বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

রপ্তানি হলে নতুন মাইলফলক গড়বে স্বর্ণশিল্প

এম এ হান্নান আজাদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস), স্বত্বাধিকারী, অলংকার নিকেতন

রপ্তানি হলে নতুন মাইলফলক গড়বে স্বর্ণশিল্প

অলংকার নিকেতনের স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) ভাইস প্রেসিডেন্ট এম এ হান্নান আজাদ বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম, ক্লাস ফোর বা ফাইভে পড়ি তখন থেকেই স্বর্ণ নিয়ে চিন্তা করতাম। স্বপ্ন দেখতাম স্বর্ণ নিয়ে। সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। আমি স্বর্ণ ব্যবসা শুরু করলাম। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, আমরা সব সময় ক্রেতাদের পছন্দ অনুসারে ওজনে হালকা পণ্য বিক্রি করছি। কাস্টমার এখন হালকা গহনা ক্রয় ও ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। এসব গহনা দেখতে বড় হলেও ওজন অনেক কম। তিনি বলেন, দুবাই, বাহরাইন, সৌদি আরব স্বর্ণ রপ্তানি করছে। তারা যে অলংকার ২০ ভরিতে তৈরি করছে, ভারতের কারিগরদের লাগছে ১০ ভরি স্বর্ণ আর বাংলাদেশের কারিগররা তৈরি করছেন ৫-৭ ভরিতে। যেহেতু সারা বিশ্বে স্বর্ণের দাম বেশি। তাই হালকা ওজনের স্বর্ণের চাহিদা বাড়ছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী হাতে তৈরি স্বর্ণের গহনার দাম সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশের শিল্পীরা অনেক বেশি পারদর্শী। ভারতে কারিগরদের অধিকাংশই বাংলাদেশি। আমরা যদি স্বর্ণ রপ্তানি করতে পারি এবং কারিগরদের কাজ দিতে পারি তাহলে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের পরেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাইলফলক হবে স্বর্ণশিল্প।

বিশ্বব্যাপী হাতে তৈরি স্বর্ণের গহনার দাম সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশের কারিগররা এ কাজে পারদর্শী। আমরা যদি স্বর্ণ রপ্তানি করতে পারি এবং কারিগরদের কাজ দিতে পারি তাহলে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের পরেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাইলফলক হবে স্বর্ণশিল্প

তিনি বলেন, আমাদের প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের গোল্ড রিফাইনারি থেকে আন্তর্জাতিক বাজার দরে গোল্ড পাওয়া গেলে সেটা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। আমাদের রপ্তানি নীতি সহজীকরণ করা দরকার। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। শুধু নীতির অভাবে আমরা রপ্তানি করতে পারছি না। ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। পরবর্তীতে অর্থনীতি বিষয়ে এমএ সম্পন্ন করি। তাঁতীবাজারে স্বর্ণের দোকানে ঘোরাঘুরি করতে করতে ১৯৭৬ সালের দিকে একটা দোকান ভাড়া নিয়ে স্বর্ণালংকারের দোকান দিই। তখন আমার বয়স ২৩ বছর আর মূলধন ২ হাজার ৭০০ টাকা। সেখান থেকে আস্তে আস্তে ব্যবসা বড় করি। এখন আমার চারটা আউটলেট রয়েছে। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে দুটো আউটলেট, নিউমার্কেটে একটা এবং যমুনা ফিউচার পার্কে একটা আউটলেট রয়েছে। আমার বহুদিনের স্বপ্ন বাংলাদেশের স্বর্ণালংকার বিদেশে রপ্তানি করার। আমি সরকারি ও নিজের উদ্যোগে বিভিন্ন দেশে ১০০-এর বেশি জুয়েলারি মেলায় অংশগ্রহণ করেছি। জাপান, বাহরাইন, দুবাই, ভারত, আমেরিকা, কানাডায় মেলায় গহনা নিয়ে গেছি। আমাদের পণ্য নিয়ে জাপানে গিয়েছিলাম। আমাদের স্বর্ণকারদের ডিজাইন দেখে মেলায় আসা ক্রেতারা বিমোহিত হন। আমি স্পট সেলে ২ লাখ মার্কিন ডলারের গহনা বিক্রি করেছি। আমাদের দেশের স্বর্ণের ব্যাপক চাহিদা বিদেশে। দুবাইতে এক মেলায় ১ ঘণ্টায় ৪৬ কেজি স্বর্ণালংকারের অর্ডার নিয়ে তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রীকে দেখিয়ে ছিলাম। ’৯০-এর দশকে আমি নিজ উদ্যোগে ৩৫ হাজার মার্কিন ডলারের স্বর্ণালংকার রপ্তানি করেছিলাম। রপ্তানি করতে গিয়ে সে কী বিড়ম্বনা। কোনো ক্যারিয়ার এই স্বর্ণ নিতে চায় না, কোনো কোম্পানি ইন্স্যুরেন্স দিতে চায় না। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আমি দুবাইতে রপ্তানি করতে পেরেছিলাম। কিন্তু স্বর্ণের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ওঠানামা করে। এলসি পদ্ধতিতে রপ্তানি করার কারণে লাভ তো দূরের কথা আমার অনেক টাকার ক্ষতি হয়।

অলংকার নিকেতনের স্বত্বাধিকারী আরও বলেন, এরপর স্বর্ণ ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে আমরা স্বর্ণের চেইন তৈরি শুরু করলাম। কিন্তু এই স্বর্ণের ইন্ডাস্ট্রি থেকে রপ্তানি করতে না পারলে লাভবান হওয়া কঠিন। আমাদের স্বর্ণকারদের হাতে গড়া স্বর্ণালংকারের ভীষণ চাহিদা রয়েছে। আমি যে স্বর্ণালংকার রপ্তানি করেছিলাম তা এখানকার এই শিল্পীদের হাতে গড়া। এখান থেকে স্বর্ণালংকার তৈরি করে দুবাই মেলায় গিয়ে দেখেছিলাম ১০ মিনিটের মধ্যে গহনা নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে কাড়াকাড়ি লেগে গিয়েছিল। এর একমাত্র কারণ এই দেশের শিল্পীরা খুব হালকা ওজনের গহনা তৈরি করতে পারেন। স্বর্ণালংকারের দাম বাড়ার কারণে হালকা ওজনের গহনার চাহিদা ব্যাপক।

বসুন্ধরা সিটি শপিং মল দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এম এ হান্নান আজাদ বলেন, এ ব্যবসায় ৩০ লাখ মানুষ জড়িত। রপ্তানি করতে পারলে গার্মেন্ট খাতের মতো নতুন মাইলফলক তৈরি হবে স্বর্ণালংকার খাত ঘিরে। এ জন্য রপ্তানি পদ্ধতিকে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, বাহরাইন এসব দেশের মতো যুগোপযোগী করতে হবে। আগে এসব দেশ স্বর্ণ আমদানি করত। এখন রপ্তানি নিয়মকানুন আধুনিকায়নের কারণে তারা পৃথিবীজুড়ে রপ্তানি করছে। বাজুস সভাপতি ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর দায়িত্ব গ্রহণ করে এ খাতকে উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। আশা করছি তাঁর হাত ধরে আমরা খুব দ্রুতই স্বর্ণালংকার রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিতে পারব।

সর্বশেষ খবর