শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমনে করবেন গবেষণা

নাসায় বাংলাদেশি মান্না খান

মান্না খানের অধ্যয়নকৃত নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটির ব্লগে সম্প্রতি তাঁর স্বপ্নযাত্রার গল্প তুলে ধরা হয়েছে

জামশেদ আলম রনি

নাসায় বাংলাদেশি মান্না খান

বিশ্বে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিকরা নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করে বয়ে আনছেন দেশের সুনাম। তাঁদেরই একজন মান্না খান। লক্ষ্য জয়ের ব্যাপারে তাঁর রয়েছে দুর্দান্ত একাগ্রতা। বিশ্বকে নতুন কিছু উপহার দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন প্রতিনিয়ত। নতুন প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে চান তাঁর সৃষ্টি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত বিশ্ব যখন নানাভাবে হোঁচট খাচ্ছে, ঠিক তখন বাংলাদেশি এই নারী বিশ্বকে সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্ত করতে তাঁর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। পানিসম্পদ এবং বন্যা পর্যবেক্ষণে দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্যোগ প্রশমিত করে এ অঞ্চলের ঝুঁকি কমাতে নাসায় গবেষণা পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। যা তাঁর স্বপ্ন পূরণে দারুণ মাইলফলক হয়ে থাকবে।

মান্না খান যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত সম্মানজনক ‘ম্যাকনেয়ার’ স্কলারশিপপ্রাপ্ত গবেষক। তিনি ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ডাকোটায় (ইউএনডি) ভূগোল বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এখন তিনি আর্থ সিস্টেম সায়েন্স অ্যান্ড পলিসিতে (ইএসএসপি) ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জনের দ্বারপ্রান্তে।

সম্প্রতি মান্না খান যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (নাসা) ইন্টার্ন করার সুযোগ পেয়েছেন। নাসা প্রদত্ত ভার্চুয়াল ইন্টার্নশিপের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এ জন্য তিনি পাবেন সম্মানী। উপগ্রহ ও স্থল পরিমাপে নাসার ডাটাবেজ ব্যবহার করে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, উপকূলীয় বন্যা এবং এ সম্পর্কিত বিপদ নিয়ে গবেষণা করবেন মান্না খান।

মান্না খানের অধ্যয়নকৃত নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটির ব্লগে ১৩ জুলাই তাঁকে নিয়ে একটি ফিচার প্রকাশ হয়েছে। সেখানে তাঁর স্বপ্নযাত্রার গল্প তুলে ধরা হয়েছে।

জানা যায়, মান্না খান ২৫ বছর আগে পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। পরে কিছু সময় ব্যবসা পরিচালনা করেছিলেন। শুরুতে ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। পরে তাঁরা নর্থ ডাকোটায় যান এবং তিনি ভর্তি হন ইউএনডিতে। কিছু সময়ের জন্য মান্না খান, তাঁর স্বামী শফিকুল এবং মেয়ে নিউজাইরা সবাই ইউএনডির বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তি হন। সেখানে শিগগিরই শফিকুলের পিএইচডি শেষ হতে যাচ্ছে। মেয়ে নিউজাইরা মনোবিজ্ঞানে একটি ডিগ্রি নিয়ে স্নাতক শেষ করে অন্য ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছেন।

ইনস্ট্রাক্টর ক্রিস্টোফার অ্যাটকিনসনের অধীনে ম্যাকনেয়ার প্রোগ্রামের পরামর্শ এবং সহায়তায় ইউএনডির ভূগোল বিভাগটি খানের কাছে পরিণত হয় দ্বিতীয় পরিবারে। পরিশ্রম আর কাজে লেগে থাকার মাধ্যমে মান্না খান সেখানে দারুণ পরিবেশ তৈরি করেন। তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকেন  ইনস্ট্রাক্টর অ্যাটকিনসন।

ইউএনডি ক্যাম্পাসে শুরুর দিকে সবকিছু তাঁর জন্য এতটা সহজ ছিল না। প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতার পাশাপাশি নিজের সঙ্গেও করতে হয়েছে সংগ্রাম। বাংলা ভাষাভাষী হয়ে ইংরেজি ভাষায় অধ্যবসায় তাঁর জন্য ছিল বেশ দুঃসাধ্য।  তাঁর সম্পর্কে ইউএনডি অধ্যাপক ডগলাস মুনস্কি বলেছেন, ‘রিসাইক্লিং, ট্র্যাশ এবং টিপিং ফির পাশাপাশি বাংলাদেশের পানি, পানিদূষণ এবং নর্থ ডাকোটাতে তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছিলেন মান্না খান। তিনি অনেক আঞ্চলিক এবং জাতীয় ভূগোল বিষয়ক সম্মেলনে ইউএনডির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করেছেন।’

মান্না খানের বিভাগের চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক ডগলাস মুনস্কি বলেছেন, ‘আমার ৪৩ বছরের অধ্যাপনাকালে খানের মতো এমন শিক্ষার্থী কম পেয়েছি। বিভাগের জন্য একটি ব্যতিক্রমী রোল মডেল তিনি।’

দ্বৈত নাগরিক হিসেবে দুই দেশের জন্যই দায়িত্ববোধ অনুভব করেন জানিয়ে মান্না খান বলেন,  ইউএনডি এবং নাসা থেকে শেখা দক্ষতা এবং জ্ঞান বিশ্বব্যাপী কাজে লাগাতে চাই। বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, যেখানে মানুষ জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যার কারণে ভুগছে।

বাংলাদেশি গবেষক মান্না খান তাঁর আসন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধে  ১৯৯৭ সালের বন্যা-পরবর্তী প্রভাবগুলো পরীক্ষা করবেন।

সর্বশেষ খবর