একজন মানবিক চিকিৎসক

উচ্চ রক্তচাপ একটি অসংক্রামক ব্যাধি যাকে ‘নীরব ঘাতক ব্যাধি’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়। কারণ উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ না করলে বা করতে না পারলে হৃৎপি-, মস্তিষ্ক, কিডনি, চোখ এবং রক্তবাহিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে ২০০৮ সালের ১৪ নভেম্বর রংপুরের ধাপ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় হাইপারটেনশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার। প্রতিষ্ঠা করেছেন অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন। তাঁর মা-বাবার স্মরণে ‘ওয়াসিম-ওয়ালেদা বহুমুখী কল্যাণ ফাউন্ডেশন’-এর নামকরণ করেন। এরই অধীনে এই রিসার্চ সেন্টারের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বর্তমানে তিনি বগুড়ার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিজের মা উচ্চরক্তচাপজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে তাঁর মায়ের মতো অনেকেই মারা যান। অনেকে আবার টাকার অভাবে চিকিৎসাও নেন না। এসব চিন্তা থেকে উচ্চ রক্তচাপের  রোগীদের জন্য কিছু করার চিন্তা ছিল তাঁর। সেই চিন্তা থেকেই তিনি হাইপার সেন্টার নামে সেবামূলক একটি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। ওই কেন্দ্রে ৪০ টাকার নামমাত্র ফি নিয়ে ১৭ বছর ধরে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তার জাকির হোসেন। বহির্বিভাগের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে সভা, সেমিনার, র‌্যালি ইত্যাদি আয়োজন করে থাকেন এই প্রতিষ্ঠানটি। স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক নিয়মিত পত্রিকা ‘হাইপারটেনশন বার্তা’ প্রকাশ করছেন। ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফ্রি ব্লাড প্রেসার এবং ডায়াবেটিস চেক-আপ ক্যাম্প, উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বিনামূল্যে সর্বাধিক সংখ্যক উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এনসিডি প্যাশেন্ট অ্যারোলমেন্ট ক্যাম্পের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস ও ব্লাডপ্রেসার চেকআপ করা এবং শনাক্তকৃত হাই প্রেসার ও ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করে রংপুর বিভাগের সাধারণ মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন ডা. জাকির হোসেন। এই সেন্টারে বিভিন্ন কর্নার রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ কর্নার, ডায়াবেটিস কর্নার, কাউন্সিলিং কর্নার, ফিজিওথেরাপি কর্নার, ভ্যাকসিনেশন কর্নার, নেবুলাইজেশন কর্নার, হাইপারটেনশন সেন্টার ল্যাব, সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম, উঠান বৈঠক, এনসিডি প্যাশেন্ট অ্যানরোলমেন্ট ক্যাম্প, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, রিসার্চ সেল একাডেমিক কোর্স রয়েছে এই সেন্টারে। অধ্যাপক ডা. মো. জাকির হোসেন এখন পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করেছেন। শুধু হাইপারটেনশন এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরাই তার এই সেন্টারে নিবন্ধিত হতে পারেন। তবে নিবন্ধিত রোগীরা হাইপারটেনশন এবং ডায়াবেটিস ছাড়াও অন্যান্য রোগের চিকিৎসা পেয়ে থাকেন। নিবন্ধন চাঁদা ৫০ টাকা (বই ও পরামর্শসহ)। পরবর্তীতে প্রতিবার চিকিৎসা পরামর্শ ৪০ টাকা দিতে হয়। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার জনকে।  নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার জনকে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ চেকআপ করা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার জনকে। উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কিত সেমিনার করেছে ৩৩৮টি, বৈজ্ঞানিক সেমিনার ৩৫টি, ফ্রি ব্লাড প্রেসার চেকআপ ক্যাম্প ২৪৯টি, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ৯৬টি, ফ্রি হাইপারটেনশন শনাক্তকরণ ও তথ্যকেন্দ্র তিনটি, বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস পালন করেছে ১৬টি বিশ্ব লুপাস দিবস চারটি বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস চারটি, বিশ্ব আর্থাইটিস দিবস পালন দুটি, উঠান বৈঠক ৭৭টি, বিনামূল্যে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ স্ক্রিনিং কাউন্সেলিং ও ট্রিটমেন্ট ক্যাম্প ২৭৯টি চিকিৎসাসেবায় অসামান্য অবদান রাখায় বেশ কিছু পদক পেয়েছে হাইপারটেনশন অ্যান্ড রিসার্চ।