শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
তন্দুরি চা বিক্রি করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা

দুই তরুণের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

বকুল মাহবুব, বেনাপোল

দুই তরুণের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

সংকটাপন্ন চাকরির বাজারে নিজেদের মূল্যবান সময় ব্যয় করার একদমই ইচ্ছা ছিল না তাদের। দুই বন্ধুর দীর্ঘদিনের ইচ্ছা পড়াশোনা শেষ করে নিজেরা কিছু একটা করবেন। এমন সিদ্ধান্ত থেকে বেনাপোলের দুই বন্ধু বেনাপোল বাজারে শুরু করেছেন তন্দুরি চায়ের ব্যবসা। দোকানের নাম দিয়েছেন ‘এমবিএ চাওয়ালা’।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কলেজ থেকে এমবিএ পাস করে আশিক এবং রাশেদ নামে দুই বন্ধু চাকরির পেছনে না ছুটে ‘নিজেদের ভাগ্য নিজেরা গড়ি’ এমন প্রত্যয় নিয়ে ছোট পরিসরে ভারতের আদলে মাটির ভাঁড়ে চা বিক্রি করে মাত্র এক সপ্তাহে বেনাপোলসহ আশপাশের এলাকায় হইচই ফেলে দিয়েছেন।

বেনাপোল বাজারের পুকুরপাড় মসজিদ-সংলগ্ন ফুটপাত এলাকা চা প্রেমিকদের ভিড়ে সন্ধ্যার পরপরই লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির সমন্বয় ঘটিয়ে চলছে জীবনযুদ্ধের প্রস্তুতি। ছোট একটি ভ্যানগাড়ির আদলে তৈরি হয় দোকান ঘর বা এমবিএ চা স্টল। সন্ধ্যার পর জমতে থাকে চায়ের স্টল, চলতে থাকে গভীর রাত অবধি। ফুসরত নেই দুই বন্ধুর। মানুষও শখ করে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে নাম না জানা তন্দুরি চায়ে চুমুক নিতে। লোভনীয় তন্দুরি চায়ের ছোট ভাঁড়ের দাম ১৫ টাকা এবং বড় ভাঁড়ে চা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে।

ভিন্নমাত্রার স্বাদ এবং মাটির পাত্রে চায়ে চুমুক দিতে শুধু বেনাপোল নয়; শার্শা, নাভারন, ঝিকরগাছা থেকে ছুটে আসছেন ঝাঁকে ঝাঁকে  মোটরসাইকেলে চা প্রেমিকের দল। ১২ কিলোমিটার দূরের নাভারন বাজার থেকে চা পান করতে আসা আশরাফ, মানিকসহ কয়েক ব্যক্তি জানান, তারা লোকমুখে জানতে পেরেছেন বেনাপোলের দুই যুবক স্নাতকোত্তর পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে ‘এমবিএ চাওয়ালা’ নামে একটি তন্দুরি চায়ের স্টল দিয়েছেন। চা পান করার পাশাপাশি তাদের দেখতে আসা এবং তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুনতে এখানে আসা।

শার্শা থেকে স্বামীর মোটরসাইকেলে চেপে বেনাপোল পুকুর পাড়ে চা পান করতে আসেন সালমা খাতুন। তিনি দেখতে এসেছেন কেমন করে তন্দুরি চা বানাতে হয়।

উদ্যোক্তাদের একজন আশিকুজ্জামান এ্যানি। তিনি বলেন, সংকটাপন্ন চাকরির বাজারে নিজেদের মূল্যবান সময় ব্যয় করার একদমই ইচ্ছা ছিল না। তাই দুই বন্ধুর দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে নিজেরা কিছু করব। সেই ইচ্ছা থেকেই চাকরির পেছনে না ছুটে আজ ছোট পরিসরে তন্দুরি চায়ের স্টল দিয়েছি। দোকানের নাম দিয়েছি এমবিএ চা ওয়ালা। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের দেখে অনুপ্রেরণা পেয়ে নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে কিছু একটা করতে পারে।

অন্য যুবক রাশেদ বলেন, প্রথমে একটু লজ্জা করত। এখন সাধারণ মানুষের উৎসাহ পাচ্ছি। মনটা বড় হয়ে গেছে। মাত্র ১২ দিন হলো চায়ের স্টলটি শুরু করেছি। তাতে বেশ সাড়া পাচ্ছি মানুষের। বেচাবিক্রিও ভালো। ভবিষ্যতে এটি আরও বড় পরিসরে করার ইচ্ছা রয়েছে। তাদের বিশ্বাস,  এলাকার অন্য যুবকরাও পড়াশোনা শেষ করে নিজেরা কিছু করার চেষ্টা করবে।

সর্বশেষ খবর