শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শিশিরেই সিরিজ হাতছাড়া

মেজবাহ্-উল-হক

শিশিরেই সিরিজ হাতছাড়া

শিশিরের কারণে স্পিনাররা ভালো করতে পারেননি। তাই ইংল্যান্ডকে ২৭৮ রানে টার্গেট দিয়েও হেরে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন টাইগাররা —রোহেত রাজীব

স্পিন-স্বর্গে যখন স্পিন কাজ করে না তখন আর কি-ই-বা করার থাকে! তবে সর্বস্ব দিয়েই লড়াই করেছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত লড়াকু মনোভাব নিয়েই মাঠে ছিলেন মাশরাফিরা। কিন্তু ভাগ্য বিড়ম্বনায় হারতে হলো। প্রথমত টসে হার, তারপর অতিরিক্ত শিশিরে ব্যর্থ স্পিনাররা—শেষ পর্যন্ত সিরিজটাই হাতছাড়া হয়ে গেল।

দিনের আলোয় যে উইকেট ছিল স্পিন-স্বর্গ, ফ্লাড লাইটের আলোয় শিশির পড়ে তা হয়ে গেল ব্যাটিং স্বর্গ। সে কারণেই টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে গিয়ে যেমন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের রীতিমতো সংগ্রাম করতে হলো, তেমনি বোলিং করতে গিয়ে স্পিনাররা পড়ে গেলেন বিপাকে। উইকেট থেকে শতভাগ সুবিধা আদায় করে নিয়ে সিরিজ জিতে গেল ইংল্যান্ড।

অতিরিক্ত শিশির পড়ায় ‘উইকেট’ একদম বদলে যায়। একে তো বল গ্রিব করাই কঠিন হয়ে যাচ্ছিল, তার ওপর উইকেটে ছিল না কোনো টার্ন! যে উইকেটে একটু আগেই ইংলিশ স্পিনার আদিল রশিদ, মঈন আলী ছড়ি ঘোড়ালেন, একটু পড়েই সে উইকেটটি সাকিব, নাসির, মোসাদ্দেকদের জন্য হয়ে গেল ‘বদ্ধ-ভূমি’।

 

তারপরেও বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে। জয়ের আবহও তৈরি করেছিল। কিন্তু একটুখানি ভুলের কারণে ম্যাচটা হাতছাড়া হয়ে গেল। ৪৭তম ওভারে ইমরুল কায়েস যদি ক্যাচটি মিস না করতেন হয়তো ম্যাচের ফল অন্যরকমও হতে পারতো!

মিরপুরে সিরিজের প্রথম ম্যাচটা অসতর্কতায় হাতছাড়া হয়ে গেলেও দ্বিতীয় ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে খেলা বলে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখছিলেন ক্রিকেটপাগল ভক্তরা। কিন্তু অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা টসে হারার পরেই যেন একটা বড় ধাক্কা খায় টাইগাররা। কেননা চট্টগ্রামে দিবা-রাত্রির ম্যাচ মানেই ফল নির্ধারিত হয়ে যায় ‘টস’ নামক ভাগ্যের ওপর।

তবে সব শেষ ম্যাচে এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে হেরেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৯ উইকেটের বিশাল জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেবার টস জিতেও বোকামি করে প্রোটিয়ারা প্রথমে ব্যাটিং করেছিল। কিন্তু ইংল্যান্ড টস জয়ের পর আর সে ভুল করেনি। বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাটিং পাঠিয়ে দেয়।

দিনের আলোয় চট্টগ্রামের উইকেটে ছিল ব্যাপক টার্ন। দুই ইংলিশ স্পিনার আদিল রশিদ ও মঈন আলীর বল খেলাই যাচ্ছিল না। লম্বা টার্নের কারণে বার বার বোকা বনে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। যেন ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হচ্ছিল তামিম-সাকিবদের। তবে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট হারিয়ে ২৭৭ রানের লড়াকু স্কোর করে বাংলাদেশ।

