শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যাটসম্যানরা ফর্মে ফেরায় স্বস্তি

মেজবাহ্-উল-হক

ব্যাটসম্যানরা ফর্মে ফেরায় স্বস্তি

৮ বছর ৯ মাস পর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেয়ে উচ্ছ্বসিত টাইগার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ লাফিয়ে উদযাপন করছেন তিন অঙ্কের জাদুকরী ইনিংসটি —বাংলাদেশ প্রতিদন

 সেঞ্চুরির পর সেলিব্রেশনে মাহমুদুল্লাহ্ রিয়াদের সঙ্গে মাঠে মেহেদী হাসান মিরাজও সিজদাহ দিলেন! এমন কাণ্ডে প্রেসবক্সে হাসির রোল পড়ে যায়। এক ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরির পর আরেক ব্যাটসম্যানের এমন অদ্ভুত উদযাপন ক্রিকেটে আগে কখনো দেখা গেছে কিনা!

সিজদাহ-রহস্য জানুন খোদ মিরাজের ভাষায়, ‘মুশফিক ভাই  ডাবল করলেন, মুমিনুল ভাই দেড়শ করলেন। রিয়াদ ভাইয়ের সেঞ্চুরি, মিথুন ভাইও পঞ্চাশ করলেন। আমারও একটা পঞ্চাশ আছে। আমার খুব ভালো লাগছে যে ব্যাটসম্যানরা রানে ফিরেছে। ব্যাটসম্যানরা আধিপত্য বিস্তার করেছে। এটা দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর ব্যাটসম্যান আধিপত্য বিস্তার করলে দলও ভালো খেলে। আমার খুব ভালো লাগছে। নিজের অনুভূতি ধরে রাখতে পারিনি। তাই খুশিতে রিয়াদ ভাইয়ের সঙ্গে সিজদাহ করেছি।’

সত্যিই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে দারুণ ফর্মে ফিরেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। আগের আট ইনিংসে যেখানে বাংলাদেশ একবারও দুইশ রান পার করতে পারেননি সেখানে এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে একাই ২১৯ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর রহিম।

মুমিনুল হকের ১৬১ রানের ইনিংসটাও ছিল অসাধারণ। আর কাল দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যাপ্টেন মাহমুদুল্লাহ নিজেই খেললেন ১০১ রানের আরেকটি হার না মানা ইনিংস। দীর্ঘ আট বছর টেস্টে শতকের দেখা পেলেন টাইগার দলপতি। চাপের মুখে ব্যাট হাতে বাইশগজে নেমে ৬৭ রানের নান্দনিক এক ইনিংস খেলেন অভিষিক্ত মোহাম্মদ মিথুন। অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন মিরাজও। প্রথম ইনিংসে তিনি ৬৮ রানে অপরাজিত ছিলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭ রানে নটআউট!

সবচেয়ে সুখের বিষয় হচ্ছে, প্রতিপক্ষের বোলাররা এই ম্যাচে বাংলাদেশকে একবারও অলআউট করতে পারেননি। দুই ইনিংসই ঘোষণা করেছে টাইগাররা। দ্বিতীয়বারের মতো এক টেস্টে দুইবার ইনিংস ঘোষণা করলো বাংলাদেশ! এর আগে ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একবার দুই ইনিংস ঘোষণা করেছিল টাইগাররা।

এই টেস্টে টাইগারদের সামনে সুযোগ ছিল জিম্বাবুয়েকে ফলোঅন করানোর। ২১৮ রানে এগিয়ে থাকার পরও গতকাল সকালে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং শুরু করে টাইগাররা। এ কারণে প্রথমবারের মতো ইনিংস ব্যবধানে জয়ের সুযোগটাও হাতছাড়া হয়ে গেল।

ফলোঅন না করানোর ব্যাখায় মিরাজ বলেন, ‘আমরা সব সময় চিন্তা করেছি শেষ ইনিংসে যেন ওরা ব্যাট করে। আমরা ব্যাটিং না করি। কারণ টেস্ট ক্রিকেটে সব কিছুই হতে পারে। ফলোঅন করালে দেখা গেল ওরা ভালো ব্যাট করে আমাদের ১০০-১৫০ রানের টার্গেট দিয়ে দিল। আমরা কেন ওই ঝুঁকি নিতে যাব। আমরা চেষ্টা করেছি তাদের শেষ ইনিংসে ব্যাট করাতে। শেষ দিনে উইকেটটা ভেঙে যাবে, টার্ন করবে, অনেক কিছু হতে পারে। দ্রুত উইকেটের পতন ঘটবে। ওই ঝুঁকিটা ওরা নিক। আমরা যেন না নেই। আমরা যেন রিস্ক ফ্রি যেন খেলি। সিরিজের প্রথম ম্যাচে হেরে এমনেই আমরা ব্যাকফুটে আছি। সে কারণে এই টেস্টে জান প্রাণ দিয়ে খেলছি।’

গতকাল দ্বিতীয় সেশন পর্যন্ত ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। ছয় উইকেটে ২২৪ রান করার পর ঘোষণা করা হয় ইনিংস। জিম্বাবুয়েকে ৪৪৩ রানের টার্গেট দিয়েছে স্বাগতিকরা।

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে শেষ ইনিংসে তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ৪১৮ রানের। এই রেকর্ডটাও ২০০৩ সালের, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। আর উপমহাদেশের চতুর্থ ইনিংসে তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ৩৮৮ রানের। গত বছর এই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে জিতেছিল স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। কিন্তু বাংলাদেশ কেন আরও আগে ইনিংস ঘোষণা করেনি? এমন প্রশ্নে মিরাজ বলেন,‘আমি বলবো চারটা সেশনই যথেষ্ট। আমরা যে সময় ছেড়ে দিয়েছি তাতে প্রায় ১২০-১২৫ ওভার কাভার করেছে। চতুর্থ ইনিংসে ১২০ ওভার মানে কিন্তু অনেক ওভার। তা ছাড়া আমাদেরও তো একটা ব্যালেন্স করে ছাড়তে হবে। এটাই যে টিম ম্যানেজমেন্ট খুব ব্যালেন্স করে ছেড়েছে। আমরা কোনো সময় যেন ব্যাকফুটে না যাই সেভাবেই আমাদের ডিটারমিনেসন ছিল।’

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জিম্বাবুয়ে ২ উইকেট হারিয়ে করেছে ৭৬ রান। ম্যাচ বাঁচাতে হলে আজ সারা দিন ব্যাট করতে হবে। আর জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ৮ উইকেট। মিরাজ মনে করেন ম্যাচ এখন বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়, ‘এখন পর্যন্ত ম্যাচটা আমাদের দিকেই আছে। আমরা সাড়ে ৪০০র মতো টার্গেট দিয়েছি। ওদের দুই উইকেট শিকার করেছি। একটা দিন আছে, তিনটা সেশন আছে। আমাদের বোলাররা যদি ভালো লেন্থে বল করতে পারে, তাহলে ম্যাচটা আমাদের দিকেই আসবে।’ বোলারদের পাশাপাশি সতর্ক থাকতে হবে ফিল্ডারদেরও। কেন না দুই ইনিংসে এ পর্যন্ত ৬-৭টি ক্যাচ মিস করেছে বাংলাদেশ। এখন কামনা একটাই- শেষ দিনে নতুন করে কোনো ক্যাচ মিস না হলেই হয়!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ১ম ইনিংস ৫২২/৭ ও দ্বিতীয় ইনিংস ২২৪/৬ (ডি.) মাহমুদুল্লাহ ১০১*।

জিম্বাবুয়ে : ১ম ইনিংস ৩০৪/১০ ও দ্বিতীয় ইনিংস ৭৬/২, চারি ৪৩।

সর্বশেষ খবর