৩৫ আলোকবর্ষ দূরে এক বিস্ময়কর আবিষ্কারে উত্তেজনায় ভাসছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। 'L 98-59' নামে পরিচিত একটি ক্ষুদ্র, শীতল নক্ষত্রকে ঘিরে পাঁচটি পাথুরে গ্রহের সন্ধান মিলেছে। যার মধ্যে একটি গ্রহকে বলা হচ্ছে 'সুপার-আর্থ'। গবেষকদের মতে, এই গ্রহে তরল পানি থাকার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে সৌরজগতের বাইরে প্রাণের অস্তিত্বের বিষয়ে নতুন করে আশাবাদী হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীর তুলনায় তুলনামূলকভাবে ছোট এই নক্ষত্র L 98-59-এর চারপাশে আবিষ্কৃত হয়েছে পাঁচটি গ্রহ। তাদের মধ্যে তিনটি—L 98-59 b, c এবং d—এর অস্তিত্ব প্রথম শনাক্ত হয় নাসার Transiting Exoplanet Survey Satellite (TESS) এর মাধ্যমে। নক্ষত্রের উজ্জ্বলতায় সূক্ষ্ম পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই গ্রহগুলো চিহ্নিত করা হয়।
পরবর্তী সময়ে আরও গভীর পর্যবেক্ষণে, চতুর্থ গ্রহ L 98-59 e এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে পঞ্চম গ্রহ L 98-59 f-এর অবস্থান নিশ্চিত করেন বিজ্ঞানীরা। এই পঞ্চম গ্রহটিকেই 'সুপার-আর্থ' হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এটি পৃথিবীর তুলনায় প্রায় তিন গুণ ভারী এবং এর প্রাপ্ত সৌরশক্তির পরিমাণও প্রায় পৃথিবীর সমান। এর ফলে সেখানে তরল পানির উপস্থিতি থাকার বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে, যা প্রাণ ধারণের অন্যতম শর্ত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই 'সুপার-আর্থ' শুধু একটি গ্রহ নয়, বরং সৌরজগতের বাইরের জীবনের সম্ভাব্য পরীক্ষাগার। L 98-59 গ্রহপুঞ্জের বৈচিত্র্যও বিস্ময়কর—L 98-59 b পৃথিবীর চেয়েও ছোট, অন্যদিকে c এবং d-তে বিশাল সমুদ্র কিংবা আগ্নেয়গিরি থাকতে পারে।
এই গ্রহপুঞ্জ নিয়ে কাজ করছে নাসার শক্তিশালী James Webb Space Telescope (JWST)। এটি L 98-59 f-এর বায়ুমণ্ডল, রাসায়নিক গঠন এবং প্রাণ ধারণের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। গবেষকরা আশা করছেন, TRAPPIST-1 এর মতো অন্যান্য বহু-গ্রহবিশিষ্ট ব্যবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে এই L 98-59 সিস্টেম ভবিষ্যতে জীবনের উৎপত্তি ও বিস্তার নিয়ে বহু প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করবে।
শেষ পর্যন্ত, আমরা কি মহাবিশ্বে একা? —এই চিরকালীন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সহায়ক হতে পারে এই 'সুপার-আর্থ' ও তার আশেপাশের রহস্যময় গ্রহমালা।
সূত্র: গালফ নিউজ
বিডি প্রতিদিন/আশিক