সোমবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

বাবা-ভাইদের মতো শিশু শেখ রাসেলও ছিল খেলাপাগল

বড় হলে তুমি কী হবে। ওকি বলতো জানেন আমি ক্রুইফ, গার্ড মুলার ও বেকেন বাওয়ারের মতো বিখ্যাত ফুটবলার হব। ঠাট্টা করে বলতাম সালাউদ্দিন হতে ইচ্ছা হয় না। রাসেল বলত তুমি তো আর বিশ্বকাপ খেল না।

মনোয়ার হক

বাবা-ভাইদের মতো শিশু শেখ রাসেলও ছিল খেলাপাগল

ফুল ফুটার আগে ঝড়ে গেল। সুগন্ধি আর ছড়াতে পারল না। বলছিলাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শহীদ শেখ রাসেলের কথা। ১৯৭৫ সালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি শিশু শেখ রাসেল। বুলেটে ঝাঝড়া হয়ে যায় তার বুক। বঙ্গবন্ধু নিজেই ছিলেন খ্যাতনামা ফুটবলার। শহীদ শেখ কামাল শুধু আবাহনীর মতো জনপ্রিয় ক্লাবই প্রতিষ্ঠা করেননি তিনি প্রথম বিভাগ লিগে ক্রিকেট ও বাস্কেটবলে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় ছিলেন। শহীদ শেখ জামালও ঢাকা প্রথম বিভাগ লিগে আবাহনী ও আজাদের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন। শিশু বলে শেখ রাসেলের তো আর মাঠে নামা সম্ভব ছিল না। তবে খেলাপাগল ক্রীড়া পরিবারে সেও ছিল ক্রীড়াপ্রেমিক। দেশের ফুটবলে সুপারস্টার ও বর্তমানে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে আমার সখ্যতা ছিল। শেখ কামাল তো স্কুল জীবন থেকেই আমার বন্ধু। ৩২ নম্বর ঐতিহাসিক বাসভবনে আমার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। শেখ রাসেল তো তখন একেবারে বাচ্চা। অথচ ওই বয়সে সে ঘরের ভিতরেই ফুটবল ও ক্রিকেট নিয়ে মেতে থাকত।’ সালাউদ্দিন আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘৩২ নম্বরে গাড়ির গ্যারেজের সঙ্গে লাগোয়া বাস্কেট বলের ঝুড়ি ছিল। ছোট শেখ রাসেলকে দেখতাম ওই ঝুড়িতে বল ফেলার চেষ্টা করত। একদিন ওকে কোলে উঠিয়ে বললাম এবার বল মার। বাস্কেটে বল জড়াতেই ওর কী যে আনন্দ। মাঝেমধ্যে রাসেলকে আদর করে বলতাম বড় হলে তুমি কী হবে। ওকি বলতো জানেন আমি ক্রুইফ, গার্ড মুলার ও বেকেন বাওয়ারের মতো বিখ্যাত ফুটবলার হব। ঠাট্টা করে বলতাম সালাউদ্দিন হতে ইচ্ছা হয় না। রাসেল বলত তুমি তো আর বিশ্বকাপ খেল না। দেখেন শিশু বয়সেই যে বুঝে ফেলেছিল বিশ্বকাপে নামজাদা ফুটবলাররা খেলে। ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানি ও হল্যান্ডের ফাইনাল বেতবুনিয়া ভূ-উপকেন্দ্র থেকে সরাসরি সম্প্রচার করে। সেই থেকে যোহান ক্রুইফ, বেকেন বাওয়ার, গার্ড মুলার পরিচিত হয়ে উঠেন। তাদের পারফরম্যান্স শিশু রাসেলের মনে দাগ কেটেছিল।’

সালাউদ্দিন বলেন, ‘শিশু বয়সেই শেখ রাসেল ছিল খেলা পাগল। মাঝেমধ্যে আবাহনী ও ধানমন্ডি ক্লাব মাঠে  ফুটবল নিয়ে একাই মেতে থাকত। তখন মনে মনে ভাবতাম বাবা ভাইদের মতো শেখ রাসেলও বড় খেলোয়াড় হবে। ও যখন বল নিয়ে দৌড়াত তখন ওর মধ্যে সম্ভাবনা দেখতাম। আফসোস ফুটে ওঠার আগেই ঘাতকরা কেড়ে নিল শিশু শেখ রাসেলের প্রাণ।’

সর্বশেষ খবর