উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের আশায় দেশ ছেড়েছিলেন প্রকৌশলী ফেরদৌস ওয়াহিদ। ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে গবেষণার সুযোগ পান তিনি। প্রথম বছরেই কঠোর অধ্যবসায়ে মন জয় করেন শিক্ষকদের। দুই বছরের মাস্টার্স শেষ করেন এক বছরেই। শুরু করেন পিএইচডি। চলতে থাকে গবেষণা। কঠোর সাধনার ফল অবশেষে পেতে শুরু করেছেন ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পতাকা সমুন্নত করেছেন তিনি।
বাংলাদেশি তরুণ প্রকৌশলী মো. ফেরদৌস ওয়াহিদ যুক্তরাষ্ট্রে অর্জন করেছেন সেরা গবেষকের স্বীকৃতি। ‘ওয়াকিং কলাম’ বিষয়ক গবেষণার জন্য তিনি পেয়েছেন Structural Engineers Association of Ohio (SEAoO) কর্তৃক প্রদত্ত মর্যাদাপূর্ণ Graduate Education Award 2025। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের সেরা গ্র্যাজুয়েট গবেষকদের মধ্য থেকে কেবল একজন শিক্ষার্থী এই পুরস্কার অর্জনের সুযোগ পান। কঠোর যাচাই-বাছাই শেষে এ বছর সেই সম্মান অর্জন করেছেন ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির সিভিল, এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওডেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পিএইচডি গবেষক ফেরদৌস। সম্প্রতি ওহাইওর কলম্বাসে অবস্থিত দি ব্ল্যাকওয়েল ইন হোটেলে আয়োজিত বার্ষিক সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে সনদপত্র ও প্রাইজমানি তুলে দেন SEAoO প্রেসিডেন্ট বেনজামিন জে. ফন ডি ওয়েগে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকান কনক্রিট ইনস্টিটিউটের (ACI) সাবেক প্রেসিডেন্ট কেনেথ ক্লার্ক হোভার ও উইলিয়াম ই. রাশিং, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গবেষক ও ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিরা। তারা সবাই ফেরদৌসের গবেষণার প্রশংসা করেন এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা জানান। গবেষণা সম্পর্কে ফেরদৌস বলেন, ‘ভূমিকম্প প্রতিরোধী অবকাঠামো গড়ে তোলা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জরুরি। বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় এই দেশে ভয়াবহ ভূমিকম্প হতে পারে। আমাদের সামনে এমন অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে যাতে ধ্বংসের মাত্রা কমিয়ে আনা যায়।’ গবেষণার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি পাওয়ার পরই যুক্তরাষ্ট্রের একটি নামকরা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম ফেরদৌসকে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছে। লোভনীয় বেতনের এই প্রস্তাব পাওয়ার পরও গবেষণাতেই মনোযোগী থাকতে চান ফেরদৌস। নরসিংদীর সন্তান ফেরদৌস ওয়াহিদের শিক্ষা জীবন শুরু জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদরাসা থেকে। ২০০৫ সালে দাখিল, ২০০৯ সালে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং ২০১৫ সালে গাজীপুরের ডুয়েট থেকে বিএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ফেরদৌস প্রফেসর হালিল সেজেন ও ড. আলি নাসিরির তত্ত্বাবধানে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার গবেষণার বিষয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সমন্বয়ে কাঠামোর নকশা আরও সহজ ও দক্ষ করে তোলা। গবেষণার পাশাপাশি তিনি ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করছেন।