শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বিনামূল্যে সাহরি খাওয়ান নূর নাহার

মেহেরপুর প্রতিনিধি

বিনামূল্যে সাহরি খাওয়ান নূর নাহার

রাত ২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে রোগী ও রোগীর স্বজনরা থালা-বাটি হাতে মূল গেটে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। এ দৃশ্য রমজান মাসজুড়ে। হাসপাতাল গেটে নূর নাহারের কাছ থেকে সাহরি গ্রহণ করতেই নারী-পুরুষের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা। নাহার ফার্মেসির মালিক নূর নাহার বেগম ছয় বছর ধরে নিজে হাতে রান্না করে জেনারেল হাসপাতালের রোগী ও রোগীর স্বজনদের বিনামূল্যে সাহরি খাওয়ান। একমাত্র ছেলের আত্মার শান্তি কামনায় এ কাজটি বেছে নিয়েছেন তিনি। হাসপাতাল পার্শ্ববর্তী দুস্থ পরিবারেরও অনেকে আসেন সাহরি খেতে। কেউবা সেখানে বসে নূর নাহারের দেওয়া সাহরি খান, কেউবা থালা-বাটি ভরে সাহরি নিয়ে যান। তিনি রমজান মাসজুড়ে হাসপাতালের রোগী, রোগীর স্বজন এবং নিকটবর্তী দুস্থদের মাঝে সাহরি বিতরণ করেন। সাহরিতে প্রতিদিন তিনি ২৫০ জনকে নিজ খরচে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। নূর নাহারের স্বামী নুরুল ইসলাম মেহেরপুর পিডিবি অফিসে কর্মরত। আছে বিঘা দশেক জমি। নূর নাহার ফার্মেসি ব্যবসা করেন। প্রতিদিন নিজ হাতে তিনি সাহরি রান্না করেন। সাহরির মেন্যুতে থাকে মাংস অথবা মাছের সঙ্গে চিকন চালের ভাত, ডাল ও একটি সবজি।

সাহরি নেওয়া হাসপাতালে ঝরনা খাতুন, আমঝুপি গ্রামের রশনি আরা, গাংনী উপজেলার জব্বার উদ্দিনসহ অনেকেই জানান, কয়েক দিন ধরে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নূর নাহার বেগম তাদের সাহরি দেওয়ার কারণে সাহরির জন্য চিন্তা করতে হয় না। রোগীদের মাঝে সাহরি বিতরণে নূর নাহারকে সহযোগিতা করেন হাসপাতাল এলাকার আব্বাস আলী। নূর নাহার বেগম জানান, তার একটি ছেলে ছিল। ২০১৫ সালে সে মারা যায়। পরের বছর থেকে তিনি তার আত্মার শান্তির জন্য ছেলের নামে ইফতার আর সাহরি খাওয়ানো শুরু করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ যথেষ্ট দিয়েছেন। জায়গা জমি রয়েছে। একটি মাত্র মেয়ে তার বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেটা মারা গেছে, সে বেঁচে থাকলে তারও হক ছিল। এই ‘নাহার ফার্মেসি’ আমার ছেলের জন্য করা হয়েছিল। সে মারা যাওয়ার পর দোকান বন্ধ করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি বন্ধ হতে দিইনি। ছেলের বাবার সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়মিত ছয় বছর ফার্মেসি চালিয়ে আসছি।  এ ফার্মেসি থেকে যে আয় হয় তা দুস্থদের কল্যাণে ব্যয়ের চেষ্টা করি।

সর্বশেষ খবর