চাঁদে সময়ের আলাদা মাপকাঠি নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি বিশেষ করে নাসার আর্টেমিস প্রকল্পের অধীনে চাঁদে আন্তর্জাতিক উপস্থিতি বৃদ্ধির প্রস্তুতির অংশ। এপ্রিল ২০২৪-এ হোয়াইট হাউস থেকে একটি একীভূত চাঁদের সময় মাপকাঠি গঠনের আহ্বান জানানো হয়। এই সময় নির্ধারণ ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযান এবং চাঁদে মানুষের স্থায়ী বেস তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
জাতীয় মানদণ্ড ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের (NIST) গবেষক বিজুনাথ পাতলা ও নীল অ্যাশবির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, চাঁদে ঘড়ি প্রতিদিন পৃথিবীর তুলনায় ৫৬ মাইক্রোসেকেন্ড দ্রুত চলে। এই পার্থক্যের পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, চাঁদের কম মাধ্যাকর্ষণ ঘড়ি দ্রুত চলতে সহায়তা করে। দ্বিতীয়ত, চাঁদের পৃথিবীর তুলনায় গতিশীল অবস্থান সময়কে কিছুটা ধীর করে।
গবেষক পাতলা জানান, এই ছোট পার্থক্য হলেও তা উপেক্ষা করা যায় না। এমনকি ৫৬ মাইক্রোসেকেন্ডের এই সময়চ্যুতি দৈনিক ১৭ কিলোমিটার ন্যাভিগেশন ত্রুটি তৈরি করতে পারে। ফলে সঠিক ন্যাভিগেশন নিশ্চিত করতে এই সময়ের পার্থক্য দূর করা অত্যন্ত জরুরি।
নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার শেরিল গ্রামলিং ব্যাখ্যা করেছেন যে, সঠিক সময় নির্ধারণ ভবিষ্যৎ মিশনের নিরাপত্তা ও অপারেশন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলেন, চন্দ্রাভিযানে রোভার, ল্যান্ডার এবং মহাকাশচারীদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান ১০ মিটারের মধ্যে নির্ধারণ করতে হবে। এমনকি ন্যানোসেকেন্ডের ভুলও গ্রহণযোগ্য নয়।
মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্গেই কোপেইকিন এবং মার্কিন নেভাল অবজারভেটরির জর্জ কাপলানের পৃথক গবেষণায়ও চাঁদের সময়চ্যুতির এই ৫৬ মাইক্রোসেকেন্ড নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা দেখেছেন, সূর্য এবং বৃহস্পতির আকর্ষণ বল থেকে আসা সামান্য সময়চ্যুতিও উচ্চ-নির্ভুলতার জন্য বিবেচনা করতে হবে।
বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেছেন, চাঁদের সময় নির্ধারণ একটি জটিল বিষয়। তবে এটি চাঁদের ক্রমবর্ধমান অভিযানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও বর্তমানে এই নির্ভুলতা তেমন প্রয়োজনীয় নয়, তবে এখনই প্রস্তুতি নেওয়া হলে ভবিষ্যতের উন্নত লুনার অপারেশনগুলো সহজ হবে।
চাঁদে একটি নির্ভরযোগ্য সময়ব্যবস্থা তৈরি হলে ভবিষ্যৎ অভিযান এবং গবেষণার জন্য তা অপরিহার্য ভূমিকা পালন করবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল