সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

জাপানি কন্যার রূপকথা

রাশেদুর রহমান

জাপানি কন্যার রূপকথা

ইউএস ওপেন জয়ী নাওমি ওসাকা

সেরেনা উইলিয়ামস ইউএস ওপেনে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম ট্রফি জিতেন ১৯৯৯ সালে। সে সময় নাওমি ওসাকার বয়স দুই বছরও হয়নি। টেনিস খেলা সম্পর্কে তার কোনো ধারণাও তখন ছিল না। সেই নাওমি ওসাকাই ২৩ বারের গ্র্যান্ডস্লাম ট্রফিজয়ী সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রফি জিতলেন। ইউএস ওপেনে বিতর্কিত এক ফাইনাল জিতেছেন ওসাকা। জাপানের প্রথম এবং এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় তারকা হিসেবে এই গৌরব অর্জন করলেন তিনি। তার আগে কেবল চীনের লি না গ্র্যান্ডস্লাম জিতেছেন এশিয়ার হয়ে। পুরুষ এককে অবশ্য এখনো কোনো এশিয়ান এই গৌরব অর্জন করতে পারেননি। কেবল জাপানের কেই নিশিকুরি ফাইনাল খেলেছিলেন ২০১৪ সালের ইউএস ওপেনে।

নাওমি ওসাকার জন্ম জাপানের ওসাকা শহরে। শহরের নামানুসারেই তার নাম। ছোটবেলা থেকেই তিনি টেনিস পাগল। বড় বোন মেরির সঙ্গে টেনিস নিয়ে কত যে লড়াই হয়েছে শৈশবে। পরবর্তীতে অবশ্য দুই বোন মিলে জুটি বেঁধে লড়াই করেছেন টেনিস কোর্টে। সেদিকে তেমন একটা সফলতা আসেনি। এককভাবে খেলতে নেমেই ওসাকা নিজেকে তুলে ধরলেন। একে একে সব বাধা দূর করে এগিয়ে এলেন সামনের সারিতে। ক্যারিয়ারের প্রথম ডব্লিউটিএ ফাইনাল খেলেন তিনি ২০১৬ সালে প্যান প্যাসিফিক ওপেনে। সেবার ক্যারোলিন উজনিয়াকির কাছে হেরেছিলেন তিনি। ২০১৭ সালটা ভালো কাটেনি নাওমির। তবে চলতি বছরেই ক্যারিয়ারের প্রথম ডব্লিউটিএ টুর্নামেন্ট জিতেন তিনি। ইন্ডিয়ান ওয়েলসে রাশিয়ার দারিয়া কাসাতকিনাকে হারিয়েছিলেন। একটি ডব্লিউটিএ ট্রফি জয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি এবার জয় করলেন ইউএস ওপেনের ট্রফি। ইউএস ওপেনের ফাইনালে তিনি সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়েছেন ৬-২, ৬-৪ গেমে। ওসাকার জয়টা অবশ্য বিতর্কিত হয়ে থাকল। ম্যাচ চলাকালীন বার বারই চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন সেরেনা। কোচের কাছ থেকে চোখের ইশারায় পরামর্শ নিয়েছেন, এই অভিযোগে সেরেনার পয়েন্ট কেটেছেন আম্পায়ার রামোস। এর ফলে রেগে সেরেনা র‌্যাকেট ছুঁড়ে মারেন। এতেও তার পয়েন্ট কাটেন রামোস। এই ঘটনার পর ফ্ল্যাশিং মিডোজের গ্যালারি থেকে আম্পায়ারকে ধুয়ো ধ্বনি দেয় দর্শকরা। আর ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ক্ষোভে আম্পায়ারের সঙ্গে হাতটাই মেলাননি সেরেনা। এমনকি ম্যাচ শেষে রামোসকে ‘চোর’ বলতেও দ্বিধা করেননি এই মার্কিন তারকা। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে আম্পায়ার রামোস ক্রেস্ট নিতে এলে ধুয়ো ধ্বনি উঠে গ্যালারিতে। পরবর্তীতে সেরেনা উইলিয়ামসকেই বিষয়টা থামাতে হয়। তিনি দর্শকদের অনুরোধ করেন এভাবে ধুয়ো ধ্বনি না দিতে। জাপানি মেয়ে নাওমি ট্রফি নিতে এলে অবশ্য সেরেনার অনুরোধে সবাই তাকে স্বাগত জানায়। সেরেনা বলেন, ‘নাওমি সত্যিই দারুণ খেলেছে। তাকে অভিনন্দন।’ অন্যদিকে ট্রফি হাতে নিয়ে নাওমি ওসাকা বলেন, ‘আমি দুঃখিত যে আপনাদের ফেবারিট তারকা এখানে জিততে পারেননি।’

সেরেনা উইলিয়ামসের সামনে সুযোগ ছিল ইউএস ওপেন জিতে মার্গারেট কোর্টকে স্পর্শ করার। ২৪টি গ্র্যান্ডস্লাম ট্রফি জিতে সবার উপরে অবস্থান করছেন মার্গারেট কোর্ট। অন্যদিকে সেরেনা উইলিয়ামস জিতেছেন ২৩টি। তাছাড়া অলিম্পিয়ার মা হওয়ার পর প্রথমবারের মতো গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের সুযোগও ছিল সেরেনার সামনে। তাও হাতছাড়া হলো। সেরেনা এবং তার ভক্তরা হতাশ হলেও জাপানি মেয়ে নাওমি ওসাকার শহরে এখন আনন্দবন্যা। কেবল তার শহরেই নয়, পুরো জাপানে। নাওমির দেশের প্রধানমন্ত্রী শিনেজা আবে বলেছেন, ‘জাপানের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে শিরোপা জয়। গোটা জাপানকে লড়াইয়ের শক্তি ও প্রেরণা জোগানোর জন্য ধন্যবাদ।’ জাপানে জন্ম হলেও নাওমি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় থাকেন বাবা-মায়ের সঙ্গে। তবে যেখানেই থাকুক, জাপানের প্রতি ভালোবাসা তার মোটেও কমেনি। হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও তাই তিনি জাপানি। ভক্তরা তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে তো মাতবেনই!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর