শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

জাভিতে বদলে যাওয়া কাতার

জাভিতে বদলে যাওয়া কাতার

কাতারে ওড়ার আগে তুরিনে অনুশীলনে ব্যস্ত পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল -এএফপি

কাতারের রাজধানী দোহায় বিশাল এলাকাজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে আল সাদ ক্লাবের বিভিন্ন স্থাপনা। প্রায় ১৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়াম তাদের হোম গ্রাউন্ড। এর আশপাশে আরও দুটি মাঠ আছে ফ্যাসিলিটি ওয়ান এবং ফ্যাসিলিটি টু নামে। এ ছাড়া আছে ফুটবল মাঠের সাইজের দুটি ট্রেনিং গ্রাউন্ড। সেখানে প্রীতি ম্যাচ খেলে আল সাদ। আহমেদ বিন তাইমিয়া, তালহা বিন খালিদ আর উম্মে আল গারাদি স্ট্রিট ঘিরে রেখেছে পুরো আল সাদ ক্লাবের কমপ্লেক্স। কাতারের ফুটবল ইতিহাসে এই ক্লাবই সবচেয়ে সফল। স্থানীয় লিগগুলোর পাশাপাশি আল সাদ ক্লাব শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে এশিয়ান লেভেলেও। এই ক্লাবের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পেছনেই লুকিয়ে আছে ফুটবলের সাফল্যগাথা।

কাতার ফুটবলে খুব বড় কোনো শক্তি ছিল না এক দশক আগেও। তবে ২০১০ সালে বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে কাতারের নাম ঘোষণার পর ফুটবলে বাড়তি মনোযোগ দেয় দেশটি। বড় বাজেট নিয়ে নেমে যায় ফুটবলের উন্নয়নে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি পৃথিবীর সেরা তারকাদের নিয়ে আসে কাতার স্টারস লিগে। ২০১৫ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে আল সাদ ক্লাবে নাম লেখান বিশ্বকাপজয়ী স্প্যানিশ তারকা জাভি হার্নান্দেজ। ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই ক্লাবের জার্সিতে খেলেছেন তিনি। এই কয়েক বছরে জাভি আল সাদকে চারটি ট্রফি উপহার দেন। এরপর আরও দুই বছর কোচ হিসেবে আল সাদে ছিলেন তিনি। ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে কাতার ফুটবলের দর্শনটাই বদলে দেন জাভি হার্নান্দেজ। ফুটবলার ও কোচ হিসেবে তার কাছ থেকে অনেক কিছুই গ্রহণ করেছে কাতার। ২০১৯ সালে কাতারের এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনেও রয়েছে জাভি হার্নান্দেজের ফুটবল দর্শনের অবদান। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে আল সাদ ক্লাবের স্পোর্টিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ গোলাম বলছিলেন, ‘জাভি হার্নান্দেজ ফুটবল ইতিহাসের সেরা একজন ফুটবলার। সেরা একজন কোচ। বার্সেলোনাকে কোন অবস্থা থেকে কোথায় নিয়ে গেছেন দেখুন। তাকে আমরা নিজেদের দলে পেয়েছিলাম ফুটবলার এবং কোচ হিসেবে। এটা আল সাদ ক্লাবের জন্যই কেবল নয়, কাতারের জন্যও ছিল অনেক গৌরবের।’

কীভাবে কাতারের ফুটবল বদলে দিলেন জাভি! ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপ জয় করে কাতার। সেবার আল সাদ ক্লাবের নয়জন ফুটবলার ছিলেন কাতারের জাতীয় দলে। প্রায় সবাই ছিলেন সেরা একাদশের। জাভি হার্নান্দেজের সতীর্থ ছিলেন এই নয়জনই। তার কাছ থেকে শিখেছেন ফুটবলের দর্শন। কীভাবে একটা গ্রুপ হিসেবে খেলে নিজেদের সব দুর্বলতা ঢেকে দেওয়া যায়। আল সাদ ক্লাবের স্পোর্টিং ডিরেক্টর বলছিলেন, ‘আল সাদ ক্লাবের বর্তমান যে সফলতা এর পেছনে জাভি হার্নান্দেজের অবদান অনেক। কেবল আমাদের ক্লাবের কথাই বলব না, কাতার জাতীয় দলের সফলতার পেছনেও আছে জাভি হার্নান্দেজের ভূমিকা।’

আল সাদ ক্লাব নানা দিক দিয়ে পৃথিবীর অন্যতম সেরা এক ক্লাব হয়ে উঠেছে। মোহাম্মদ গোলাম বলেন, ‘আমাদের ক্লাব বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম সেরা ক্লাব। আমাদের ক্লাব থেকে ১৫ জন ফুটবলার এবার বিশ্বকাপে খেলছেন। এদের মধ্যে ১৩ জন কাতার জাতীয় দলে এবং একজন করে ঘানা (আন্দ্রে আইয়ু) ও দক্ষিণ কোরিয়া (উ ইয়াঙ) জাতীয় দলের জার্সিতে বিশবকাপ খেলবেন। বিশ্বকাপে ফুটবলারের অংশগ্রহণের দিক থেকে আমাদের ক্লাব আছে চার নম্বরে।’ এই তালিকায় শীর্ষে আছে বায়ার্ন মিউনিখ। জার্মান জায়ান্টদের ১৭ জন ফুটবলার থাকছেন কাতার বিশ্বকাপে। এ ছাড়া বার্সেলোনা ও ম্যানচেস্টার সিটির ১৬ জন করে ফুটবলার আছেন বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপে ফুটবলার থাকায় ফিফার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের প্রণোদনা পাবে আল সাদ ক্লাব। তবে সেই প্রণোদনা নিয়ে মোটেও ভাবছে না তারা। ফুটবল দিয়ে বিশ্বজয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে জাভি হার্নান্দেজের সাবেক এ দল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর