বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

পেনশনের টাকায় স্কোয়াশ একাডেমি

মেজবাহ্-উল-হক

পেনশনের টাকায় স্কোয়াশ একাডেমি

যাত্রা শুরু হলো ঢাকা স্কোয়াশ একাডেমির। মিরপুরে গতকাল একাডেমিতে খুদে স্কোয়াশ খেলোয়াড়দের সঙ্গে একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ব্রি. জে. জি এম কামরুল ইসলাম (অব.) ও অতিথিরা

জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে ক্রিকেট, ফুটবল কিংবা হকির ধারে কাছেও নেই স্কোয়াশ। তবে এক সময় এটি ছিল দেশের বেশ আলোচিত একটি ক্রীড়া ইভেন্ট। নিয়মিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে পদকও পেত বাংলাদেশ। কিন্তু সেই স্কোয়াশ এখন মৃতপ্রায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্কোয়াশ কোর্টগুলোও এখন পরিত্যক্ত। কোথাও কোথাও স্কোয়াশ কোর্ট দখল করে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা।

তবে সুখবর হচ্ছে, সম্প্রতি স্কোয়াশ পেয়েছে একজন আলোকবর্তিতা। তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জি এম কামরুল ইসলাম (অব.)। নিজের পেনশনের অর্থ দিয়ে সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে রাজধানীর মিরপুরে গড়ে তুলেছেন আবাসিক স্কোয়াশ একাডেমি। নাম ‘ঢাকা স্কোয়াশ একাডেমি (ডিএসএ)’। ব্রিগেডিয়ার কামরুলের লক্ষ্য নিজের একাডেমিতে অন্তত ২০ জন হত দরিদ্র পরিবারের সন্তানকে বিশ্বমানের ট্রেনিং দিয়ে তারকা স্কোয়াশ খেলোয়াড় বানাবেন। যে খেলোয়াড়রা এক সময় বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবেন।

একাডেমির কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে কোর্ট তৈরি হয়ে গেছে। কমপ্লেক্সে জিমের ব্যবস্থাও আছে। গতকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রথম টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছে। টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে আশেপাশের বেশ ক’টি স্কুলের ৪০ জন কোমলমতি শিক্ষার্থী।

একাডেমি নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে জি এম কামরুল বলেন, ‘এই দেশের কারণে আমি অনেক সম্মান পেয়েছি। সেনাবাহিনীর বড় পদে চাকরি করেছি। আমারও দায়িত্ব আছে দেশের জন্য কিছু করার। তাই বিবেকের তাড়নায় এবং নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই আমি আমার পেনশনের অর্থ দিয়ে এই একাডেমি করেছি।’

দক্ষিণ এশিয়া (এসএ) গেমসে স্কোয়াশ থেকে নিয়মিত পদক পায় বাংলাদেশ। তারপরও বাংলাদেশ স্কোয়াশ ফেডারেশনের নিজস্ব কোনো কোর্ট নেই। গুলশান, উত্তরা, চট্টগ্রাম ক্লাব এবং সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর কোর্টে প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। তবে নিজস্ব কোর্ট না হওয়া পর্যন্ত স্কোয়াশ ফেডারেশন এখন থেকে অন্তর্বর্তীকালীন এই একাডেমির কোর্ট ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে।

কামরুলের স্কোয়াশ একাডেমিতে আবাসিক ব্যবস্থাও থাকছে। হত দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা পাচ্ছেন দারুণ সুযোগ। কামরুল বলেন, ‘আমাদের দেশের দরিদ্র পরিবারে অনেক মেধা লুকিয়ে রয়েছে। তারা বিকাশ ঘটানোর সুযোগ পায় না। তাদের সে সামর্থ্যও নেই। এমন ২০টি পরিবারের ২০ জনকে যদি আমি বিশ্বমানের ট্রেনিং দিয়ে তারকা স্কোয়াশ খেলেয়াড় বানাতে পারি তাহলেই আমার স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে।’

কামরুল একজন ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর তারকা হকি খেলোয়াড়। গলফ, ফুটবল, অ্যাথলেটিকস এবং বাস্টেবলেও দারুণ পারদর্শী ছিলেন। ভিক্টোরিয়া ক্লাবের হকি দলে খেলেছেন। গলফের সংগঠক হিসেবেও তার দারুণ সুনাম আছে। তিনি বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনে (বিজিএফ) জেনারেল সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ প্রফেশনাল গলফার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএ) সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন সফল।

বর্তমানে ব্রিগেডিয়ার কামরুল স্কোয়াশ অ্যান্ড র‌্যাকেট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর ঝিমিয়ে পড়া স্কোয়াশকে জাগিয়ে তুলতে একের পর এক টুর্নামেন্ট করছেন। এমন কি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেরও আয়োজন করেছেন তিনি।

কামরুল বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যেসব স্কোয়াশ কোর্ট আছে, তা দখল হয়ে গেছে। সেগুলো পুনরুদ্ধার করার বিভিন্ন উদ্যোগ নেই। বিলুপ্তপ্রায় এই খেলাকে মূলধারায় নিয়ে আসতে নানারকম আয়োজন করি। যেহেতু আমি স্কোয়াশের দায়িত্ব নিয়েছি, সেখান থেকেও এমন একটি একাডেমি করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।’

ক্রিকেট কিংবা ফুটবলের জনপ্রিয়তার পেছনে একটা বড় কারণ হচ্ছে, আনাচে-কানাচে, অলিতে-গলিতে কিংবা ফসল কাটার পর জমিতেও কিংবা স্কুল-কলেজের ছোট মাঠেও খেলা যায়, খেলা হয়। কিন্তু স্কোয়াশে কি তা সম্ভব?

হ্যাঁ, সম্ভব! চাইলে প্রতিটি স্কুলেই স্কোয়াশ চালু করা সম্ভব। যে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস হয় সেখানেই স্কোয়াশও খেলা সম্ভব বলে মনে করেন কামরুল। এ চিন্তা থেকেই ‘ক্লাসরুম স্কোয়াশ’ ধারণার প্রবর্তন করেন। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে ‘ক্লাসরুম স্কোয়াশ’ চালুও করেছেন। ‘ক্লাসরুম স্কোয়াশ’ ধারণার কার্যকারিতা দেখে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে লিখিতভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাটি চালু করার জন্য। আর ‘ক্লাসরুম স্কোয়াশ’ চালু হলে ক্রিকেট, ফুটবলের মতো স্কোয়াশের জনপ্রিয়তাও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন ব্রিগেডিয়ার কামরুল, ‘ক্লাসরুমই হবে স্কোয়াশের কোর্ট। ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা বেঞ্চ এক সাইডে রেখে খেলবেন। তাই আলাদা করে কোনো কোর্টের দরকার নেই। বাংলাদেশের যে সব স্কুলে অন্তত ওয়াল আছে সেখানে স্কোয়াশ খেলা যাবে। আমার এই ধারণা বিশ্বের উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশে প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে।’

ব্রিগেডিয়ার কামরুলের সহধর্মিণী নাসরিন বেগমও স্কোয়াশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। একাডেমির তত্ত্বাবধানে আছেন তিনি। ঢাকা স্কোয়াশ একাডেমিই যেন এখন তাদের সংসার!

সর্বশেষ খবর