মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সেই ওয়ার্নারেই উড়ছে অস্ট্রেলিয়া

সেই ওয়ার্নারেই উড়ছে অস্ট্রেলিয়া

ফর্ম নেই, বুড়ো হয়ে গেছে, ধীরগতির- আর চলে না! বিশ্বকাপের আগে ডেভিড ওয়ার্নারকে নিয়ে এমন কথাই বলছিলেন ভক্তরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অসি তারকাকে নিয়ে অসংখ্য ট্রল হতে থাকে। বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে যে আইপিএলের পরের অংশে সান রাইজার্স হায়দরাবাদের একাদশেও রাখা হয়নি ৩৫ বছর বয়সী এই তারকাকে।

এরপরও অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ একাদশে ডেভিড ওয়ার্নারকে দেখে ভক্তদের অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। এজন্য অনেকে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারোন ফিঞ্চ ও টিম ম্যানেজমেন্টের সমালোচনাও করেছেন প্রকাশ্যে। কিন্তু অসি ক্যাপ্টেন বিশ্বাস হারাননি। তিনি প্রথম থেকেই ওয়ার্নারের পক্ষে কথা বলেছেন। ওপেনারের পক্ষে যেন রীতিমতো বাজি ধরেছিলেন। কিন্তু সেই বাজিতে তিনিই জিতেছেন।

ডেভিড ওয়ার্নার ক্যাপ্টেন ফিঞ্চের বিশ্বাসের এমন প্রতিদান দিলেন যে প্রথমবারের মতো টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলল অস্ট্রেলিয়া। যে ওয়ার্নারকে নিয়ে কদিন আগেই যারা সমালোচনায় মেতে ছিলেন তারাই এখন প্রশংসায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন।

প্রশংসা তো করারই কথা! ওয়ার্নার যে এখন মহানায়ক। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত দাপট দেখিয়ে হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরা। টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওয়ার্নার সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারোন ফিঞ্চ বলেন, ‘আমি আগেই ভেবেছিলাম, ওয়ার্নার ভালো করবে। আমি এক বিন্দুও মিথ্যা বলছি না, আমি প্রতীজ্ঞা করে বলছি, কয়েক মাস আগে আমি জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে বলেছিলাম, ডেভিকে (ডেভিড ওয়ার্নার) নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। দেখবেন, সে এবার ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হবে।’

ফিঞ্চের ভাষ্য, ‘সে (ওয়ার্নার) সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন এবং সে একজন যোদ্ধা। সে এমন একজন মানুষ যখন তার দেয়ালে পীঠ ঠেকে যায় তখনই আপনি সবচেয়ে সেরা ডেভিড ওয়ার্নারকে দেখতে পাবেন। এই টুর্নামেন্টটা কী দুর্দান্তভাবেই না শেষ করল। তার শেষ কয়েকটি ইনিংস দেখুন।’

৭ ম্যাচে ৪৮.১৬ গড়ে করেছেন ২৮৯ রান। যা রীতিমতো ঈর্ষণীয়। তবে গ্রুপ পর্বের প্রথম চার ম্যাচে ওয়ার্নারের ব্যাটিং ছিল খুবই সাদামাটা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে মাত্র ১৪ রান করেন। যদিও ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়ে প্রধান কৃতিত্ব ছিল বোলারদের। সেখানে ব্যাটসম্যানদের তেমন কিছু করার ছিল না। সেই ম্যাচে ওয়ার্নার সুবিধা করতে পারেননি। তবে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে পরের ম্যাচেই খেলেন ৬৫ রানের ইনিংস। এরপর আবারো দুই ম্যাচে ফ্লপ। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র ১ এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ১৮ রানের বেশি করতে পারেননি।

বিশ্বকাপের সব শেষ তিন ম্যাচ ছিল অস্ট্রেলিয়ার জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার নেট রানরেট বেশি দরকার ছিল। ওই ম্যাচে ওয়ার্নারের ভয়ংকর চেহেরা দেখা যায়। ৫৬ বলে খেলেন ৮৯ রানের হার না মানা এক ইনিংস। ওয়ার্নারের ক্যারিশমায় অসিদের রানরেট অনেক বেড়ে যায়। যে কারণে গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সমান পয়েন্ট হওয়ার পরও কেবলমাত্র রানরেটে এগিয়ে থাকার কারণে রানার্সআপ হিসেবে নকআউট পর্বের টিকিট পায় অস্ট্রেলিয়া।

সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাত্র ৩০ বলে খেলেন ৪৯ রানের ইনিংস। তবে ওই ম্যাচে আউট না হলেও নিজের বোকামির জন্য ড্রেসিংরুমে ফিরতে হয় ওয়ার্নারকে। হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বল খেলতে গিয়ে তার ব্যাট আঘাত করে মাটিতে। পাকিস্তান উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ান কটবিহাইন্ডের আবেদন করেন। আম্পায়ার আউট দিয়ে দেন। টেনশনে থাকায় ওয়ার্নারও বুঝতে পারলেন না। পরে রিপ্লেতে দেখা যায়, ব্যাট ও বলের মাঝে অনেক ফাঁকা। রিভিউ না নেওয়ায় এ যাত্রায় নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। তারপরও ওয়ার্নারের মারকুটে ইনিংসই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের ভীত গড়ে দেয়।

তারপর ফাইনালে যা দেখালেন তা অসাধারণ। ৩৮ বলে ৫৩ রানের ইনিংস। একে তো ফাইনাল, তার ওপর নিউজিল্যান্ডের দেওয়া বিশাল টার্গেট। চাপের বোঝা মাথায় নিয়েও অস্ট্রেলিয়াকে দারুণ একটা ভিত্তি এনে দেন ওয়ার্নার। পরে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল মার্শের ক্যারিশমায় প্রথমবারের মতো টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে যায় অস্ট্রেলিয়া। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পুরস্কার হিসেবে সিরিজ সেরা হয়ে গেলেন ওয়ার্নার।

ওয়ার্নার টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার পর তার স্ত্রী ক্যান্ডিস ওয়ার্নার ভক্তদের উদ্দেশ্যে টুইট করেন। হাফ  সেঞ্চুরির পর ডেভিড ওয়ার্নারের সেলিব্রেশনের ছবি দিয়ে স্ট্যাটাসে লিখেন- ‘ফর্ম নেই, বুড়ো হয়ে গেছে, কী ধীরগতির... অভিনন্দন!’

সর্বশেষ খবর