ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ জাকের আলী অনিক। লেট মিডল অর্ডারে দারুণ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন। ছোট্ট পরিসরের সফল ক্রিকেটার জাকের এই প্রথম সাদা পোশাকে জাতীয় দলে খেলতে ডাক পেলেন। অবশ্য এ জন্য ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল তার। বাঁ হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম ইনজুরির জন্য ভারত সফর থেকে ছিটকে পড়েছেন। তার জায়গায় ভারতের বিপক্ষে দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজে ডাক পেয়েছেন জাকের আলী। টেস্ট স্কোয়াডে প্রথম ডাক পেলেও বাংলাদেশের হয়ে গত ১১ মাস নিয়মিত টি-২০ খেলছেন। ১৭টি টি-২০ ম্যাচও খেলেছেন টাইগারদের পক্ষে। টি-২০ বিশ্বকাপে নিয়মিত ছিলেন একাদশেও। সেই অর্থে জাতীয় দলে একেবারে অপরিচিত মুখ নয় উইকেটরক্ষক ব্যাটার জাকেরের। জাকেরকে নিয়ে ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ স্কোয়াডে উইকেটরক্ষকের সংখ্যা তিন। বাকি দুজন লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম। ভারতের বিপক্ষে ঘোষিত স্কোয়াডে একমাত্র নতুন মুখ জাকের।
পাকিস্তানে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ে প্রথম টেস্ট খেলেছিলেন শরিফুল। দ্বিতীয় টেস্ট আর খেলা হয়নি। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্ট জিতেছিল ১০ উইকেটে। শরিফুল দুই ইনিংস মিলিয়ে উইকেট পেয়েছিলেন ৩টি। দ্বিতীয় টেস্টে খেলেননি। শরিফুল এখন শতভাগ ফিট নন। ১০-১২ ওভার বোলিং করলেই পায়ে ব্যথা অনুভব করেন। যদিও বাঁ হাতি পেসার মনে করেন, ১০-১২ দিনের মধ্যে পুরোপুরি ফিট হয়ে যাবেন। কিন্তু বিসিবি রিস্ক নেয়নি। সে জন্য চার পেসার- তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা, সৈয়দ খালেদ হোসেন ও হাসান মাহমুদকে নিয়েই স্কোয়াড সাজিয়েছে। স্কোয়াডে স্পিনার চারজন। সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ স্পিন অলরাউন্ডার। জেনুইন স্পিনার দুজন- তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। তাইজুল বাঁ হাতি স্পিনার। একটি মাইলফলকের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাঁ হাতি স্পিনার। মাত্র ৫ উইকেট পেলেই সাকিবের পর দ্বিতীয় টাইগার স্পিনার হিসেবে ২০০ উইকেটের মাইলফলক গড়বেন। তাইজুলের উইকেট ১৯৫টি। নাঈম অফ স্পিনার। সাকিব বাঁ হাতি স্পিনার কাম অলরাউন্ডার। সারের পক্ষে কাউন্টি ক্রিকেট খেলছেন। টনটনে সমারসেটের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে ১২ রান করলেও দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮ উইকেট নিয়েছেন। নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে জাতীয় দল ঢাকা ছাড়বে ১৫ সেপ্টেম্বর। সাকিব লন্ডন থেকে সরাসরি ভারতে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। মেহেদি মিরাজও জেনুইন অলরাউন্ডার। পাকিস্তানের মাটিতে ১৫৫ রানের পাশাপশি ১০ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা হয়েছেন। ভারত সফরে মিডল অর্ডারের অন্যতম ভরসা তিনি। সফরে মিডল অর্ডার সামলাবেন মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, সাকিব, লিটন দাস ও মেহেদি মিরাজ। প্রথম টেস্টে মুশফিক খেলেছিলেন ১৯১ রানের ইনিংস। দ্বিতীয় টেস্টে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দল যখন পুরোপুরি বিধ্বস্ত, তখনই হাল ধরেন লিটন ও মিরাজ। দুজনে সপ্তম উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১৬৫ রান। ৫০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারানোর পর সপ্তম উইকেট জুটিতে এত বড় রানের জুটি, যা টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম। লিটন খেলেছিলেন ১৩৮ রানের ইনিংস ও মিরাজ ৭৭ রানের। নতুন বলে ব্যাটিং সামলাবেন সাদমান ইসলাম, জাকির হাসান ও মাহামুদুল হাসান জয়। ইনজুরির জন্য জয় পাকিস্তান সিরিজে খেলতে পারেননি। তার জায়গায় জাকির হাসান খেলেন।
জাতীয় দল যখন পাকিস্তান সফর করছে, তখন বাংলাদেশ ‘এ’ দল দেশটিতে সফর করছিল। ইসলামাবাদে দুই দেশের ‘এ’ দলের ম্যাচে জাকের ১৭২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ২৮৬ বলের ইনিংসটিতে ছিল ১৭টি চার ও ৫টি ছক্কা। টি-২০ ক্রিকেটে মারাকাটারি ব্যাটিং করলেও দীর্ঘ পরিসরে ক্রিকেটে কিন্তু সফল জাকের। এখন পর্যন্ত ৪৯ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪১.৪৭ গড়ে ২৮৬২ রান করেন জাকের। সেঞ্চুরি ৪টি। সর্বোচ্চ পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে ১৭২। জাকের আলী এবারের সফরে ট্রাম্প কার্ড হতে পারেন। তবে তাকে নেওয়া হয়েছে মূলত তিন ম্যাচ টি-২০ সিরিজকে সামনে রেখে। ৬, ৯ ও ১২ অক্টোবর তিনটি টি-২০ ম্যাচ খেলবে দুই দেশ। জাকের ১৭ টি-২০ ম্যাচে রান করেছেন ১১৬.৬৬ স্ট্রাইক রেটে ২৪৫। একটি হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস রয়েছে। চলতি বছরের মার্চে সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৪ বলে ২০০ স্ট্রাইক রেটে ৬৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছিলেন জাকের। তাতে চার ছিল ৪টি ও ছক্কা ছিল ৬টি।
ভারত সফরে প্রথম টেস্ট চেন্নাইয়ে ১৯-২৩ সেপ্টেম্বর এবং দ্বিতীয় টেস্ট ২৭ সেপ্টেম্বর-১ অক্টোবর কানপুরে। ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১৩টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ড্র করেছে দুটি এবং ১১টি হেরেছে। টেস্ট সিরিজের পরে ৩টি টি-২০ ম্যাচ খেলবে দুই দেশ। প্রথম ম্যাচ ৬ অক্টোবর গোয়ালিয়েরে। দিল্লিতে দ্বিতীয় টি-২০ ৯ অক্টোবর এবং তৃতীয় টি-২০ হায়দরাবাদে ১২ অক্টোবর। এবার নিয়ে ভারতের মাঠেতে তৃতীয়বার টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সর্বশেষ টি-২০ ও ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ভারত সফর করেছিল ২০১৯ সালে। ২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছিল ভারতে।