ভারতের মাত্র একটা উইকেট বাকি। হাসান মাহমুদের প্রয়োজন ওই একটা উইকেটই। তিনি কি পারবেন! ভারতের ইনিংসে ৯২তম ওভারে বল করতে এসে দ্বিতীয় বলেই কাজটা করে ফেললেন হাসান মাহমুদ। বুমরাহকে স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে ভারতের ইনিংস শেষ করেন তিনি। পাশাপাশি টানা দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার বিরল কীর্তিও গড়েন। আগের টেস্টে পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৩ রানে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন হাসান মাহমুদ। এবার চেন্নাই টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকার করলেন ৮৩ রানে।
পেসারদের দাপটে ভারতকে ৩৭৬ রানে আটকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। গতকাল তাসকিন ৩টি উইকেট শিকার করেন। হাসান শিকার করেন ১ উইকেট। বোলারদের এমন সাফল্যের পর দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাটিং করে বড় একটা ইনিংস উপহার দিবে টাইগাররা, এমন আশাই করেছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু সেই আশার গুঁড়েবালি। ভারতীয় বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি টাইগার ব্যাটাররা। একের পর এক উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন তারা। ফিরেছেন সাজঘরে। যশপ্রীত বুমরাহ, আকাশ দীপ, মোহাম্মদ সিরাজ আর রবীন্দ্র জাদেজাদের বোলিং তোপের সামনে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্তরা। প্রথম ওভারে বুমরাহর বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাদমান ইসলাম (২ রান)। ইনিংসের নবম ওভারে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন আকাশ দীপ। পর পর দুই বলে শিকার করেন জাকির হাসান (৩ রান) ও মুমিনুল হকের (০) উইকেট। দুজনই বোল্ড! অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। মোহাম্মদ সিরাজের বলে ক্যাচ দেন বিরাট কোহলিকে। স্লিপে দাঁড়িয়ে সহজেই ক্যাচটা লুফে নেন কোহলি। বেশ বিপদেই পড়ে যায় বাংলাদেশ। এ বিপদ থেকে উদ্ধার করার দায়িত্ব ছিল মুশফিক-সাকিব-লিটনদের। তারা প্রত্যেকেই ব্যর্থ হন। বুমরাহর বলে রাহুলকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মুশফিকুর রহিম (৮ রান)। সাকিব ও লিটন কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু আত্মঘাতী এক শট খেলতে গিয়ে বিদায় নেন লিটন দাস। বল তুলে দেন আকাশে। লং লেগ থেকে ছুটে এসে বদলি ফিল্ডার ধ্রুব জুরেল ক্যাচটা লুফে নেন। কিছুক্ষণ পর সাকিবও এক আত্মঘাতী শটে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন। রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষককে। লিটনের আউটটা দেখেও সতর্ক হননি অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান। ফল যা হওয়ার তাই হলো। বাংলাদেশ তখন ৭ উইকেটে ৯২। শেষদিকে মেহেদি হাসান মিরাজ (২৭ রানে অপরাজিত), হাসান মাহমুদ (৯ রান), তাসকিন আহমেদ (১১ রান) এবং নাহিদ রানা (১১ রান) মিলে দলীয় সংগ্রহকে ১৪৯ রানে নিয়ে যান। কিন্তু বাংলাদেশ তখনো ফলোঅনের চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে (২২৭ রান)। ভারত অবশ্য নিজেরা চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করার ঝুঁকি না নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে পড়ল তৃতীয় ইনিংসে। বাংলাদেশ দিনের শেষদিকে ভারতের তিনটি উইকেট শিকার করে। একটি করে উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা ও মেহেদি হাসান মিরাজ। ভারতের সংগ্রহ ৮১ রান। ৩০৮ রানের লিড হয়ে গেছে রোহিত শর্মাদের।
বাংলাদেশ বল হাতে বেশ ভালোই করেছে। প্রথম দিনে ৬টি ও দ্বিতীয় দিনে ভারতের ৭টি উইকেট শিকার করেছেন। কিন্তু গড়বড় হয়ে গেল ব্যাটিংয়েই। চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে স্পিনারদের দাপট দেখা যাবে বলে মনে করেছিলেন অনেকে। তবে সেখানে গত দুই দিনে পেসারদেরই দাপট দেখা গেল। বাংলাদেশের পেসাররা দুই দিনে শিকার করেছেন ১১ উইকেট। বিপরীতে স্পিনাররা শিকার করেছে কেবল ২ উইকেট। ভারতীয় পেসারদের শিকার ৮ উইকেট।
ভারতীয় বোলার বুমরাহ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক পাড়ি দিয়েছেন গতকাল। ১৯৬ ম্যাচে ২২৭ ইনিংস খেলে এই মাইলফলকে পৌঁছালেন তিনি। ভারতীয় দশম বোলার ও ষষ্ঠ পেসার হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন বুমরাহ। তার আগে কপিল দেব (৬৮৭), জহির খান (৫৯৭), জাভাগাল শ্রীনাথ (৫৫১), মোহাম্মদ শামি (৪৪১) এবং ইশান্ত শর্মা (৪৩৪) আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক পাড়ি দেন।
দ্বিতীয় দিন শেষে ম্যাচ ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আজ তৃতীয় দিনে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে কত দূর যায় সেটাই দেখার বিষয়। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসেও যদি ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দেয় তা হলে ম্যাচ হয়তো চতুর্থ দিনেই শেষ হয়ে যেতে পারে। জয় নয়, নাজমুলদের এখন মূল টার্গেট যেভাবেই হোক প্রথম টেস্ট ড্র করা। ভারতের ব্যাটিং ও বোলিং লাইন যে ধরনের শক্তিশালী তাতে বাংলাদেশের টেস্ট ধরে রাখা মুশকিল হবে। তার পরেও ক্রিকেটে নিশ্চিত বলে কোনো কথা নেই।