সূর্য থেকে অনেক দূরে অবস্থান করলেও সৌরজগতের সপ্তম গ্রহ ইউরেনাস নিজ থেকেই তাপ উৎপন্ন করে। সম্প্রতি এমনই তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায়। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারস জার্নালে।
গবেষণার নেতৃত্ব দেন ভূবিজ্ঞান ও বায়ুমণ্ডলবিদ্যা বিভাগের গবেষক ড. জিন্যুয়ে ওয়াং। তিনি জানান, ইউরেনাস নিজে থেকে যে পরিমাণ তাপ নির্গত করে, তা সূর্য থেকে যে তাপ পায় তার তুলনায় প্রায় ১২.৫ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ, এটি শুধুমাত্র সূর্যের ওপর নির্ভরশীল নয়।
১৯৮৬ সালে নাসার ভয়েজার-২ মিশনের সময় ধারণা করা হয়েছিল ইউরেনাস অভ্যন্তরীণভাবে প্রায় নিষ্ক্রিয় এবং তুলনামূলকভাবে শীতল। কিন্তু নতুন গবেষণা সে ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে।
ড. ওয়াং ব্যাখ্যা করেন, ইউরেনাস এখনো তার গঠনের সময়কার কিছু অবশিষ্ট তাপ ধীরে ধীরে বের করে দিচ্ছে। এই তথ্য গ্রহটির উৎপত্তি ও বিবর্তন বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে ইউরেনাসের এই তাপ উৎপাদনের মাত্রা বৃহস্পতি, শনি কিংবা নেপচুনের তুলনায় কম। কারণ এই গ্রহগুলো সূর্য থেকে যতটা তাপ পায়, তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ তাপ নিজেরাই উৎপন্ন করে।
গবেষকেরা বলেন, ইউরেনাসের দীর্ঘ ঋতুচক্র—যার প্রতিটি ঋতু প্রায় ২০ বছর স্থায়ী হয়—তাপ নির্গমনের ওপর প্রভাব ফেলে। তাদের মতে, ভয়েজার ২-এর সময় সূর্যঘটিত কোনো আবহাওয়াগত পরিবর্তনের কারণে তখনকার মাপজোখে বিভ্রান্তি হতে পারে।
এদিকে, ইউরেনাসের উপগ্রহ মিরান্ডা নিয়েও বিজ্ঞানীদের আগ্রহ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ও নর্থ ডাকোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, মিরান্ডার ভেতরে পানির অস্তিত্ব থাকতে পারে—যা প্রাণের অস্তিত্ব বা ভবিষ্যৎ অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণার সহ-লেখক এবং হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক লিমিং লি বলেন, এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা কেবল ইউরেনাস নয়, বরং পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ু ব্যবস্থাও আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি।
এছাড়া তিনি জানান, এই আবিষ্কার নাসার ভবিষ্যৎ ইউরেনাস মিশনের পরিকল্পনা তৈরিতেও সহায়ক হবে। এই মিশনটি ২০২৩–৩২ দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির শীর্ষ অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল