পেশায় তিনি একজন স্কুলশিক্ষক। শিক্ষকতা করে যে বেতন পান তার একটি অংশ তিনি পরিবেশ রক্ষার জন্য গাছ লাগানোর কাজে ব্যয় করেন। ছয় বছর ধরে ফরিদপুরের বিভিন্ন সড়কের পাশে এবং স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় প্রায় ৬০ হাজার গাছ লাগিয়েছেন। তার এমন উদ্যোগ বেশ সাড়া ফেলেছে ফরিদপুরবাসীর মাঝে। প্রকৃতিপ্রেমিক ব্যক্তিটি হলেন ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম। ফরিদপুর শহরের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে নুরুল ইসলামের রোপিত গাছ নেই। সময় পেলে নিজেই বিভিন্ন ফলদ, বনজ, ঔষধি, বটবৃক্ষের চারা নিয়ে ছুটে যান বিভিন্ন স্থানে। ইতোমধ্যে তিনি বিভিন্ন প্রজাতির ৬০ হাজার গাছের চারা রোপণ করেন। তার লাগানো এসব গাছ এখন শোভা পাচ্ছে শহরের আনাচে-কানাচে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় শিক্ষক নুরুল ইসলাম তালের বীজ রোপণের উদ্যোগ নিয়েছেন। গত বছর ১০ হাজার বীজ রোপণ করেছেন।
এ বছর গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ২০ হাজার তালের বীজ সংগ্রহ করেন। এসব তালের বীজ শহরের কোর্ট কম্পাউন্ড, স্লুইসগেট, বেড়িবাঁধ, মহাসড়কের পাশে রোপণ করছেন। এ ছাড়া হারিয়ে যেতে বসা দেশীয় খেজুর, জাম, সুপারিসহ বিভিন্ন গাছের বীজ রোপণ অব্যাহত রেখেছেন। ফলদ, বনজ, ঔষধি গাছের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চারাও লাগিয়েছেন শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। মহামারি করোনায় যখন মানুষ ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস পর্যন্ত পায়নি, ঠিক সেই সময়েও শিক্ষক নুরুল ইসলাম তার মোটরসাইকেলের পেছনে গাছের চারা নিয়ে শহর থেকে দূরের কোনো ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বৃক্ষরোপণ করেছেন। মানব জাতির পাশাপাশি পাখিদের কথা চিন্তা করেও শহরের টেপাখোলা টিবি হাসপাতালের মোড় থেকে শুরু করে ভাজনডাঙ্গা পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধের ওপর বটবৃক্ষ রোপণ করেছেন।
যেন বটবৃক্ষে পাখি বাসা বাঁধতে পারে এবং মানুষও এর ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে। তার এমন কর্মযজ্ঞে শরিক হতে চান অনেকে। কিন্তু কখনো কারও কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেননি এই শিক্ষক। তবে তাঁর সঙ্গে গাছ লাগিয়ে খুশি হয়েছেন অনেকে।
নুরুল ইসলাম নিজে গাছ রোপণের পাশাপাশি তার সন্তান ও স্কুল শিক্ষার্থীদেরও এই বৃক্ষ রোপণে উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন। বৃক্ষপ্রেমিক নুরুল ইসলাম শুধু গাছ রোপণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নন। প্রতি মাসে তিনি অন্তত পক্ষে একটি ভালো কাজ করবেন বলেও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। আর তাই এই বৃক্ষ রোপণের পাশাপাশি তিনি প্রতি মাসে অসহায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে খাতা-কলমসহ শিক্ষা উপকরণ দিয়ে থাকেন। আবার কোনো সময় নিম্নআয়ের মানুষকে চাল, ডাল, তেলসহ বাজার করে দেন। আবার কোনো ভিক্ষুক বা রিকশাচালককে নিয়ে তিনি বড় কোনো চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খেতে বসেন। নূরুল ইসলাম জানান, ছোটবেলা থেকেই গাছ লাগানোর প্রতি একটা আগ্রহ রয়েছে। বাবার সঙ্গে বাড়ির আঙিনায় গাছ লাগাতেন। সেই থেকে গাছ রোপণের নেশায় পরিণত করেছেন নিজেকে। নুরুল ইসলাম বলেন, তার বেতনের একটি অংশ গড়ে প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকার গাছ রোপণ ও পরিচর্যার কাজে ব্যয় করেন। গাছকে তিনি সন্তানের মতো ভালোবাসেন, গাছের পরিচর্যা করেন। তার এই কাজে পরিবারের কেউ কখনো বাধা দেয়নি; বরং তাকে সবাই উৎসাহ জুগিয়েছেন।