গোল হলো। তর্কবিতর্ক হলো। বাক্যবাণে দুই দলের সমর্থকরা যুদ্ধে জড়ালেন। মাঠে ফুটবলাররা একে-অপরের দিকে তেড়েফুঁড়ে এগিয়ে গেলেন। যুদ্ধংদেহী সবাই। এরই মধ্যে ঝড়বৃষ্টি। ঝোড়ো বাতাস উড়িয়ে নিল সাইডবেঞ্চ। প্যান্ডেলের কাপড় ছিঁড়ে গেল বাতাসের তোড়ে। ফুটবলারদের জিনিসপত্র বহন করা লাগেজগুলো ভিজে একাকার। ক্যামেরাম্যানরা ক্যামেরা বাঁচাতে কাকভেজা হলেন। বৃষ্টিতে জমে ওঠা পানিতে জলকেলিতে মেতে উঠল দর্শক। ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে বসুন্ধরা গ্রুপ ফেডারেশন কাপ ফাইনাল বেশ রোমাঞ্চ ছড়ালেও শেষটা হলো হতাশার। খেলতে খেলতে দিনের আলো ফুরিয়ে যাওয়ায় খেলাটাই আর শেষ হলো না। বাকি থাকল আরও একটা দিনের জন্য। ১০৫ মিনিটের খেলা শেষে বসুন্ধরা-আবাহনী ১-১ সমতায় থেকে মাঠ ছাড়ল।
বাংলাদেশের ফুটবলে ম্যাচ থেমে যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। ১৯৮৪ সালের ফেডারেশন কাপে মোহামেডান স্পোর্টিং এবং আজাদের সেমিফাইনাল খেলা দুবার থামিয়ে দিতে হয়েছিল। সে বছরই ফেডারেশন কাপের ফাইনালে মারামারির কারণে আবাহনী-মোহামেডান ফাইনাল থামাতে বাধ্য হন রেফারি। সে বছর ফাইনালই আর হয়নি। ফুটবলে এমন ঘটনা দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে বাড়তি উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়। গতকালও ছড়াল। রেফারি সাইমন অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের একটা অর্ধ্ব শেষ করতে পারলেও বাকিটা শেষ করতে পারেননি আলো স্বল্পতায়। তবে সমর্থক এবং আবাহনীর কোচিং স্টাফ বারবারই খেলার দাবি তুলছিলেন। রেফারিরা বেশ কিছুক্ষণ বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে চলে যান। মাইকে ঘোষণা করা হয়, আলো স্বল্পতার কারণে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হলো। পরের দিনক্ষণ সময়মতো জানানো হবে। এরপর আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রূপু মিডিয়াকে বলেন, আমরা খেলতে চেয়েছিলাম। তবে খেলতে দেওয়া হলো না।
ম্যাচ কমিশনার তৈয়ব বলেন, রেফারির হাতেই সর্বোচ্চ ক্ষমতা। তিনি যদি মনে করেন খেলা চালানো সম্ভব নয়। তবে তা করতে পারেন। তিনি তাই করেছেন।
এরপর কী অপেক্ষা করছে? আয়োজকরা জানিয়েছেন, বাকি ১৫ মিনিট ম্যাচ আবার হবে। এখানেও ফল নিষ্পত্তি না হলে ফাইনাল গড়াবে টাইব্রেকারে। তবে বাফুফের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে ম্যাচটি নিয়ে পরর্তীতে সিদ্ধান্ত নিবে বাফুফের প্রফেশনাল লিগ ফুটবল ম্যানেজমেন্ট কমিটি। এটা পরের ব্যাপার। তবে গতকাল খেলা স্থগিত হওয়ার আগেও রোমাঞ্চ কম ছিল না। দীর্ঘদিন পর এতটা উত্তেজনাপূর্ণ কোনো ম্যাচ দেখল দর্শকরা। ম্যাচের শুরুতেই বসুন্ধরা কিংস গোল করে। ছয় মিনিটে সাদ উদ্দিনের ফ্রি কিকে বল পেয়ে ডি-বক্সের ভিতর থেকে হেডে গোল করেন হুয়ান লেসকানো। আর্জেন্টিনার এই স্ট্রাইকার প্রথম গোল করলেন কিংসের জার্সিতে। তিনি গতকাল খেলেছেনও দারুণ। তবে ব্যবধান বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি বসুন্ধরা কিংস। ১৫ মিনিটে বাম দিক থেকে এমেকার আক্রমণ। বসুন্ধরা কিংসের কয়েকজনকে পাশ কাটিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে কাটব্যাক করেন তিনি। ছোটো বক্সের ভিতর থেকে প্লেসিং শটে গোল করেন ইব্রাহিম। সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে গোল করে দুই হাত উঁচিয়ে অনেকটা যেন ক্ষমাই চাইলেন তিনি! সমতায় ফেরে আবাহনী। এরপর অবশ্য বসুন্ধরা কিংসই ভালো খেলেছে। অন্তত চারটা গোলের দারুণ সুযোগ তৈরি করেছে তারা। তবে মিতুল মারমা আবাহনীর গোলপোস্টের সামনে ছিলেন অতন্দ্র প্রহরী। বৃষ্টির পরও বসুন্ধরা ভালোই খেলেছে। তবে অতিরিক্ত সময়ের খেলায় অফ দ্য বল ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন কিংসের ফয়সাল ফাহিম।