নেত্রকোনার সাদা মাটির পাহাড়ের চিনামাটি ২০২১ সালে পেয়েছে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি। এবার এ স্বীকৃতি পেল সুস্বাধু খাবার ‘বালিশ মিষ্টি’। শত বছরের পুরোনো এই বালিশ মিষ্টি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় খুশি নেত্রকোনাবাসী। জানা গেছে, আনুমানিক ১৯২০ সালের দিকে গয়ানাথ ঘোষ নামের একজন মিষ্টির দোকানদার ছিলেন শহরের অজহর রোডে। তিনি নানান মিষ্টির সঙ্গে কোল বালিশের আকারে এক মিষ্টির আবিষ্কার করলেন। স্থানীয়দের মতামতের ভিত্তিতে নাম দিলেন বালিশ মিষ্টি। এরপর এক পয়সা দুই পয়সা এমন দামে বিক্রি করতেন। মানুষও খেয়ে দারুণ আনন্দ পেত। তখন থেকে এই মিষ্টি নিয়ে রসালো ছড়া কবিতা তৈরি হয়। যার একটি এখনো মুখে মুখে রয়েছে সবার। যেমন- ‘জাম গোল্লা পেয়ে শ্বশুর চটে করল নালিশ, ইচ্ছে ছিল আনবে জামাই গয়ানাথের বালিশ।’ একপর্যায়ে এই বালিশ মিষ্টি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল, বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের উপন্যাস এবং কাব্যগ্রন্থেও তা স্থান পেয়েছে। পরবর্তীতে এই মিষ্টির মূল উদ্ভাবক গয়ানাথ ঘোষ দোকানটি কারিগরদের কাছে বিক্রি করে চলে যান ভারতে। কিন্তু সেই নামেই এই মিষ্টি দেশব্যাপী পরিচিত হয়ে পড়ে। জেলায় এখন বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে বালিশ মিষ্টি পাওয়া যায়। কিন্তু এখন আর এক পয়সা দুই পয়সার দাম নেই। এখন এটি সর্বনিম্ন ২০-৩০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকার পর্যন্ত হয় একেকটি মিষ্টি। যার যেমন চাহিদা তেমনি করে দেয় দোকানিরা।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গেল কয়েক বছর ধরে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেতে আবেদন করা হচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সাবেক সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম এটির আদ্যোপান্ত তুলে ধরে আবেদন করেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন মাধ্যমে এর ইতিহাস উঠে আসার তথ্য সংগ্রহ করে সংযুক্ত করে দেন। এরপর এ বছর জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল নেত্রকোনার ঐতিহ্যবাহী বালিশ মিষ্টি। বালিশ মিষ্টি তৈরির মূল উপকরণ হলো- দুধ, চিনি ও ছানা। কারিগররা জানান, প্রথমে দুধ থেকে তৈরি করা হয় ছানা। ছানা ও ময়দা দিয়ে ম-, আর ম- দিয়েই বানানো হয় বালিশ। সবশেষে তা চিনির রসে ভেজানো হয়। তবে বালিশকে মুখরোচক করতে প্রয়োগ করা হয় বিশেষ কিছু কৌশল। পরিবেশনের সময়ও বালিশের ওপর এক ধরনের সুস্বাদু ঘন ক্ষীরের (দুধের মালাই) প্রলেপ দেওয়া হয়। নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান জানান, অনুমোদন হয়ে গেছে। এখন অফিশিয়ালি চিঠি পেলেই এই জিআই পণ্যের সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে যাব।