নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ সম্প্রতি এমন কিছু বিস্তারিত ছবি তুলেছে, যা আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলিকণা ও গ্যাসের জটিল স্তরকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। সুপারনোভা বিস্ফোরণের আলো থেকে পাওয়া এই ছবিগুলো প্রথমবারের মতো এই ধূলিকণার প্রকৃত থ্রিডি মানচিত্র তৈরি করতে সাহায্য করছে বলে জানিয়েছে নাসা।
৩৫০ বছর আগে এক তারকার বিস্ফোরণ থেকে উৎপন্ন আলো দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে চারপাশের ধূলিকণা ও গ্যাসকে আলোকিত করেছে। এই বিস্ফোরণ থেকে নির্গত এক্স-রে ও অতিবেগুনি আলো আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমকে আলোড়িত করে, যা ওয়েব টেলিস্কোপের উন্নত ইনফ্রারেড প্রযুক্তির মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে দৃশ্যমান হয়েছে।
ক্যালটেকের গবেষক এবং প্রধান তদন্তকারী জেকব জেনসন বলেন, ছবিগুলোতে এই মাত্রার বিস্তারিত দেখাটা আমাদের জন্য বিস্ময়কর ছিল।
ওয়েবের তোলা ছবিতে দেখা গেছে, ধূলিকণার স্তরগুলো পেঁয়াজের স্তরের মতো। স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের জোশ পিক বলেন, আমরা পেঁয়াজের স্তরের মতো স্তর দেখতে পাচ্ছি। আমরা মনে করি, প্রতিটি ঘন ধূলিকণা ও গ্যাসের অঞ্চল এরকমই দেখতে, তবে আগে কখনো আমরা এই ভেতরের অংশ দেখতে পারিনি।
এই ছবিতে ধূলিকণার পাতলা স্তর দেখা গেছে, যা শত শত অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিট জুড়ে বিস্তৃত। এর আগে এই ধরনের গঠন বিজ্ঞানীদের চোখে ধরা পড়েনি, যা আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম সম্পর্কে পূর্ব ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
ওয়েবের ছবিতে চৌম্বক ক্ষেত্রের জটিল প্রভাবও প্রকাশ পেয়েছে। কিছু জায়গায় চৌম্বক ক্ষেত্রকে "দ্বীপের" মতো পৃথক অবস্থানে দেখা গেছে, যা একঘেয়ে আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমের ভেতরে বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করছে।
এই আলো প্রতিফলন প্রথম নাসার অবসরপ্রাপ্ত স্পিটজার টেলিস্কোপে ধরা পড়েছিল। তবে ওয়েব টেলিস্কোপের উন্নত রেজল্যুশন বিজ্ঞানীদের কাছে আরও স্পষ্ট এবং বিস্ময়কর চিত্র তুলে ধরেছে। সুপারনোভা বিস্ফোরণের আলো ধূলিকণার সাথে মিথস্ক্রিয়া করে তাদের উষ্ণ এবং আলোকিত করেছে, যা বিস্তৃত আকারে দৃশ্যমান হয়েছে।
স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের আরমিন রেস্ট বলেন, থ্রিডি মানচিত্র তৈরির কাজটা অনেকটা মেডিক্যাল সিটি স্ক্যানের মতো। আমরা তিনটি ভিন্ন সময়ে তোলা ছবি ব্যবহার করছি, যা আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে বোঝার সুযোগ দিচ্ছে।
ওয়েবের পরবর্তী পর্যবেক্ষণে এই আলো প্রতিফলনের স্পেকট্রোস্কোপিক বিশ্লেষণ করা হবে। এতে নাসার মিড-ইনফ্রারেড ইন্সট্রুমেন্ট (MIRI) ব্যবহার করে ধূলিকণার উপাদানগত পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে।
নাসার প্রশাসক বিল নেলসন এই আবিষ্কারের প্রশংসা করে বলেন, প্রতিটি ছবি ও আবিষ্কার শুধু মহাবিশ্বের মহিমাই নয়, বরং নাসার দক্ষতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতির প্রতিচ্ছবি। এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল