বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুঃস্বপ্নের এক বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপ ২০০৩

মেজবাহ্-উল-হক

দুঃস্বপ্নের এক বিশ্বকাপ

বাংলাদেশের অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট

স্কোর বোর্ডে কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই ড্রেসিংরুমে ফিরে যান বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যান হান্নান সরকার, মোহাম্মদ আশরাফুল ও এহসানুল হক। পঞ্চম বলে সানোয়ার হোসেনের বিদায়। তিন বলে তিন উইকেট, সব মিলে ইনিংসের প্রথম ৫ বলে ৪ উইকেট নিয়ে ২০০৩ বিশ্বকাপে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেন শ্রীলঙ্কার পেসার চামিন্দা ভাস।

বিশ্বকাপের দুঃস্বপ্নের অধ্যায়ে যুক্ত হয় বাংলাদেশের নাম। শুধু ওই একটি ম্যাচ নয়, পুরো আসরটাই ছিল টাইগারদের জন্য দুঃস্মৃতির। টুর্নামেন্টের ৬ ম্যাচের মধ্যে একটিতেও জিততে পারেনি খালেদ মাসুদ পাইলটের দল। সবচেয়ে বড় লজ্জার বিষয় ছিল, টেস্ট খেলুড়ে দল হয়েও কানাডার কাছে ৬০ রানের হার। বিশ্বকাপটা কষ্টের ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্যও। স্বাগতিক হওয়ার পরও দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম রাউন্ডের গন্ডি পার হতে পারেনি। প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়ে যায় ফেবারিট ইংল্যান্ডও। দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল শুরুতেই। কিন্তু দুঃস্বপ্নের এই বিশ্বকাপেই সবচেয়ে বেশি রেকর্ড হয়েছে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বলতর ছিল ২০০৩ সালের আসরটিই। রেকর্ডময় এই আসরে ফাইনালে ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা জেতে রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া।

 

কেনিয়ার বিস্ময়কর উত্থান

২০০৩ বিশ্বকাপে চমক দেখিয়েছিল কেনিয়া। আইসিসির সহযোগী দেশ হয়েও তারা প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে ওঠে। গ্রুপপর্বে তারা শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও কানাডাকে হারায় এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়াকওভার পেয়ে সুপার সিক্স নিশ্চিত করে। অথচ একই গ্রুপ থেকে বাদ পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বড় দলও। সুপার সিক্সে তারা কেবলমাত্র জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে জিতেই সেমির টিকিট পেয়ে যায়।

 

এক আসরে দুই হ্যাটট্রিক

প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের এক আসরে দুই দুটি হ্যাটট্রিক হয়। একটি করেছেন শ্রীলঙ্কার পেসার চামিন্দা ভাস, আরেকটি অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি। ভাস বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টানা তিন বলে তিন ব্যাটসম্যান হান্নান সরকার, মোহাম্মদ আশরাফুল ও এহসানুল হককে আউট করে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন। ব্রেট লি হ্যাটট্রিক করেন কেনিয়ার বিরুদ্ধে।

 

পন্টিংয়ের মহাকাব্য

আসরের ফাইনাল ম্যাচ ঠিক ফাইনালের মতো হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ভারত। অসি অধিনায়ক রিকিং পন্টিংয়ের অপরাজিত ১৪০ রানের ইনিংসে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ৩৫৯ রান করে। পন্টিংয়ের মহাকাব্যিক ইনিংসের পর আর লড়াই জমিয়ে তুলতে পারেনি ভারত। মাত্র ২৩৪ রানেই অলআউট হয়ে যায়। ১২৫ রানে জিতে বিশ্বকাপের তৃতীয় শিরোপা ঘরে তুলে অস্ট্রেলিয়া।

 

নতুন দল নামিবিয়া

প্রথমবারের মতো আফ্রিকা মহাদেশে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপের আসর। তিন আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত পর্বে প্রথমবারের মতো খেলার সুযোগ পায় নামিবিয়া। তবে প্রথম আসরে সবকটি ম্যাচেই হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিবেশী দেশটি।

 

শচীনের রান-বন্যা

এই আসরটি ছিল শচীন টেন্ডুলকারের। একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৬টি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। ১১ ম্যাচে ৬১.১৮ গড়ে করেছিলেন ৬৭৩ রান। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ রান করার নতুন রেকর্ড। ভারতীয় ব্যাটিং জিনিয়াস নামিবিয়ার বিরুদ্ধে খেলেছিলেন ১৫২ রানের ইনিংস। ওই ম্যাচেই ওপেনিং জুটিতে সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে করেছিলেন ২৪৪ রানের জুটি। সেটিও ওই আসরে রেকর্ড।

 

অংশগ্রহণকারী দল :

গ্রুপ-এ : অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জিম্বাবুয়ে, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস, নামিবিয়া।

গ্রুপ-বি : বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কানাডা।

 

রেকর্ড

দলীয় নিম্ন স্কোর : কানাডা ৩৬/১০। এটি ওয়ানডে ইতিহাসেই সর্বনিম্ন স্কোর।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা বোলিং : ৭/১৫ [ম্যাকগ্রা]।

এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ডিসমিশাল : ৬টি [গিলক্রিস্ট]

এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ক্যাচ : ৪ টি [মোহাম্মদ কাইফ, ভারত]

বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বোচ্চ স্কোর :  ১৪০* [রিকি পন্টিং]

এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান : ৬৭৩ [শচীন টেন্ডুলকার]

এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক ডিসমিশাল : ২১টি [গিলক্রিস্ট]

এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক ক্যাচ : ১১টি [রিকি পন্টিং]

 

ফরম্যাট

অংশগ্রহণকারী ১৪ দল দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গ্রুপ পর্ব খেলে। প্রতি গ্রুপ থেকে সেরা ৩টি করে দল সুপার সিক্সে সুযোগ পায়। সুপার সিক্সে প্রতিটি দল একে অপরের বিরুদ্ধে খেলে। পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষ চার দল সেমিফাইনালে অংশ নেয়। তারপর ফাইনাল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর