সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সম্ভাবনা দেখছি বাংলাদেশের

সম্ভাবনা দেখছি বাংলাদেশের

মাঠে ছিলাম না। তবুও ১৯৯৯ সালের ৪ অক্টোবর আমার জীবনে অন্যতম সেরা দিন ছিল। ভারত, নেপাল এমনকি পাকিস্তানও সাফ গেমসে ফুটবলে সোনা জিতে নিয়েছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের কাছে সোনা যেন স্বপ্নে পরিণত হয়েছিল। তখন তো ফুটবলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তাই বার বার ব্যর্থতায় সমালোচনায় ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। ফুটবলার ছিলাম বলে আমিও লজ্জায় বন্ধুদের সামনে মুখ দেখাতে পারতাম না। দেশের ফুটবলের জন্য সাফ গেমসে সোনা জেতাটা জরুরি হয়ে পড়েছিল। অপেক্ষার অবসান হলো। ১৯৯৯ সালের ৪ অক্টোবর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবার সাফ গেমসে সোনা জিতল। টিভিতে জুয়েল রানা, আলফাজদের উচ্ছ্বাস দেখে আবেগে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।

২৩ বছর পর কাঠমান্ডুর সেই দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের আজ আরেকটি ঐতিহাসিক ফাইনাল। এবার লড়াই বাংলাদেশ নারী জাতীয় দলের। যা ১৯৯৯ সালের মতো গুরুত্বপূর্ণ। এ কথা অস্বীকার করা যাবে না মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশ বেশ এগিয়েছে। তবে তা জুনিয়র লেভেলের সাফল্য ঘিরে। ছোটদের ট্রফি জেতার রেকর্ড থাকলেও বড় অর্থাৎ বাংলাদেশ নারী জাতীয় দলের ভা ার শূন্য। প্রাপ্তি বলতে ২০১৬ সালে ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হওয়া। এবার সুযোগ এসেছে সাবিনাদের বিজয়ের পতাকা ওড়ানোর। আজ নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের ফাইনাল। যারাই জিতবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নতুন চ্যাম্পিয়ন হবে।

ফাইনাল বলেই তো এখানে পয়েন্ট ভাগাভাগির সুযোগ নেই। এক দলকে জিততেই হবে। তাহলে চ্যাম্পিয়ন হবে কে? দুদেশেরই সামনে প্রথম শিরোপা জয়ের হাতছানি। তাই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সম্ভাবনা রয়েছে। ফাইনাল হবে ফাইনালের মতোই। দাপুটে জয় অসম্ভব বলা যায়। সহজ উত্তর হচ্ছে যারা ভালো খেলবে তারাই চ্যাম্পিয়ন হবে। ফলাফল কী হয় বলা মুশকিল। তবে ফাইনালে আমি বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখব। আরও সহজ করে বললে বলব সাবিনা, মান্ডাদের চ্যাম্পিয়নের সম্ভাবনা বেশি। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন এ কথা বলছি। দেখেন হোমে খেলা হলে দল সার্পোট পেলেও চাপে থাকে বেশি। নিজ দর্শকদের সামনে ভালো খেলাটা তখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এই চাপেই স্বাগতিকদের খেলা এলোমেলো হয়ে যায়। একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে নেপালের মেয়েরা এর আগে চারবার ফাইনাল খেললেও একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। তাই ঘরের মাঠে চাপটাও থাকবে বেশি।

বাংলাদেশ যে চাপে থাকবে না তাও বলছি না। তবে উজ্জীবিত হয়েই মাঠে নামবে। তাদের শিরোপার ক্ষুধা কতটা যে মারাত্মক তা গ্রুপ পর্বেই অপ্রতিরোধ্য মনোভাবে টের পাওয়া গেছে। মালদ্বীপ ৩-০, পাকিস্তান ৬-০ এমনকি ভারতকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে। সেমিফাইনালে ভুটানকে ৮-০ গোলে হারিয়ে দেয়। আমি বলব ভারতকে হারানোর পরই আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে গেছে। পুরুষ বা মেয়েদের জাতীয় দল কোনোভাবেই ভারতের সঙ্গে পেরে উঠছিল না। এবার ভালোভাবে পেরেছে। নেপালও সেমিফাইনালে ভারতকে হারিয়েছে। কিন্তু এবার সাফে অন্য এক বাংলাদেশকে দেখছি।

বাংলাদেশের বড় প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে অধিনায়ক সাবিনার ক্যারিশমা। অধিনায়ক যখন জ্বলে ওঠেন তখন সতীর্থরা অনুপ্রাণিত হন। সাবিনা দুই হ্যাটট্রিকসহ ৮ গোল করেছেন। নিজে খেলছেন অন্যদের খেলাচ্ছেন বা অন্যারাও সহযোগিতা করছেন। টিম বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি এখানেই।

প্রতিটি ম্যাচেই দেখা গেছে বাংলাদেশ অল্প সময়ের মধ্যে গোল করে এগিয়ে গেছে। আমি বলব জিততে হলে বাংলাদেশকে আজ প্রথমার্ধেই গোল করতে হবে। তা না হলে ম্যাচ নেপালও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। নেপালের চেয়ে বাংলাদেশ একটা দিকেই পিছিয়ে। তা হলো ফিজিক্যাল। আশার কথা হলো বাংলাদেশ আবার সেটপিসে গোল করতে পারে। আঁখি ও মাসুরাকে দিয়ে তা করাতে হবে। বন্ধু ছোটনের দক্ষ কোচিং তো আছেই। তারপর আবার জাতীয় দলের মেয়েরা দীর্ঘদিন এক সঙ্গেই খেলছে। বোঝা পড়া দারুণ। সব কিছু মিলিয়ে স্বপ্ন পূরণ হতে পারে বাংলাদেশের।

সর্বশেষ খবর