সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্ভার টাইগারবাহিনী

মেজবাহ্-উল-হক

নির্ভার টাইগারবাহিনী

অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে যেকোনো দল যেকোনো সময় বিপদে পড়তে পারে। মাঠে ছোট দলগুলোর পদে পদেই বিপদ, আর বড় দলগুলো মাঝেমধ্যে বিপাকে পড়ে। বড় দলগুলো বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার কৌশল জানে। তারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মাঠে বিপদের মোকাবিলা করতে পারেই ‘বড় দল’!

এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দল যা দেখালো তারপর কী টেনে ছোট দলের কাতারে নামানোর উপায় আছে! প্রথম ওভারে দুই উইকেট নেই। লিটন দাসের পর দলের সেরা পারফর্মার সাকিব আল হাসানের বিদায়। দ্বিতীয় ওভারে সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল মাঠ ছাড়েন।

প্রথমে ১ রানে ২ উইকেট, তারপর ৩ রানে ৩ উইকেট পড়ে যায় বাংলাদেশের (তামিমের রিটায়ার্ড হার্টসহ)। বলতে গেলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচের শুরুতেই কোমায় চলে গিয়েছিল দলটি। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ১৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়। অবিশ্বাস্য এক ম্যাচই বটে।

এই জয় অনেক বার্তা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ক্রিকেট জায়ান্টে পরিণত হতে যাচ্ছে। এই জয় এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে যেন আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। মুশফিকুর রহিমের ১৪৪ রানের ইনিংসের কথা আলাদা করেই বলতে হবে। চাপের বোঝা মাথায় নিয়ে একপ্রান্ত আগলে রেখে রান করতে হয়েছে মিস্টার ডিপেন্ডেবলকে। নিঃসন্দেহে মুশফিকের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সেরা ইনিংস। শুধু মুশফিকের নয়, এটি এশিয়া কাপের ইতিহাসেই সেরা ইনিংসের মধ্যে একটি। তবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। সর্বোচ্চ স্কোরটি ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলির। ২০১২ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের এই তারকা করেছিলেন ১৮৩ রান।

বড় দলের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—দ্রুত বেশ কয়েকটি উইকেট পড়ার পরও একটি জুটিই খেলার গতি পাল্টে দেয়। প্রথম ম্যাচে মোহাম্মদ মিথুন ও মুশফিকের ১৩১ রানের জুটির কথা চিন্তা করুন। দুই ব্যাটসম্যান মিলে যেন খাদ থেকে টেনে তোলেন বাংলাদেশকে।

২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ মিলে অনন্য এক নজির স্থাপন করেছিলেন। প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচে দারুণ  দুই তারকা ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করে এনে দিয়েছিলেন দারুণ এক জয়। পার্টনারশিপে তারা রেকর্ডও গড়েছিলেন। ওই জয়ই বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে নিয়ে গিয়েছিল। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে ‘মোমেন্টাম’ হিসেবে কাজ করেছে তামিম ইকবালের ভাঙা হাত নিয়েও মাঠে নামার বিষয়টি। যেখানে ২২৯ রানেই আটকে যাওয়ার কথা, সেখানে তামিমকে নিয়ে আরও ৩২ রানে করেছেন মুশফিক। তামিমই পুরো দলকে বদলে দিয়েছেন।

বড় দলে দুই একজন ব্যাটসম্যানই বড় স্কোর করার জন্য যথেষ্ট। যে লক্ষণ এখন বাংলাদেশ দলে দেখা যাচ্ছে। নির্দিষ্ট ক্রিকেটারের ওপর নির্ভরতাও কমে গেছে। তাই গত ম্যাচে সেরা দুই ব্যাটসম্যান সাকিব ও তামিম শুরুতে মাঠের বাইরে যাওয়ার পরও টাইগাররা দমে যাননি। এমনকি আরেক সেরা ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও ১ রানের বেশি করতে পারেননি। তারপরও ২৬১ রানের স্কোর করেছে টাইগাররা।

বাংলাদেশ দল এখন ‘পঞ্চ পাণ্ডব’এর ওপর নির্ভরশীল। পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার—মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ ছাড়া বাংলাদেশ দল কল্পনাও করা যায় না। অধিনায়ক ম্যাশ ছাড়া বাকি চারজনই ব্যাটসম্যান। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের এই চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুই কিংবা তিনজন ভালো ব্যাটিং করার কারণে স্কোর বড় হয়েছে। অনেক ম্যাচে চারজনই একসঙ্গে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেছেন। কিন্তু এই ম্যাচটা অন্য বার্তা দিল। কেন না সাকিব, তামিম ও মাহমুদুল্লাহ—৩ ব্যাটসম্যানের রানের যোগফল মাত্র ৩! তারপরও স্কোর ২৬১।

এই ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ দারুণ একটি সুখবর পেল। এখন একজন সিনিয়র ক্রিকেটার জ্বলে উঠলেই ম্যাচ জয়ী স্কোর করা সম্ভব। আর একাধিক সিনিয়র একসঙ্গে দাপুটে ব্যাটিং করলে তো কথাই নেই।

তামিমের বীরত্ব এবং মুশফিকের লড়াকু সেঞ্চুরির আড়ালেই যেন অনেকটা ঢাকা পড়ে গেছে বোলারদের কৃতিত্বের কথা! খেলার আগে টসের সময় দুবাইয়ের উইকেট দেখে পিচ বিশ্লেষকরা বার বার বলছিলেন এই উইকেটে বোলারদের কোনো রকম সুবিধা নেই। সেই উইকেটেই কিনা শ্রীলঙ্কার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে মাত্র ১২৪ রানে বেঁধে ফেলল বাংলাদেশ। কোনো টাইগার-বোলারকেই ঠিকমতো খেলতে পারেননি লঙ্কানরা। পাঁচবারের এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়নদের রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছেন মাশরাফিরা।

প্রথম ম্যাচে পাওয়া স্মরণীয় জয় থেকে এশিয়া কাপ জয়ের স্বপ্নটা ডানা মেলতে শুরু করেছে। যদিও এখনো যেতে হবে অনেক দূর। দুঃসংবাদ হচ্ছে—দলের সেরা ব্যাটসম্যানকে ছাড়াই সামনের ম্যাচগুলো খেলতে হবে। তবে তামিমের না থাকাটা অন্যান্য ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্বশীল হতে উজ্জীবিত করতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর