বিজ্ঞানী নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র ভুল আর গতির প্রথম সূত্র সঠিক হলেও তা অসম্পূর্ণ, দ্বিতীয় সূত্র সঠিক কিন্তু তৃতীয় সূত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক যুক্তি মাত্র- এমন সূত্র আবিষ্কারের দাবি করেছেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার আজিজ নগর গ্রামের ৬৫ বছর বয়সি আফসার আলী। তিনি বলছেন, দীর্ঘ গবেষণার পর তিনি এই সূত্র আবিষ্কার করেছেন। তিনি আরও বলেন, জ্বালানি, তাপশক্তি এবং বিদ্যুৎ ছাড়া শুধু বায়ুকে ব্যবহার করে ইঞ্জিন উদ্ভাবন সম্ভব। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) যন্ত্রবিদ হিসেবে ময়মনসিংহে চাকরি করার সময় থেকে ইঞ্জিন আবিষ্কারের নেশা চেপে বসে আফসার আলীর মাথায়। তারপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন সেখান থেকেই।
১৯৯৬ সালে ইঞ্জিন চলাচলের একটি সূত্র আবিষ্কার করেন তিনি। সূত্রটি হচ্ছে চক্রাকারে যান্ত্রিক কৌশলে জড়ের জড়তা ধর্ম ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ামুখী বলকে একই দিকে নির্দিষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণ করে পর্যায়ক্রমে গতি এবং স্থিতি এই ধর্মে রূপান্তর করলেই স্থায়ী গতিশক্তি বা স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক শক্তি বা ইঞ্জিন উৎপন্ন হবে। এই সূত্রের কারিগরি সূত্র হচ্ছে ক্রিয়ামুখী বল সমান সমান প্রতিক্রিয়ামুখী বল। অর্থাৎ ক্রিয়ামুখী বল যত প্রতিক্রিয়ামুখী বল তত। পরে তিনি নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রকে ভুল প্রমাণ করার সূত্রও আবিষ্কারের দাবি করেন। তিনি বলেন, নিউটনের গতির প্রথম সূত্র দ্বারা মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ বল বাতিল প্রমাণিত হয়। যেহেতু প্রথম সূত্র দ্বারা বোঝা যায়, বস্তু নিজে নিজে তার আপন অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে না অতএব কেউ কাউকে আকর্ষণও করতে পারে না। গতির প্রথম সূত্র সঠিক কিন্তু অসম্পূর্ণ কারণ এখানে বাহ্যিক বল কী- তার প্রকাশ নেই। প্রথম সূত্র পূর্ণাঙ্গ হতে হলে বাহ্যিক বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু স্থির ও গতিশীল বস্তু সুষম গতিতে সরল পথে চলতে থাকে এবং স্থিতি ও গতির যথা নিয়মে ক্রমান্বয়ে বা সংঘর্ষে জড়তার দরজা খুলে শক্তি ও বলের প্রভাবে মহাবিশ্ব সচল রয়েছে। অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে বা সংঘর্ষে আকর্ষণ-বিকর্ষণ বা যে কোনো ঘটনা ঘটে। আর বিজ্ঞানী নিউটনের তৃতীয় সূত্র কাল্পনিক।
প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। এটা বাস্তব নয়। কেননা ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া সমান হলে লব্ধিবল নিরপেক্ষ হয়। ফলে শূন্য ধরা হয়। যদিও বলা হয় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দুটি ভিন্ন বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে ফলে বস্তুদ্বয় বিপরীত গতি লাভ করে এটা একটি যুক্তি মাত্র। কেননা দুই বস্তুর মধ্যে ঘটনা ঘটে তা ছাড়া অন্য বস্তুর অস্তিত্ব নেই। মূলত বাস্তব সূত্রটি হচ্ছে প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি ঘর্ষণ, বাধা ও প্রতিক্রিয়া আছে। ঘর্ষণ, বাধা ও প্রতিক্রিয়া সমান হলে বস্তু স্থিতি জড়তায় ও বাধাহীন পথে গতি জড়তায় আপন জড়তা ধর্ম পালন করে। আফসার আলী প্রায় ৩০ বছর ধরে এসব সূত্র নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু কেউই তার এই আবিষ্কারকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেনি। আফসার আলী ১৯৭৫ সালে জগদল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ঠাকুরগাঁও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১৯৭৮ সালে দুই বছর মেয়াদি একটি কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি চাকরিতে যোগদান করেন। আফসার আলীর দাবি নিউটনের ভুল এবং কল্পিত সূত্রগুলোকে সংশোধন করা প্রয়োজন।