শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
নাগপুরে ৩য় টি-২০ অঘোষিত ফাইনাল

দিল্লিতে দাপট রাজকোটে অসহায়

দুই ম্যাচ থেকে দুই রকম শিক্ষা নিয়েই নাগপুরে ‘অঘোষিত’ ফাইনালে মাঠে নামবে টাইগাররা। জিতলে সৃষ্টি হবে নতুন ইতিহাস, হারলে হতাশা!

মেজবাহ্-উল-হক

দিল্লিতে দাপট রাজকোটে অসহায়

স্কোর কার্ডের দিকে তাকালেই বোঝা যায় রাজকোটের ম্যাচে টাইগাররা কতটা অসহায় ছিল! সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত আগের দুই আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচের প্রথম ইনিংসে দুই বিদেশি দল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড করেছিল ২০১ ও ১৯৬ রান। সেই একই উইকেটে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১৫৩!

রানবন্যার মাঠে স্বাগতিক ভারতের কাছে ছোট এই টার্গেটটা আরও ছোট্ট হয়ে যায় রোহিত শর্মার দানবীয় ব্যাটিংয়ে। মাত্র ৪৩ বলে ৮৫ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। আন্তর্জাতিক টি-২০-তে রোহিতই সেরা, তা আরেকবার বুঝিয়ে দিলেন। টি-২০-তে তার ৪টি সেঞ্চুরি, ১৮টি হাফ সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ রানের মালিকও তিনিই।

রাজকোটের ম্যাচটি ছিল রোহিতের শততম টি-২০। অবশ্য বিশেষ এই ম্যাচটি সেঞ্চুরি দিয়ে সেলিব্রেশন করতে পারতেন! কিন্তু আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের বল বুঝতে না পেরে ক্যাচ তুলে দেন। তার পরও রোহিত ঝড়ের কারণেই তো ২৬ বল আগেই জয় নিশ্চিত করে ভারত।

বাংলাদেশ দল বাজে ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েরও কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ওপর। দুই ওপেনারই খেলা অনেকটা শেষ করে দেন ১১৮ রানের জুটি গড়ে। ১৫৪ রানের টার্গেটে তারা পৌঁছে গেছে খুব সহজেই। প্রথমে ব্যাট করলে হয়তো স্কোর ২০০-এর কাছাকাছিই চলে যেত। কেননা, স্লোক ওভারের ২৬ বল থেকে অনায়াসে ৫০-এর বেশি রান তোলা কঠিন কিছু নয়। আর ব্যাটিং লাইনআপ যদি হয় ভারতের তাহলে তো কথাই নেই।

আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ছাড়া এ ম্যাচে বাংলাদেশের আর কোনো বোলার সুবিধাই করতে পারেননি। প্রথম ম্যাচের মতো এ ম্যাচে বেশি বোলার ব্যবহার করার চিন্তা করেছিলেন মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু লাভ হয়নি। কারণ মোসাদ্দেক ১ ওভারে ২৩ রান দিয়েছেন। আফিফ ১ ওভারে দিয়েছেন ১৩। তাই অধিনায়ক নিজেও বোলিং করার সাহস পাননি। সৌম্যর কথাও হয়তো মাথায় আসেনি।

তবে এমন ম্যাচেও প্রশংসা পেতে পারেন বিপ্লব। বাংলাদেশের এই লেগ স্পিনার তার সেরা দুই ডেলিভারিতে তুলে নিয়েছেন শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মার উইকেট। তার বোলিং ফিগার ৪-০-২৯-২। শেষ বলে ছক্কা হজম করতে না হলে ফিগারটা আরও সুন্দর দেখাত। তার পরও তারই তো সেরা বোলিং।

ধাওয়ানকে তিনি যেভাবে পরাস্ত করেছেন তা ছিল দেখার মতো। এগিয়ে গিয়ে ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছিলেন ভারতীয় ওপেনার। কিন্তু বল টার্ন করে গিয়ে ভেঙে দেয় উইকেট। আর রোহিত শর্মার টাইমিং হলেও বল ঘুরতে ঘুরতে অনেক ওপরে উঠে যায়। অতঃপর মোহাম্মদ মিথুনের ক্যাচ।

ভারতের ব্যাটিংয়ের সময় টাইগারদের ভালো লাগার মুহূর্ত বলতে বিপ্লবের ৪ ওভার! বাকিটা সময় একাধিপত্য ছিল ভারতীয়দের।

দিল্লির ম্যাচের সঙ্গে রাজকোটের ম্যাচের পার্থক্য যেন আকাশ-পাতাল! যদিও প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ায় এই ম্যাচে ভীষণ টেনশনে ছিলেন ভারতীয়রা। সে কারণেই দেখা গেছে, প্রথম ইনিংসে তাদের অনেক ফিল্ডিং মিস হয়েছে। বেশি তাড়াহুড়া করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে বোকার মতো আগেই ক্যাচ নিয়ে নেন ঋষভ পান্থ! ক্যাচ মিস করেছেন স্বয়ং রোহিত শর্মাও। বড় দলগুলো যখন এমন চাপের মধ্যে থাকে তখনই সুযোগটা আদায় করে নিতে হয়। কিন্তু সে কাজটি করতে পারেনি বাংলাদেশ দল।

কী দুর্দান্ত শুরু হয়েছিল রাজকোটে! পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বিনা উইকেটে ৫৮ রান। যেন স্বপ্নের মতো শুরু। তার পরও শেষটা হয়ে থাকল খুবই বাজে। ব্যাটিংয়ের মাঝপথেই ম্যাচ থেকে যেন ছিটকে যায় টাইগাররা।

প্রথম ম্যাচে দিল্লিতে দাপট দেখানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে রাজকোটে অসহায়! দুই ম্যাচ থেকে দুই রকম শিক্ষা নিয়েই নাগপুরে ‘অঘোষিত’ ফাইনালে মাঠে নামবে টাইগাররা। জিতলে সৃষ্টি হবে নতুন ইতিহাস, হারলে হতাশা! তবে এমন ম্যাচে ইতিহাস গড়ার চিন্তা মাথায় না রেখে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে খেলার কথা ভাবাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা! সে ক্ষেত্রে হারলেও ভরাডুবির সম্ভাবনা থাকে না! কারণ এটা পরীক্ষিত যে, নিজেদের সেরা দিনে বাংলাদেশ যে কোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখে!

সর্বশেষ খবর