কেটু-১৮বি (K2-18b) নামের এক্সোপ্ল্যানেটে (সৌরজগতের বাইরের গ্রহ) প্রাণের সম্ভাবনার বিষয়ে সম্প্রতি নতুন গবেষণায় ভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। এ বছরের এপ্রিল মাসে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী নিক্কু মধুসূদন এবং তার দল দাবি করেছিলেন, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে তারা ওই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রাণ-সম্পর্কিত কিছু গ্যাসের সংকেত পেয়েছেন।
তাদের মতে, গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে ডাইমিথাইল সালফাইড (DMS) ও ডাইমিথাইল ডিজালফাইড (DMDS) নামক সালফার-ভিত্তিক যৌগ থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। পৃথিবীতে এই ধরনের যৌগ সাধারণত সাগরের জীবাণু দ্বারা তৈরি হয়।
তবে একই তথ্য অন্য গবেষকরা পর্যালোচনা করে এই উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, ওই গ্যাসগুলোর উপস্থিতির কোনও পরিসংখ্যানগত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির রেনইউ হু এবং তার দল এ বিষয়ে মধুসূদনের দলকে সঙ্গ দিয়েই পরীক্ষা চালান।
তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে ওই গ্যাসগুলোর কোনও নিশ্চিত উপস্থিতি নেই। হু বলেন, এমন মডেলনির্ভর ফলাফল দুর্বল সংকেতের বিষয়টিই তুলে ধরে। অন্যদিকে, মধুসূদন জানিয়েছেন, নতুন বিশ্লেষণে তিনি DMS-এর উপস্থিতির ব্যাপারে কিছুটা বেশি আত্মবিশ্বাসী।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেক টেইলর বলেন, এই গ্যাসের অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক প্রায় শেষের পথে, কারণ বাড়তি নিখুঁত পর্যবেক্ষণেও এর উপস্থিতির নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি।
এছাড়া অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির লুইস ওয়েলব্যাংক্স বলেন, এই গবেষণায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে DMS বা এরকম কোনো গ্যাসের প্রমাণ মেলেনি।
তবে গবেষকরা একমত হয়েছেন যে, K2-18b গ্রহে পানি রয়েছে। হু এবং তার দল সেখানে মিথেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের উপস্থিতির শক্ত প্রমাণ পেয়েছেন। এই গ্যাসগুলোর উপস্থিতি সাধারণত পানির অস্তিত্বকে নির্দেশ করে।
K2-18b গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে ২.৬ গুণ বড় এবং এর ভর পৃথিবীর ৮.৬ গুণ। এটি লিও নক্ষত্রমণ্ডলে একটি ঠান্ডা লাল বামন তারাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে এবং গ্রহটি বাসযোগ্য অঞ্চলে অবস্থান করছে।
এই গ্রহকে আগে একটি ‘Hycean world’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল, অর্থাৎ যেখানে হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল এবং গভীর সমুদ্র থাকতে পারে—এ ধরনের গ্রহে জীবনের সম্ভাবনা কিছুটা বেশি বলে মনে করা হয়।
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধুমাত্র গ্যাস বা রাসায়নিক যৌগ দেখে কোনো গ্রহে প্রাণ আছে কিনা, তা বলা সহজ নয়। প্রাণের সংকেত খোঁজা কঠিন একটি কাজ, এবং প্রতিটি গ্রহেই তা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতে হয়।
তবে গবেষণা চলমান। ভবিষ্যতে আরও নির্ভুল তথ্য পাওয়া গেলে গ্রহটির পরিবেশ, তাপমাত্রা এবং জীবনের সম্ভাবনা নিয়ে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল