শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

কমিউনিটি ট্যুরিজমে আলোকবর্তিকা যে গ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

কমিউনিটি ট্যুরিজমে আলোকবর্তিকা যে গ্রাম

মণিপুরী নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রাম মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়নের ভানুবিল মাঝেরগাঁও। চার বছর আগে এই গ্রামে শুরু হয়েছিল কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম। যাতে এখন যুক্ত রয়েছে গ্রামের ৭৫টি পরিবার। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমে দেশে উদাহরণ হতে পারে এই গ্রাম।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩ জুন সিলেটের তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার নাসমানা খানম এ গ্রামের নিরঞ্জন সিনহা রাজুর বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছিলেন মণিপুরী কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম। শুরুতে ১০ মণিপুরী পরিবার সদস্যদের নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন এ গ্রামের ৭৫টি বাড়িতে গড়ে উঠেছে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এতে একেবারে পারিবারিকভাবে অবস্থান করে একে অন্যের খাবার, সামাজিকতা, সংস্কৃতি আচর-আচরণ, সামাজিক পরিবেশ ইত্যাদি বিনিময় করার সুযোগ পাচ্ছেন। করোনার সময়ে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম অনেকটা থমকে গেলেও আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে এখানকার কার্যক্রম।

কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমে প্রশাসনিক সহায়তার সঙ্গে পর্যটন পুলিশেরও নজরদারি থাকে। এখানে কাউকে অহেতুক প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। মণিপুরী পরিবারের নারীরা বাড়িতে পর্যটকদের সেবাযত্ন ও রান্নার কাজ করেন
যেভাবে শুরু : নিরঞ্জন সিনহার ভগ্নিপতি থৌরেম রবিন ঢাকায় মণিপুরী তাঁতবস্ত্রের একটি কারখানা পরিচালনা করেন। সেখানে থেকে তিনি তাঁতবস্ত্র রপ্তানি শুরু করেন জাপানে। জাপানি ক্রেতারা সেখান থেকে সরাসরি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আদমপুরের ভানুবিল মাঝের গাঁও এসে একেবারে গ্রামীণ পরিবেশে মণিপুরী তাঁতবস্ত্র তৈরি ও এখানকার সামাজিক অবস্থান দেখে মুগ্ধ হন। তাদের এ আসা-যাওয়ার সূত্র ধরে নিরঞ্জন সিনহা নিজ বাড়িতে বিদেশি (জাপানি) পর্যটকদের রেখে তাদের এখানকার পর্যটন এলাকা ঘুরিয়ে দেখাতেন। এরপর বিদেশি পর্যটকরা মণিপুরী বাড়িতে বসবাস করে মণিপুরী খাবার-দাবার, সামাজিকতা, আচার-আচরণ, সংস্কৃতি, আতিথেয়তা ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ হন। আর মণিপুরী পরিবারগুলোও বিদেশি পর্যটকদের খাবার-দাবার, সামাজিকতা, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ ও পরিবেশ সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়। নিরঞ্জনের পরিচিত ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ তাদের প্রয়োজনে ভানুবিল গ্রামে এসে মণিপুরী পরিবারে পর্যটকদের রেখে পর্যটন উন্নয়ন দেখে মুগ্ধ হয়ে বিষয়টি সিলেট বিভাগীয় কমিশনারকে অবহিত করলে বিভাগীয় কমিশনার নাসমানা খানম ২০১৮ সালের ৩ জুন এখানে এসে মণিপুরী কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমের উদ্বোধন করেন। তিনি বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সঙ্গে এটিকে যুক্ত করে প্রথমে ১০টি মণিপুরী পরিবার নিয়ে পর্যটন উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন। এখন ভানুবিল গ্রামে ৭৫টি পরিবারে গড়ে উঠেছে মণিপুরী কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম। ট্যুরিজম বোর্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন ট্যুর গাইডদের সঙ্গেও মণিপুরী কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম যুক্ত হয়েছে। পর্যটকরা এখানে গ্রাম্য পরিবেশে দূষণমুক্ত বেড়ানোর ও খাবার-দাবারের সুযোগ পান। এখানে পর্যটকদের প্রয়োজনে স্বল্পাকারে মণিপুরী সংস্কৃতি তুলে ধরে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজনও করা হয়।

একই সঙ্গে প্রতিটি কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম পরিবারে রয়েছে মণিপুরী তাঁত বস্ত্র, তাঁতবস্ত্র তৈরির প্রদর্শনী তাঁত, মণিপুরী মিনি জাদুঘর। অবসর সময়ে ঘরে বসে বই পড়ার মতো সুব্যবস্থা।

সর্বশেষ খবর