বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

সাফল্যের কান্ডারিরা এখন কেন অসহায়

নারী ফুটবল নিয়ে হচ্ছেটা কী?

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সাফল্যের কান্ডারিরা এখন কেন অসহায়
শোনা যাচ্ছে, নারী কোচ হিসেবে পলের বেতন হবে ২০ লাখ টাকা। ছোটন যেখানে পেতেন দেড় লাখের মতো, সেখানে পলের আকাশছোঁয়া পারিশ্রমিক কেন? এখানে কি বাফুফের কেউ বড় কোনো সুবিধা পাবেন?

 

যে দুটি ক্লাবকে বাংলাদেশের ফুটবলের প্রাণ বলা হতো, সেই আবাহনী-মোহামেডান অনেক দিন পর ফাইনালে মুখোমুখি হলো। ফেডারেশন কাপের একি শুধুই ফাইনাল, যুদ্ধ বললেও ভুল হবে না। বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসে একে সেরা ফাইনালও বলা যায়। আবাহনী-মোহামেডানের এ ধরনের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই মানে ফুটবল ঘিরে নতুন আশার সঞ্চার। জাতীয় দলের অনেক সাবেক তারকা ফুটবলার বলেছেন, আমরা চাই মোহামেডান-আবাহনীর এমন লড়াই দেখতে। এতে হারানো উত্তেজনা ফিরবে। তেমনি দেশের ফুটবল উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। প্রশ্ন হচ্ছে তা কি সম্ভব?

ফুটবলপ্রেমীরা এ খেলা ঘিরে আশা করতেই পারেন। কারণ এ খেলা বাঙালির রক্তে মিশে গেছে। কিন্তু উন্নয়নের দায়িত্ব দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা বাফুফের ওপর। সত্যিই কি তারা ফুটবলের উন্নয়ন চায়? ফুটবলসংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, উন্নয়নের বদলে এ খেলা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে ফেডারেশনই। একটা উদাহরণই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট। পুরুষ জাতীয় দলের মান একেবারে তলানিতে। দুই দশক ধরে শিরোপা নেই। বলা যায় লাইফ সাপোর্টে আছে। পুরুষ জাতীয় দল ঘিরে ভালো কিছু হবে, সে আশার মৃত্যু ঘটেছে আগেই। দেশের ফুটবলের গর্ব এখন নারী খেলোয়াড়রা। কিন্তু সেই নারী ফুটবলারদের নিয়ে হচ্ছেটা কী?

লাখ লাখ টাকা বেতনে বিদেশি কোচ নিয়োগ দিয়েও পুরুষ ফুটবলে দুর্দিন কাটছে না। সাফ চ্যাম্পিয়নে সেমি খেলাটাই এখন স্বপ্ন। নামতে নামতে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ২০০ ছুঁইছুঁই। অথচ বাংলাদেশের গোলাম রব্বানী ছোটন মেয়েদের নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। তাঁরই প্রশিক্ষণে এতসব সাফল্য। অথচ ছোটনও দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন। বলেছেন তিনি ক্লান্ত। আসলে কি তাই? অনেকেই বলেন, ছোটন চক্রান্তের শিকার। এত সাফল্য এনে দেওয়ার পরও তাঁকে অপমান সহ্য করতে হচ্ছিল। তাঁর প্রশিক্ষণে মেয়েদের জয়জয়কার। অথচ সভাপতির মুখে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলির প্রশংসা! তিনি বলেন, পলের কারণে মেয়েদের জয়জয়কার। এমন অপমানেই ক্ষোভে দায়িত্ব ছেড়েছেন ছোটন। টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের মূল কাজ তো ছিল জাতীয় দল ঘিরে। নারী দল নিয়ে কেন তাঁর এত মাথাব্যথা? পল চাচ্ছিলেন জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে। বাফুফে হয়তোবা পলের রাস্তা সহজ করে তুলতে নারী দলের ভিতর অস্থিরতা তৈরি করেছে। শোনা যাচ্ছে, নারী কোচ হিসেবে পলের বেতন হবে ২০ লাখ টাকা। ছোটন যেখানে পেতেন দেড় লাখের মতো, সেখানে পলের আকাশছোঁয়া পারিশ্রমিক কেন? এখানে কি বাফুফের কেউ বড় কোনো সুবিধা পাবেন?

সাবিনা খাতুন বলেছেন, ‘ছোটন স্যার শুধু আমাদের কোচ নন। উনি আমাদের বাবার মতো।’ এতেই বোঝা যায় নারী দলে ছোটনের গুরুত্ব। বাফুফে ঘিরে শুধুই সমালোচনা; যা প্রাপ্তি নারী দল থেকে। এখন সেই নারী ফুটবল কি ধ্বংসের মুখে? এতে লাভ কী? লাভ হয়তো আছে। তা না হলে সালাউদ্দিন কেন এমন অস্থিরতার মধ্যেও বলবেন, ‘ম্যারাডোনা গেছেন মেসি এসেছেন। ছোটন গেছে নতুন কোচ আসবে। এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।’ তিনি তো এমন কথা বলবেনই। এতদিন সভাপতি থাকার পরও তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ। তিনি কেন পদত্যাগ করছেন না?

সাবেক জাতীয় দলের ফুটবলার আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু বলেন, ‘আসলে সালাউদ্দিন ভাইয়ের কোনো লজ্জা নেই। ফিফার অনুদান লুটপাট হয়েছে এ নিয়ে তিনি বিতর্কিত। তারপরও ফুটবল ঘিরে একের পর এক নতুন বিতর্ক টেনে আনছেন। জানি না তাঁর এ ক্ষমতার উৎস কোথায়। সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদীও প্রায় ১৬ বছর ধরে ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্বে আছেন। তাদের আমলেই তো ১২২ থেকে ফিফা র‌্যাংকিং এখন ১৯২ ঠেকেছে। ছোটনের পদত্যাগ নিয়ে সালাউদ্দিন ভাই যা বলেছেন তা সত্য। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে এতদিন দায়িত্ব থেকে সমালোচনা ছাড়া ফুটবলকে তিনি কিছুই তো দিতে পারেননি। তাহলে তিনি কেন পদত্যাগ করেন না। এ পদে এত মধু কিসে। সেটাই আমি তাঁর কাছে জানতে চাই।’

সর্বশেষ খবর