শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিনামূল্যে রক্ত ও চিকিৎসা সহায়তা মিলছে ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংকে

তানভীর আহমেদ

বিনামূল্যে রক্ত ও চিকিৎসা সহায়তা মিলছে ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংকে

রক্ত সংগ্রহ করে দেওয়ার পাশাপাশি ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক এখন অসহায় মানুষের যে কোনো ধরনের চিকিৎসায় সহযোগিতা করছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজসেবা সম্পাদক শেখ স্বাধীন মো. শাহেদ (ডানে) শুরু থেকেই এই উদ্যোগের সঙ্গে রয়েছেন

ছাত্রলীগের ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংকে মিলছে বিনামূল্যে রক্ত ও চিকিৎসা সহায়তা। সংগঠনটির নেতা-কর্মী সবাই এর মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবা প্রদান করছেন। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংকের উদ্বোধন করেন। করোনা মহামারির সে সময় ঘরে বসেই যেন রক্ত (ব্লাড ডোনার) খুঁজে পাওয়া যায় সে উদ্দেশ্যেই এর যাত্রা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজসেবা সম্পাদক শেখ স্বাধীন মো. শাহেদ শুরু থেকেই এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মীরাই রক্তের ডোনার হিসেবে এগিয়ে এসেছেন। দলের প্রায় ৫০ লাখ সদস্য সরাসরি এই ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবার কাজটি করছেন। সাধারণ জনগণও এই মহতী কাজের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। ছাত্রলীগের সমাজসেবা সেলে ব্লাড ডোনারদের বড় তালিকা রয়েছে। এই ব্লাড ব্যাংকের পথচলা শুরু হয়েছিল রক্ত (ব্লাড ডোনার) খুঁজে দেওয়ার জন্য। এখন যারা অসহায়, চিকিৎসাসেবা পেতে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন তাদেরও এর মাধ্যমে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়।’

রক্ত সংগ্রহ করে দেওয়ার পাশাপাশি ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক এখন অসহায় মানুষের যে কোনো ধরনের চিকিৎসা-সংক্রান্ত সহযোগিতা করছে। হাসপাতালে রোগীকে পৌঁছে দেওয়া, ভর্তি করানোসহ সব ধরনের সেবা বিনামূল্যে করে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে সিট না পাওয়া অথবা কোনো ধরনের ভোগান্তির কথা জানালে এগিয়ে আসছে ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক।

সীতাকু- ট্র্যাজেডির সময় ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখে। সে সময় ৯২ ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে দেন তারা। বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয় পথশিশু মনির। চিকিৎসার অভাবে পঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয় তার। ছাত্রলীগের ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়। সেই মনির এখন পুরোপুরি সুস্থ। রাতে ঢাকা মেডিকেলে অসুস্থ এক প্রসূতি রক্তের অভাবে মৃত্যুর মুখোমুখি হন। দরিদ্র রোগীর পরিবার ছাত্রলীগের ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংকের কথা জানতে পেরে সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ছাত্রলীগের এক কর্মী রক্ত দেন। ভোরে সেই প্রসূতি জন্ম দেন কন্যাশিশুর। নবজাতকের বাবা-মা কন্যার নাম রাখেন ‘হাসিনা’। কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা, বিরল রোগে আক্রান্ত তাসফিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোসহ ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংকের অনেক কাজের উদাহরণ রয়েছে। এসব নিয়ে শেখ স্বাধীন মো. শাহেদ বলেন, ‘পথশিশু জীবন দুর্ঘটনায় পড়ার খবর পেয়েই এগিয়ে আসে ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক। চিকিৎসার পর সে সুস্থ হয়ে ওঠে। তাকে স্কুলে ভর্তি করে দিই আমরা। সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। করোনাকালে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সেবা-সংক্রান্ত সুবিধা পেতে সহায়তা করেছি আমরা। সে সময় রোগীদের কাছে অক্সিজেনভর্তি সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়ে ‘বঙ্গমাতা অক্সিজেন সার্ভিস’ প্রাণ বাঁচিয়েছে অনেকের। স্কুলশিক্ষার্থীদের রক্তদানে উৎসাহিত করতে নানা উপহার দিয়েছি। মাকসুদা নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মীর চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেছি আমরা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর আত্মীয়কে হাসপাতালে ভর্তি করাসহ অন্যান্য চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছি। ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক এভাবেই মানুষের বিপদে এগিয়ে এসেছে।’ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সমাজসেবা সেলের পাশাপাশি প্রত্যেকটি মেডিকেল ইউনিটের ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংকের পরিচালনা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। এই ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংকের মাধ্যমে এ পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ১ হাজার ৬০৪ রোগীকে রক্ত প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও অর্ধশত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া, চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া, পথশিশু ও অসহায়দের কাছে চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

শেখ স্বাধীন মো. শাহেদ জানান, ব্লাড ব্যাংকের এই সেবা কার্যক্রম ভবিষ্যতে আরও গতিশীল হবে। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রধান রক্ত সংগ্রহ ও প্রদান (ব্লাড ডোনার) সেবা প্রদানকারীদের একটি হতে চায় ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক। অসহায়দের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান এবং সবাই যেন ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংকের সুফল ভোগ করতে পারেন সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি আমরা।’ ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংকটি ব্যবহার করা যাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ওয়েবসাইট ও নিজস্ব অ্যাপের মাধ্যমে।  ফোনে বা সরাসরি যোগাযোগ করেও ব্লাড ডোনার ও অসহায় মানুষের জন্য চিকিৎসা সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর