বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই টান টান উত্তেজনা। শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই। আর পেছনে লুকিয়ে থাকে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। খেলা শেষ হওয়ার পরও যা নিয়ে তোলপাড় চলে দুই দলের সমর্থকদের মাঝে। এবার সামনে এসেছে ‘ফেক থ্রো’। অভিযোগ ভারতের সবচেয়ে বড় তারকা বিরাট কোহলির বিরুদ্ধে।
২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ‘নো’ বল নিয়ে এবং একটি ক্যাচ নিয়ে চরম বিতর্ক হয়েছিল। যা নিয়ে ব্যাপক হইচই।
অ্যাডিলেডে কি হয়েছিল ম্যাচের দিন?
ঘটনাটি ঘটে ম্যাচের সপ্তম ওভারে। ভারতের ১৮৪ রানের জবাবে যখন বিনা উইকেটে ৬৬ রান করেছে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতের ভারতের বোলারদের রীতিমতো কচুকাটা করছেন টাইগার ওপেনার লিটন দাস। সপ্তাম ওভারে অক্ষর প্যাটেলের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের সীমানার দিকে খেলেছিলেন লিটন। ফিল্ডিং করেন আর্শদ্বীপ সিং। কিন্তু আর্শদ্বীপের থ্রো উইকেটরক্ষক দিনেশ কার্তিকের কাছে পৌঁছানোর আগেই ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা ফিল্ডার বিরাট কোহলি থ্রো করার অভিনয় করেন। আইসিসির আইনে যা অপরাধ।
বিষয়টি বলে আম্পায়ারের নজরে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান ম্যাচের পর বলেন, ‘ফেক থ্রো-র একটা ঘটনা ছিল। আম্পায়ারকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি বলেছেন, তিনি বিষয়টি খেয়াল করেননি। সে জন্য রিভিউতে যায়নি। মাঝখানে সাকিব এটা নিয়ে অনেক আলাপ করেছে এরাসমাসের (আম্পায়ার) সঙ্গে। খেলার পরও এটা নিয়ে আলাপ হয়েছে।’
আইসিসির আইনের ৪১.৫ ধারায় পরিষ্কার বলা আছে, আম্পায়ারকে বাধা দিলে কিংবা বিক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করলে আম্পায়াররা প্রতিপক্ষ দলকে ৫ রান জরিমানা করতে পারবেন।
ম্যাচে বাংলাদেশ ৫ রানেই হেরে যায়। তাই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের আগুনে পুড়ছেন টাইগার ভক্তরা। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অবস্থান কি?
দলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস মিডিয়াকে বলেছেন, ‘কিছু হলেই যে বোর্ডের মাধ্যমে আলাপ করা হবে, ব্যাপারটা এত সহজ নয়। এটা তো স্কুল নয় যে, আপনি গিয়ে হেডমাস্টারের কাছে অভিযোগ করবেন। পরিস্থিতিটা সে রকম নয়। তারপরও আমরা যেন প্রোপার ফোরামে গিয়ে কথা বলতে পারি -সেটা মাথায় আছে।’
ভারতের বিরুদ্ধে পরাজয়ের পর অধিনায়ক সাকিব আল হাসান কোনো অভিযোগ করেননি। অবশ্য অভিযোগ করার সুযোগও তার নেই। কারণ, তার মাথার ওপর ঝুলছে আইসিসির ‘কোড অব কনডাক্ট’ নামক এক খড়গ। কিছু বললেই শাস্তি অবধারিত। তবে সাকিব আল হাসান যে মাঠের আম্পায়ারদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন তা চোখে পড়েছে সবার।
বাংলাদেশের বোলিংয়ের সময় কোহলির কথা শুনে আম্পায়ারের নো বল দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলেন সাকিব। এমন কি ওই সময় কোহলির সঙ্গে সাকিবের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করতেও দেখা যায়।
শুধু তাই নয় বাংলাদেশের অভিযোগ আছে, মাঠ শুকানোর আগেই ম্যাচ শুরু করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইনিংসের ৭ ওভার খেলার পর বৃষ্টি নামে। ওই সময় ডার্কওয়াথ/লুইস পদ্ধতি অনুসারে ১৭ রানে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ৫০ মিনিট খেলা বন্ধ রাখার পর পুনরায় শুরু করা হয়। ভেজা মাঠে খেলা নিয়েও আক্ষেপ আছে বাংলাদেশের। নুরুল হাসান সোহান সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘মাঠ যে ভেজা আপনারাও দেখছেন বাইরে থেকে আমরাও দেখছি। শেষ পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয় যে যখন আমরা কথা বলি, একটা ফেক থ্রোও ছিল। যেটায় ৫ রান পেনাল্টি হয়তো হতে পারত। যেটা আমাদের দিকে আসতে পারত। দুর্ভাগ্যবশত সেটাও আসেনি।’
ভারতের পত্রিকাতেও বিরাট কোহলির ফেক থ্রো-র বিষয়টি নিয়ে নিউজ হয়েছে। ভারতের জনপ্রিয় দৈনিক আনন্দবাজার গতকাল তাদের শিরোনামে ‘ভুয়ো ফিল্ডিং! বিরাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাচ্ছে বাংলাদেশ?’
বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঠের আম্পায়ার এরাসমাসকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন ভক্তরা। পাকিস্তানের এক সমর্থক এরাসমাসের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘অবিশ্বাস্য রকমের ধারাবাহিকতা, থার্ড ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার এই ছেলের জন্য!’
শুধু ভক্ত কিংবা ক্রিকেটাররা নন, এই ম্যাচ নিয়ে আলোচনা করছেন বিশ্বের তারকা ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও। তবে তাদের আলোচনার প্রসঙ্গটা একটু ভিন্ন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার এবং কিংবদন্তি কোচ টম মুডি যেমন বলেছেন, ‘ম্যাচটি বাংলাদেশ জিততে পারত, যদি তারা বৃষ্টির পর অযথাই পাওয়ার হিটিং করতে না যেত। অত তাড়াহুড়া করার দরকার ছিল না।’
এক ম্যাচ নিয়ে বিশ্ব জুড়ে আলোচনা। তোলপাড় ক্রিকেট দুনিয়া। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরেও বিশ্ব জুড়ে এমন আলোচনা বরং ‘বাংলাদেশ-ভারত’ লড়াইয়ের মর্যাদা অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রমাণ করে দিচ্ছে, এখন ক্রিকেটের সেরা লড়াই ‘বাংলাদেশ বনাম ভারত’!
কী ঘটেছিল?
সপ্তম ওভারে অক্ষর প্যাটেলের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের সীমানার দিকে খেলেছিলেন লিটন। ফিল্ডিং করেন আর্শদ্বীপ সিং। কিন্তু আর্শদ্বীপের থ্রো উইকেটরক্ষক দিনেশ কার্তিকের কাছে পৌঁছানোর আগেই ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা ফিল্ডার বিরাট কোহলি থ্রো করার অভিনয় করেন। আইসিসির আইনে যা অপরাধ।
আম্পায়ারের সঙ্গে সাকিবের কথোপকথন
ম্যাচে একাধিকবার মাঠে আম্পায়ারের সঙ্গে কথোপকথন করেছেন সাকিব আল হাসান। কখনো কোহলির কথায় আম্পায়ারের নো-বল দেওয়ার কারণ জানতে চেয়েছেন, আবার মাঠ শুকানোর আগে খেলার বিষয়েও আপত্তি জানিয়েছেন।
আইসিসির আইন
আইসিসির আইনের ৪১.৫ ধারায় পরিষ্কার বলা আছে, আম্পায়ারকে বাধা দিলে কিংবা বিক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করলে আম্পায়াররা প্রতিপক্ষ দলকে ৫ রান জরিমানা করতে পারবেন।
সোহানের অভিযোগ
‘ফেক থ্রো-র একটা ঘটনা ছিল। আম্পায়ারকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি বলেছেন, তিনি বিষয়টি খেয়াল করেননি। সে জন্য রিভিউতে যায়নি। মাঝখানে সাকিব এটা নিয়ে অনেক আলাপ করেছে এরাসমাসের (আম্পায়ার) সঙ্গে। খেলার পরও এটা নিয়ে আলাপ হয়েছে।’
বিসিবির অবস্থান
ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেছেন, ‘কিছু হলেই যে বোর্ডের মাধ্যমে আলাপ করা হবে, ব্যাপারটা এত সহজ নয়। এটা তো স্কুল নয় যে, আপনি গিয়ে হেডমাস্টারের কাছে অভিযোগ করবেন। পরিস্থিতিটা সে রকম নয়। তারপরও আমরা যেন প্রোপার ফোরামে গিয়ে কথা বলতে পারি -সেটা মাথায় আছে।’
সমর্থকের টুইট
পাকিস্তানের এক সমর্থক এরাসমাসের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘অবিশ্বাস্য রকমের ধারাবাহিকতা, থার্ড ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার এই ছেলের জন্য!’