নতুন দিনের নতুন ভোর। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই কেঁপে ওঠে ঢাকা শহর। তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্ট ৩১ বার তোপধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানায় বিজয় দিবসকে। প্রায় একই সময়ে ঢাকা থেকে ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরে কিংসটাউনে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে নামেন টাইগাররা। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কী অপেক্ষা করছে জানা ছিল না লিটন দাসদের। তবে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা ছিল। বিজয়ের দিনে আরও একটি জয়ের আনন্দে পুরো দেশকে ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তারা। জিতলেন লিটন দাসরা। হাসল পুরো বাংলাদেশ। বিজয় দিবসে আরও একটি জয়োৎসবে মেতে উঠল সবাই।
গত কয়েক মাসে অনেক কিছুই বদলে গেছে বাংলাদেশে। সরকার বদলেছে। বদল হয়েছে মানুষের জীবনধারণের পদ্ধতিও। গতকাল সকাল হতেই তার প্রমাণ মিলল আরও একবার। গত ১৭ বছরের ধারাবাহিক জীবনের পুরোপুরি ভিন্ন চিত্র দেখা গেল গতকাল। বিজয়ের উৎসবেও ছিল ভিন্নতা। সাধারণ মানুষের মুখে হাসি। একে-অপরকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি ছিল নানা আয়োজন। তবে স্বৈরাচারী আমলের দৃশ্যপট ছিল না কোথাও। নতুন এই পালাবদলের মধ্যে ক্রিকেটেও শোনা গেল দিন বদলের গান।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে আশির দশক থেকে। প্রায় চার দশকের ক্রিকেট যাত্রায় আগে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে কখনোই জয়ের দেখা মেলেনি ক্রিকেটে। অবশ্য এই দিনে তেমন একটা খেলাও হয়নি। ২০০২ সালের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে শুরু করেছিল টাইগাররা। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৭ উইকেটে। বিজয়ের মাসে অবশ্য অনেক ম্যাচই খেলেছে। কিন্তু একেবারে বিজয়ের দিনে! এই প্রথম। অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের হিসাবে তারিখটা ১৫ ডিসেম্বর। ম্যাচটা শেষ হতে হতে ১৬ ডিসেম্বর হয়ে যায়। হাসান মাহমুদ আলজারি যোসেফের উইকেটটা শিকার করে বাংলাদেশকে জয়ের আনন্দ এনে দেন। সে সময় ১৬ ডিসেম্বরে প্রবেশ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজও। বিজয় দিবসে জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে বাংলাদেশ।
ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর টি-২০ সিরিজ নিয়েও ছিল অনিশ্চয়তা। বিশেষ করে অতীত ইতিহাস ছিল পুরোপুরিই বিপক্ষে। এর আগে চারটা ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। চারবারই সঙ্গী হয় পরাজয়। পঞ্চম লড়াইয়ে জয়ের দেখা মিলবে! সব শঙ্কা উড়িয়ে দিলেন টাইগাররা। ব্যাট হাতে ৬ উইকেটে ১৪৭ রান। এর পর বল হাতে বাকি কাজটা শেষ করেন বোলাররা। বিশেষ করে শেষ ওভারের কথা বলতেই হয়। শেষ ওভারে ১০ রান প্রয়োজন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। হাতে ছিল দুই উইকেট। বল হাতে তুলে নেন হাসান মাহমুদ। দুটো উইকেট শিকার করেন তিনি এই ওভারে। রান দেন কেবল দুটি। চেমসফোর্ডে গত বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এমনই এক ম্যাচ জিতিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। তার ওপর সতীর্থদের আস্থা ছিল এবারও। ম্যাচের পর শেখ মেহেদি হাসান বলেন, ‘হাসান আবারও প্রমাণ করেছে। আমার মনে আছে, আয়ারল্যান্ড সিরিজে হাসান ডেথ ওভারে একটি ম্যাচ জিতিয়েছিল। ওই অনুভূতি আমার চলে আসছিল যে হাসান পারবে।’ ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন শেখ মেহেদি হাসান। মূলত বাংলাদেশের জয়যাত্রা শুরু করে দিয়েছিলেন তিনিই। বল হাতে চার ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে চার উইকেট শিকার করেন শেখ মেহেদি। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করলেন তিনি। এর আগে ১৯ রানে ৩ উইকেট শিকারই ছিল তার সেরা বোলিং (২০২১ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে)। গতকাল ব্যাটে ব্যর্থ হলেও অধিনায়ক লিটন দাস উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে রেকর্ড গড়েছেন। ৫টি ডিসমিসাল করেছেন তিনি। এর আগে ৩টি ডিসমিসালের রেকর্ড ছিল মুশফিক, সোহান ও লিটনের। এ ছাড়া রেকর্ড গড়েছেন তাসকিন আহমেদ। তিনি বাংলাদেশি বোলার হিসেবে এক বছরে (২০২৪ সালে) সর্বোচ্চ ৫৮ উইকেট শিকার করলেন। ২০১৮ সালে মুস্তাফিজ ৫৭ উইকেট নিয়েছিলেন।