শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সেই চার্লসই জেতালেন কুমিল্লাকে

মেজবাহ্-উল-হক

সেই চার্লসই জেতালেন কুমিল্লাকে

ছবি : রোহেত রাজীব

রাতে রুবেল হোসেনের ঘুম হওয়ার কথা নয়! চার চারবারের প্রচেষ্টাতেও তিনি একটি ক্যাচ লুফে নিতে পারলেন না। আর যার ক্যাচ মিস করেছেন সেই জনসন চার্লসই রুবেলের দল সিলেট স্ট্রাইকার্সের স¦প্নভঙ্গ করে দিলেন। ৫২ বলে ৭৯ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে কুমিল্লাকে শিরোপা এনে দিলেন ক্যারিবিয়ান তারকা।

গতকাল সিলেটের বোলার লিন্ডের বলে ডিপ স্কোয়ার লেগে রুবেল যখন সহজ ক্যাচটি লুফে নিতে ব্যর্থ হলেন তখন চার্লসের রান ছিল মাত্র ৮। ওই সময় ক্যাচটি নিতে পারলে ম্যাচের মোমেন্টামই হয়তো বদলে যেত। কিন্তু রুবেল পারেননি। ক্যাচ মিস যে ম্যাচ মিস তা যেন খুব ভালো করেই টের পেলেন তিনি। শুধু তাই নয়, কাল শেষ দিকে রুবেলের এক ওভারে ২৩ রান নেন চার্লস। আর ওই ওভারই সিলেটকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন।

তবে চার্লস যদি ফাইনাল জয়ের নায়ক হন পার্শ্বনায়ক নিঃসন্দেহে লিটন দাস। ইনিংস ওপেন করতে নেমে তিনি যেভাবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ৫৫ রানের ইনিংস খেলেছেন তা ছিল দেখার মতো। চার্লসকে সঙ্গে নিয়ে তিনি তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৭ বলে করেন ৭০ রান। ম্যাচের মোড়ই ঘুরিয়ে দেন। এরপর চতুর্থ উইকেট জুটিতে মঈন আলীর সঙ্গে চার্লসের আরেকটি ৪০ বলে অপরাজিত ৭২ রানের বিধ্বংসী জুটি সিলেটকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়।

গতকাল সিলেট চ্যাম্পিয়ন হলে নায়ক হতেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং মুশফিকুর রহিম। এবারের আসরে শুরু থেকেই সুপার ফর্মে ছিলেন এই তারকা ওপেনার। ফাইনালে তার নামের সঙ্গে কাজের একদমই মিল ছিল না! নাজমুল হোসেন শান্ত ফাইনালে যেন রীতিমতো অশান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। খেললেন ৪৫ বলে ৬৪ রানের ইনিংস। ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিং করে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ-বিপিএলের রেকর্ডবুকে। প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলের এক আসরে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন শান্ত।

তবে ব্যাটিংয়ের চেয়েও যেন সুন্দর ছিল তার লিটন দাসের ক্যাচ লুফে নেওয়ার মুহূর্তটি। ৩৯ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলা লিটন যখন বাইশ গজে ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন তখনই রুবেলের বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে দুর্দান্ত এক ড্রাইভে বল তালুবন্দি করে নৃত্যে মেতে ওঠেন। ম্যাচের মোড়ই যেন ঘুরিয়ে দেন। তারপরও কোনো লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত হেরে যায় তার দল সিলেট।

সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে বাইশ গজে অশান্ত মেজাজে শুরু করেছিলেন শান্ত, আর শেষটা ছন্দময় করে দিলেন মুশফিকুর রহিম। খেললেন মাত্র ৪৮ বলে ৭৪ রানের সাইক্লোন ইনিংস। পাঁচটি বাউন্ডারির সঙ্গে তিনটি বিশাল ছক্কা। মুশফিকের কী দারুণ ব্যাটিং। মিস্টার ডিপেন্ডেবল যখন বাইশ গজে ঝড় তুলেছিলেন তখন স্কোর বোর্ডে রানের গতিও বাড়ছিল বিদ্যুৎগতিতে।

এবারের বিপিএলে সময়টা খুব ভালো যাচ্ছিল না মুশফিকের। কখনো ব্যাটিং করার সুযোগই পাচ্ছিলেন না, আবার সুযোগ পেলেও ইনিংস বড় হচ্ছিল না। তবে খুবই বাজে ব্যাটিং করেছেন তা কিন্তু নয়। ১৫ ম্যাচে ৩৯.৬৬ গড়ে ৩৫৭ রান। স্ট্রাইকরেটও ১৩৩। তারপরও সেই চেনা মুশফিককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু ফাইনালে এসেই নিজেকে যেন নতুন করে চেনালেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।

জাতীয় দলে নাজমুল হোসেন শান্তর ভূমিকা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়। কিন্তু বিপিএলে সেই শান্ত অন্য মাত্রার এক ব্যাটসম্যান। যদিও তার টি-২০ ওপেনার হিসেবে ১১৬.৭৪ স্ট্রাইকরেট আহামরি কিছু নয়। কিন্তু এই শান্ত যে নির্ভরতার প্রতীক। একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করতে তার জুড়ি নেই।

এ আসরে ১৫ ম্যাচে তার মোট রান ৫১৬। গড় ৩৯.৬৯। বিপিএলের নয় আসর মিলে এক আসরে এর আগে আর মাত্র একজন ব্যাটসম্যানই ৫০০ রান করতে পেরেছিলেন, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো। ২০১৯ সালে রংপুর রাইডার্সের হয়ে করেছিলেন ৫৫৮ রান। সব মিলিয়ে শান্ত দ্বিতীয় স্থানে।

গতকাল সতীর্থ মুশফিকুর রহিমকে টপকে গেছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের ওপেনার। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এক আসরে সর্বোচ্চ রান ছিল মুশির। ২০১৯-২০ মৌসুমে খুলনা টাইগার্সের জার্সিতে তিনি করেছিলেন ৪৯১ রান।

শান্ত ও মুশফিকের অসাধারণ দুই ইনিংসে ভর করে সিলেট প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১৭৫ রান করে।

সর্বশেষ খবর