চাঁদের মাটি থেকেই পানি, অক্সিজেন ও জ্বালানি তৈরি করা সম্ভব—এমনই যুগান্তকারী দাবি করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে, একটি নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে চাঁদের মাটি থেকে পানি বের করে তা ব্যবহার করে কার্বন ডাই-অক্সাইড ভেঙে অক্সিজেন ও জ্বালানির প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করা সম্ভব।
চীনের হংকংয়ের শেনঝেন ক্যাম্পাসের চাইনিজ ইউনিভার্সিটির গবেষক লু ওয়াং বলেন, আমরা কল্পনাও করিনি চাঁদের মাটির এমন ‘জাদুকরী’ সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রযুক্তি এক ধাপে পানি উত্তোলন এবং সূর্যালোক থেকে তাপ নিয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড ভেঙে প্রয়োজনীয় গ্যাস উৎপাদনের কাজটি সম্পন্ন করতে সক্ষম।
গবেষণায় বলা হয়, অতীতে চাঁদের মাটি থেকে পানি সংগ্রহের চেষ্টা করা হলেও এতে প্রচুর শক্তি খরচ হতো এবং একে জ্বালানি বা অক্সিজেন তৈরিতে ব্যবহার করা যেত না। নতুন পদ্ধতিতে এই সমস্যাগুলো এড়ানো সম্ভব হবে।
এই উদ্ভাবনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানগুলোতে পৃথিবীর ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমানো যাবে। কারণ, আগে চাঁদে বসতি গড়ার পরিকল্পনায় সবচেয়ে বড় বাধা ছিল পানিসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ পাঠানোর খরচ। গবেষণা অনুযায়ী, চাঁদে এক গ্যালন পানি পাঠাতে খরচ পড়ে প্রায় ৮৩ হাজার মার্কিন ডলার, অথচ একজন মহাকাশচারী প্রতিদিন গড়ে ৪ গ্যালনের মতো পানি ব্যবহার করেন।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে চাঁদের মাটি থেকে সরাসরি পানি বের করে তা মহাকাশচারীদের নিঃশ্বাসের মাধ্যমে উৎপন্ন CO₂ ভেঙে কার্বন মনোক্সাইড (CO) ও হাইড্রোজেন গ্যাসে রূপান্তর করা সম্ভব। পরে এগুলো দিয়েই তৈরি করা যাবে জ্বালানি ও অক্সিজেন।
তবে গবেষকেরা জানিয়েছেন, চাঁদের অতিমাত্রায় গরম-ঠাণ্ডা পরিবেশ, তীব্র রশ্মি ও কম মাধ্যাকর্ষণ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে। ল্যাবরেটরিতে সফল হলেও বাস্তবে প্রযুক্তিটি কার্যকর করতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
এই গবেষণা ভবিষ্যতের চাঁদ মিশন এবং বহুদূরের মহাকাশ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বড় সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল