শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
কবিতা খানম

দেশের প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার

দেশের প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার

কবিতা খানমকে শপথবাক্য পাঠ করান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা

দেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদের উপনেতা, বিরোধীদলীয় প্রধান এবং রাজপথের বিরোধী দলের প্রধান— সবাই নারী। এবার নির্বাচন কমিশনে নারী হিসেবে যুক্ত হলেন কবিতা খানম।  শিক্ষাজীবনে ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, সাহিত্য ও গানে ছিল বড় দখল। লিখেছেন— তানিয়া জামান

 

দেশের ইতিহাসে নির্বাচন কমিশন (ইসি)-তে এবারই প্রথম নারী হিসেবে নিয়োগ পেলেন কবিতা খানম। স্বাধীনতার ৪৫ বছরে এই পদে এর আগে কোনো নারী দায়িত্ব পালন করেননি।

 

ইসির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইসির যাত্রা শুরুর পর গত ৪৪ বছরে একজন নারীও কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাননি। ২০০৮ সালে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার (নিয়োগ পদ্ধতি) অধ্যাদেশ-২০০৮’ নামে একটি অধ্যাদেশ জারির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেখানে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও একজন নারীসহ দুজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কথা বলা হয়। কিন্তু তখন সে অধ্যাদেশ জারি হয়নি। সদ্য নির্বাচিত এবারের নির্বাচন কমিশনে যোগ হয়েছেন দেশের প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম।

 

কবিতা খানম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ৩১ বছর বিচারিক দায়িত্ব পালন করেছি, আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাব। সাংবিধানিক এ দায়িত্ব পালনে সংবিধান ও আইন সমুন্নত রেখেই কাজ করব।’ নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে নিয়োগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত কবিতা খানম। তিনি বলেন, ‘এটিই প্রথম, এটি ইতিহাস। এর অংশ হতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’

 

কবিতা খানম ১৯৫৭ সালের ৩০ জুন নওগাঁর উকিলপাড়া মহল্লার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম বজলুল হক ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ। প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী বিএমসি কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৯৯৭ সালে। মা গোলে রানী ছিলেন গৃহিণী। আট ভাই বোনের মধ্যে কবিতা সপ্তম। তিনি ১৯৭২ সালে নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর বাবার কলেজ থেকে ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৮১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কবিতা খানম ১৯৮৩ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

 

শিক্ষাজীবনে কবিতা খানম ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। সংস্কৃতিমনা কবিতা খানমের সাহিত্য ও গানে ছিল প্রশংসনীয় দখল। উচ্চ শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা পারিবারিক বলয়ে কবিতা খানমের বিচরণ।

 

কবিতা খানমের স্বামী মশিউর রহমান চৌধুরীও জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ২০১১ সালে হঠাৎ তার মৃত্যু হয়। কবিতা খানমের ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। ছেলে চৌধুরী আবিদ রহমান রুয়েট থেকে লেখাপড়া শেষ করেন। বর্তমানে তিনি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হিসেবে আছেন। মেয়ে ডা. মুমতাহিনাহ্ ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে লেকচারার হিসেবে কর্মরত আছেন।

 

কবিতা খানমের অর্জন

১৯৮৪ সালে বিসিএস’র বিশেষ ব্যাচে উত্তীর্ণ হয়ে রাজশাহীর জেলা জজ আদালতে মুনসেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর বগুড়া, টাঙ্গাইল ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন আদালতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ঝিনাইদহ ও পাবনাতে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা ও খুলনাতে দায়িত্ব পালন করেন। খুলনাতে দায়িত্ব পালনের সময় ২০০৬ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তাকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ২০০৯ সাল পর্যন্ত রাজশাহী লেবার কোর্টের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা দায়রা জজ হিসেবে বদলি করা হয়। ২০১৫ সালে আবারও তাকে রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে বদলি করা হয়। সেখানে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৬ সালের ৩০ জুন তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

সর্বশেষ খবর