কিন্তু অতিরিক্ত শিশির পড়ায় উইকেটে স্পিন না ধরায় ২৭৮ রান যেন ইংলিশদের জন্য সহজ টার্গেট হয়ে গিয়েছিল। বল ভিজে যাওয়ায় স্পিনাররা গ্রিব করতে পাচ্ছিলেন না। বল টার্ন করার বদলে সোজা ব্যাটে চলে যাচ্ছিল। সাকিবের মতো স্পিনারকেও কোনো সমীহ করেনি ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। আগের ম্যাচের সফল স্পিনার নাসির হোসেনও ব্যর্থ। মোসাদ্দেকের বলেও ছিল না প্রাণ। তিন স্পিনার মিলে ২০ ওভারে দিয়েছেন ১২০ রান। অথচ দিনের আলোয় ইংল্যান্ডের দুই স্পিনার রশিদ ও মঈন মিলে ২০ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৮৫ রান। মাশরাফিদের পতন ঘটা ছয় উইকেটের মধ্যে পাঁচটিই নিয়েছেন দুই স্পিনার মিলে।

ম্যাচ শেষে মাশরাফি বলেছেন, ‘ম্যাচের দুই ইনিংসে ছিল উইকেটের দুই রূপ। শিশিরের কারণে উইকেট একদম বদলে গিয়েছিল। প্রথম ইনিংসে উইকেটে দারুণ স্পিন ধরেছে। ধীরগতির উইকেটে বল থেমে থেমে আসছিল। যে কারণে ব্যাটসম্যানদের কাজটা অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংস বল আর টার্ন করেনি। যে পরিমাণ শিশির পড়েছে, যদি এর অর্ধেক পরিমাণ শিশিরও পড়তো ম্যাচের ফল পুরোপুরি অন্যরকম হতো।’

এমন ম্যাচে হারে আসলে কিছু করার থাকে না। তবে মাশরাফির আক্ষেপ প্রথম ম্যাচে হার নিয়ে। যে ম্যাচে শেষ ১৭ রানেই ৬ উইকেট পড়ে জয় হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। হাতে ছয় উইকেট থাকার পর ৫১ বলে ৩৯ রান করা মোটেও কঠিন কিছু নয়। কিন্তু এমন একটি সহজ ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ। তা না হলে চট্টগ্রামের ম্যাচের আগেই সিরিজ ঘরে তুলতে পারতেন মাশরাফিরা।

তবে শেষ ম্যাচে হারলেও একসঙ্গে পারফর্ম করেছে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে, টেস্ট সিরিজের আগের মুশফিকুর রহিমের ফর্মে ফেরাটা ছিল জরুরি। মুশফিক এ ম্যাচে খেলেছেন হার না মানা ৬৭ রানের ইনিংস। এটিই যেন মন্দের ভালো। মাশরাফি বলেন, ‘আমরা অনেক ভালো খেলেছি। তামিম-ইমরুল ভালো শুরু করেছে। সবচেয়ে বড় পাওয়া মুশফিক আবার ফর্মে ফিরে এসেছে।’

টানা সপ্তম সিরিজ জয়ের সুযোগটা হাতছাড়া হওয়ার বিষয়টি হয়তো অনেক দিন পোড়াবে ক্রিকেটারদের। কিন্তু এটাই তো বাস্তবতা। সামনে টেস্ট সিরিজ। আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নামতে হবে। বডি ল্যাঙ্গুয়েজে থাকবে টগবগে ভাব। এমন দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে খেলতে হবে যেন একটি সুযোগও নষ্ট না হয়। যদিও টেস্টে বাংলাদেশ ততটা শক্তিশালী নয়। তারপরেও ঘরের মাঠে অন্তত এই আত্মবিশ্বাসটুকু থাকা জরুরি, শতভাগ উজাড় করে দিতে পারলে এই ইংল্যান্ডকে হারানো অসম্ভব নয়। তা ছাড়া টেস্টে তো আর ওয়ানডের মতো শিশিরের ভয় থাকছে না!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর