা বাড়িতে বুড়ো মানুষটাকে একা বাগে পেয়ে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে যেন! দাঁত খিঁচিয়ে ভেংচি কাটে। কটাক্ষ করে। সঙ্গে ওদের সাঙ্গোপাঙ্গদেরও লেলিয়ে দেয়।
করোটির ভিতর ঘুণপোকার মতো কুট কুট কামড়ের যন্ত্রণা নাজেহাল করে তুলল তাঁকে! চোখে আঁটা পুরু কাচের চশমার নিচে ঘোলাটে চোখ দুটো কেমন ঈষৎ লালচে রং ধারণ করল। এন্তাজ হোসেন- ওরফে এন্তাজ মুন্সি, এ মুহূর্তে কী করবেন তিনি? মাথার ওপর তাকালেন। হলরুমের ছাদে ঝুলছে একরাশ কাচের ডালপালা নিয়ে ঝাড়বাতি। যদিও প্রকৃতপক্ষে ওটা ছাদের সঙ্গে এঁটে রয়েছে, স্থির- তবুও তিনি যেন কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছেন না। তাঁর ধারণা ঝাড়বাতিটা মুহূর্তেই আচমকা লাফিয়ে পড়তে উদ্যত হয়েছে! একমুহূর্তেই চকচকে কাচগুলো টুকরো টুকরো হয়ে তীক্ষè বল্লমের মতো চামড়া ভেদ করে গেঁথে বসবে মাংসে।
ফাঁকা ফ্ল্যাট, হলরুমের বিস্তীর্ণ পেটভর্তি বিস্তর শূন্যতা। সেই শূন্যতাই যেন ক্রমশ তিল তিল করে গ্রাস করে নিচ্ছে তাঁকে, নিংড়ে নিচ্ছে অস্তিত্বটুকুও!
হলরুমে সোফার পাশে রাখা তাকের ওপর একটা ব্রোঞ্জের নারীমূর্তি দেখে মুহূর্তেই এন্তাজ হোসেনের দেহমন চনমনে হয়ে উঠল, এতক্ষণ ধরে যে দুশ্চিন্তা এবং অহেতুক ভাবনা মাথার ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছিল, সেসব যেন মুহূর্তেই জাদুমন্ত্রবলে উধাও! তাকের এক কোণে রাখা ব্রোঞ্জের সুদৃশ্য নারী মূর্তিটা এতদিন দৃষ্টির অগোচরে ছিল, আজই প্রথম দেখলেন।
ধীরপায়ে হেঁটে তাকের সামনে দাঁড়ালেন তিনি। অনেকক্ষণ পাথরের মতো থ মেরেই রইলেন, নির্বিকার। একপর্যায়ে মূর্তিটা হাতে নিলেন। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখতে লাগলেন। টানা টানা করে আঁকা দিঘল চোখ, কোমরের বাঁক পাহাড়ি ঝরনার মতো আছড়ে পড়ে মিশেছে পুরুষ্টু নিতম্বে। আর স্তন। উঁচু স্তন দুটি অতুলনীয়, অবর্ণনীয়। এন্তাজ হোসেন মূর্তিটা হাতে নিয়ে কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে রইলেন, খেয়াল-ই নেই।
আশ্চর্য! একপর্যায়ে মেঝেয় ঝনঝনিয়ে শব্দ হলো। মূর্তিটা হাত ফসকে পড়তেই এন্তাজ হাসেন সম্বিৎ ফিরে পেলেন। তিনি সোফায় বসে মেঝেতে পড়া মূর্তিটার মুখের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকালেন। ভীষণ চেনা লাগল মুখটি। এতক্ষণে তিনি ধাতস্থ হলেন, স্থির হয়ে সোফায় বসে রইলেন। তিনি দিব্যি টের পেলেন করোটির ভিতর ঘুণপোকার কুট কুট কামড়ের যন্ত্রণা এতক্ষণে থেমে গেছে। মাথার ওপর ঝুলে থাকা ঝাড়বাতিটাও অমায়িক, নিরীহ চোখে তাকিয়ে রয়েছে, আক্রোশ কিংবা সামান্য উত্তাপও নেই সেই চাহনিতে।
জয়তুন বিবির অস্পষ্ট মুখটি ভীষণ মনে পড়ে এন্তাজ হোসেনের। কী আশ্চর্য! মূর্তিটার মুখের সঙ্গে জয়তুন বিবির মুখের কী সাদৃশ্য- ঘাবড়ে গেলেন তিনি। এমনও কি সম্ভব? নাকি কাঠের আসবাব, মাথার ওপর ঝুলে থাকা প্রকাণ্ড ঝাড়বাতিটার পর এতক্ষণে তাকে রাখা এ মূর্তিখানাও তাঁর সঙ্গে রসিকতায় মেতেছে? সত্যিই কি তাই? সামান্য এ বস্তুটাও কি তাঁকে বিভ্রান্তিতে ফেলার ফন্দি আঁটছে গোপনে!
অচিরেই দৃশ্যপটের বদল হয় অদ্ভুতভাবেই। খানিকক্ষণ বিরতির পর ঘুণপোকাটি করোটির ভিতর প্রথম কামড়টা বসাতেই কঁকিয়ে ওঠেন তিনি।
ব্রোঞ্জের সুদৃশ্য মূর্তিটা মুহূর্তেই মুখের আদল বদলে ফেলে- অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। হাসির প্রতিধ্বনি যেন গুমড়ে মরে ফাঁকা ফ্ল্যাটবাড়ির দেয়ালে দেয়ালে! তিনি দেয়ালে টাঙানো ঘড়িটার দিকে তাকালেন। সময় যেন কিছুতেই এগোতে চায় না। কাঁটাটির গতি শ্লথ।
নিস্পৃহ চোখে মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকেন এন্তাজ হোসেন। মাথার ভিতর চিড়বিড় করে ওঠে। মাড়ি দিয়ে মাড়ি চেপে ধরেন শরীরের সম্পূর্ণ সামর্থ্যটুকু প্রয়োগ করে! হঠাৎ-ই চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে।
জীবনের সঙ্গে অসংগতি থাকাতেই তিনি শহরমুখী হতে নারাজ ছিলেন। ছেলে তাতে সায় দেয়নি। গ্রামের বাঁশঝাড়ের পাশে নিস্তব্ধ ভিটেয় তাঁকে একা ফেলে আসতে কিছুতেই ছেলের মন সাড়া দেয়নি। ছেলের অধিক চাপাচাপিতে অগত্যা শহরে তাঁকে পা রাখতেই হয়। সুতরাং নিরুপায় হয়ে মস্ত বড় ফ্ল্যাটে দিনের পর দিন একাকী মুখ বুজে পড়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।
এত দিনে তিনি একটা বিষয় উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন, জীবন বড় অসহায়। সময়ের আঘাত সবচেয়ে মারাত্মক।
প্রায়ই নির্ঘুম রাত কাটান তিনি।
শেষ রাতের দিকে ভোর যখন সমাগত, ঠিক তখনই অদ্ভুত একটা স্বপ্ন প্রায়ই হামাগুড়ি দিয়ে নেমে আসে। অবিকল জয়তুন বিবির কণ্ঠস্বরে একজন ডেকে যায় এন্তাজ হোসেনকে। স্বপ্ন ভেঙে যেতেই তিনি তড়াক করে উঠে পড়েন। তিনি পালাতে চান।
ফ্ল্যাটবাড়ির রং-করা দেয়াল, হলরুমে পাতা সোফা, রঙিন মাছের অ্যাকুরিয়াম, তাকভর্তি ব্রোঞ্জের মূর্তি, মাথার ওপর ঝুলন্ত ঝাড়বাতি, শোবার ঘরের দামি আসবাবপত্র- সবকিছুই তাঁর কাছে মূল্যহীন, ভীষণ অযৌক্তিক ঠেকে। শোবার ঘরের টেবিলের ওপর ফটোফ্রেমের পাশেই দামি পারফিউম। প্রায়ই তিনি লালচে রঙের সরু মসৃণ বোতলটা হাতে নিয়ে ঘ্রাণ শোঁকেন। প্রতিবার মুহূর্তেই ভ্রু কুঁচকে ওঠে। তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বোতলটা রেখে জানালার গরাদ ধরে বাইরের দিকে তাকান। চোখেমুখে তখনো তীব্র প্রতিক্রিয়া- ওটা কোনো ঘ্রাণ হলো? ওর চেয়ে মেঠোপথের ধারে অনায়াসে ফুটে থাকা ভাঁটফুলের মিষ্টি ঘ্রাণও দেহমন মাতিয়ে তুলতে পারে।
এন্তাজ হোসেন তড়াক করে উঠে দাঁড়ান।
ধীরপায়ে হেঁটে শোবার ঘরে ঢুকতেই দেয়ালে লেগে থাকা বাল্বের সঙ্গে চোখাচোখি হলো, তেতে উঠলেন তিনি। গজরাতে লাগলেন, অস্ফুটস্বরে বললেন, শালা! দামি কাঠের খাটের ওপর ধবধবে চাদরের দিকে তাকাতেই মেজাজ দ্বিগুণ তেতে উঠল- গনগনে কড়াইয়ের মতো। ছেলে আজ আসুক বাড়িতে। সকালবেলা বেরিয়ে সন্ধ্যা করে ফেরা। ছেলের ওপর ভীষণ রাগ হলো তাঁর। যখন রাগ হয়, তখন অনেক কথাই ভেবেচিন্তে রাখেন ছেলেকে শোনাবেন বলে। অথচ পরক্ষণেই রাগ দমে যায়। সন্ধ্যা গড়াতেই ছেলে ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়তেই অবুঝ শিশুর মতো আচরণ শুরু করে দেন তিনি।
ট্রেনে জানালার ধারের সিটে বসে হাওয়ায় ভাসতে লাগলেন এন্তাজ হোসেন। বাড়ি ফেরার আনন্দে ভীষণ উচ্ছ্বসিত তিনি। এ শহর নামধারী নরকে মানুষ বাস করে? ওটা ফ্ল্যাটবাড়ি? নিরেট লোহার খাঁচা। বুনিয়াদি বাড়ির লোকেরা পাখিকে বশ মানিয়ে যেরকম পরিপাটি লোহার খাঁচায় আমৃত্যু বন্দি করে রাখে, ওটাও সেরকম। তিনি কথাগুলো ভাবেন। পরক্ষণেই হাঁফ ছাড়েন।
ঘোর কাটতেই চোখ মেলে তাকান এন্তাজ হোসেন। বাতাসে মিহি সুরে ফজরের আজানধ্বনি ভেসে আসছে। ছেলে পাশেই বসা। জ্বরে শরীরটা তেতে রয়েছে ভীষণরকম। বাতিটা জ্বলছে। একপর্যায়ে বাতিটাও তাঁকে উপহাস করতে দ্বিধা করল না, কটকটে আলোর বিকিরণ যেন তাকে ভেংচি কাটল। তিনি অস্ফুটস্বরে উচ্চারণ করলেন ‘শালা!’