সময় মাপা পৃথিবীতে যতটা সহজ মনে হয়, মহাকাশে ততটা নয়। পাহাড়ের চূড়া আর সমতলভূমির মধ্যেও সময়ের অল্প পার্থক্য থাকে। কারণ, আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুযায়ী মাধ্যাকর্ষণ যত বেশি, সময় তত ধীর গতিতে চলে।
এই সমস্যাই আরও বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে চাঁদে স্থায়ী ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনায়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চাঁদে প্রতিদিন পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ৫৬ মাইক্রোসেকেন্ড (অত্যন্ত ক্ষুদ্র একক) দ্রুত কেটে যায়। এখন হয়তো তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এই পার্থক্য অনেক জটিলতা তৈরি করবে।
নাসা এবং তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীরা তাই চাঁদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি সময় গণনা ব্যবস্থা তৈরি করতে কাজ করছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে—চাঁদের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করা, যা আবার পৃথিবীর সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউস নাসাকে নির্দেশ দিয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যে এই নতুন সময় পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হবে। ওই বছরেই নাসা প্রায় পাঁচ দশক পর আবার মহাকাশচারী পাঠানোর লক্ষ্য নিয়েছে।
নাসার কর্মকর্তা শেরিল গ্রামলিং জানিয়েছেন, এটি শুধু নতুন ‘টাইম জোন’ (সময় অঞ্চল) নয়, বরং আলাদা একটি সময় স্কেল। কারণ চাঁদে কাজ করা মহাকাশচারীদের নেভিগেশন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, এমনকি একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও আলাদা সময় দরকার হবে।
ইতিহাস বলছে, পৃথিবীতে সময় গণনা প্রথমে সূর্যের ছায়া দেখে, পরে ঘড়ির মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। পরে আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুযায়ী সময় নির্ধারণ আরও জটিল হয়। এখন পৃথিবীতে সঠিক সময় বজায় রাখতে পারমাণবিক ঘড়ি ব্যবহার করা হয়, যেগুলো অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে সেকেন্ড পরিমাপ করতে পারে।
একইভাবে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, চাঁদে নতুন সময় গণনা করতে হবে এবং সেটিকে পৃথিবীর সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে রাখতে হবে। হিসাব অনুযায়ী, চাঁদের বিষুবরেখায় রাখা ঘড়ি প্রতিদিন পৃথিবীর ঘড়ির তুলনায় প্রায় ৫৬.০২ মাইক্রোসেকেন্ড দ্রুত চলবে।
নাসা বলছে, চাঁদের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করা ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এতে চাঁদে বসবাস, গবেষণা এবং যান চালনা আরও নিরাপদ ও সহজ হবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল